ভোটারদের মাঝে সিপিএম প্রার্থী শান্তনু ঝা। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
—জিতলে কেষ্টনগরে আসবেন তো, নাকি ভুলে যাবেন?
জমাট ভিড়ের মধ্যে থেকে ছিটকে এলো প্রশ্নটা। তারপরেই চাপা ফিসফাস, “মুর্শিদ চাচা প্রশ্নটা কিন্তু মোক্ষম করেছে।” কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী শান্তনু ঝা জবাবও দিলেন হাসি মুখেই, “নদিয়া জেলা আমার রাজনীতির ক্ষেত্র। নির্বাচনে জিতলেও আমি আপনাদের সঙ্গে থাকব। না জিতলেও থাকব। এখানকার কৃষকদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের।”
নদিয়ায় লোকসভা নির্বাচনের আগে ভোটারদের ‘মন বুঝতে’ এভাবেই ‘মুখোমুখি’ সভার আয়োজন করছে সিপিএম ও এসইউসিআই। সভায় কিংবা মঞ্চে একটানা বক্তৃতা নয়, ভোটদাতাদের সমস্যা মুখোমুখি শুনে সমাধানের আশ্বাসও দিচ্ছেন প্রার্থীরা। ইতিমধ্যে কৃষ্ণনগরের সিপিএম প্রার্থী শান্তনু ঝা বেথুয়াডহরি, কালীরহাট বাজারে মুখোমুখি বসেছেন। সামনে আরও কয়েকটি জায়গায় বসার কর্মসূচি রয়েছে। ওই একই কেন্দ্রের এসইউসিআই প্রার্থী কমল দত্তও চাপড়া, কৃষ্ণনগরে ভোটারদের মুখোমুখি বসেছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ধরণের সভায় ভিড়ও হচ্ছে ভালই। সম্প্রতি কৃষ্ণনগরের কাছে কালীরহাট বাজারে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে মুখোমুখি প্রার্থীকে প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়ে প্রচুর লোক জড়ো হয়ে যান। ভিড়ের ভিতর থেকে ছুটে আসা একটার পর একটা প্রশ্নবাণ সামলালেন পোড় খাওয়া রাজনীতিক শান্তনুবাবু। প্রশ্নও সব বিচিত্র রকমের। কেউ জানতে চাইছেন জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী না করার ‘ঐতিবাসিক ভুল’ নিয়ে তো কেউ চাইছেন রাজ্যে গত ৩৪ বছরের কাজের খতিয়ান। এ বার লোকসভা ভোটে কেন্দ্রে তৃতীয় বিকল্পের বাস্তবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে কেউ কেউ।
এসইউসিআই প্রার্থী কমল দত্ত। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
জেনে-বুঝে জনতার প্রশ্নবানের মুখে পড়া কেন? কর্মসূচির আয়োজক সিপিএম-এর জেলা কমিটির সদস্য তথা ডিওয়াইএফআই-এর জেলা সম্পাদক সুমিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা চাই মানুষ সব কিছু জেনে বুঝেই আমাদের ভোট দিক। এতদিন মানুষ দূরে দাঁড়িয়ে প্রার্থীদের বক্তব্য শুনে বাড়ি চলে যেত। তাদের মনে জমা প্রশ্নের উত্তর পেত না। এই দূরত্বটা মোছার জন্যই মুখোমুখি বসার আয়োজন।”
আহামরি কিছু আয়োজন করারও দরকার পড়ে না। একটা জায়গা দেখে প্রার্থীর জন্য চেয়ার-টেবিল পাতা হয়। লোকজনের জন্যও কিছু চেয়ার থাকে সামনে। আর লাগে দু’টো মাইক্রোফেন। তার মধ্যে দর্শকদেরটা ‘কডলেস’ হলে ভাল। স্থানীয় কর্মীরা দিন কয়েক আগে থেকে মাইকে প্রচার করে জানান এলাকাবাসীকে। বাড়ি-বাড়ি চিঠি দিয়েও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের চ্যালেঞ্জির মোড়, চাপড়া, বেথুয়াডহরি, বড় আন্দুলিয়া, তেহট্ট বাসস্ট্যান্ড, নজিরপুর বাসস্ট্যান্ড-সহ আরও নানা জায়গায় মুখোমুখি বসার পরিকল্পনা রয়েছে সিপিএমের।
তবে নতুন এই প্রচার-কৌশলে খুশি প্রার্থীরাও। এসইউসিআই প্রার্থী কমল দত্ত বলছেন, “এই ভিড়ের ভিতর থেকে এমন কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে যেগুলো সত্যিই ভাবার মতো। এরকম সভাতে যেটা হচ্ছে সেটা হল সাধারণ মানুষ কী ভাবছেন সেটা সরাসরি জানা যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে তাঁদের মনের কথাও। সাধারণত বাড়ি বাড়ি প্রচার বা জনসভাতে এমনটা হয় না।”
আর ভোটের ময়দানে দীর্ঘ দিনের পোড় খাওয়া সৈনিক শান্তনু ঝা-র কথায়, “ভোটারদের সুযোগ-সুবিধা জানতে পেরে ভাল লাগছে। শুধু মিছিল করে গেলে বা মঞ্চে বসে থাকলে কখনওই এত ভাল ভাবে আমার কথা জনতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ পেতাম না। সবচেয়ে বড় কথা, যুবসমাজের কাছে ভাল সাড়া মিলছে।”
“মিললেই ভাল। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, ফেসবুকের যুগে প্রার্থীদের সঙ্গে যদি ‘ফেস টু ফেস’ কথা বলার সুযোগ মেলে, মন্দ কী?” হাসতে হাসতেই বললেন কৃষ্ণনগরের এক কলেজ পড়ুয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy