যানজট তো রয়েছেই। গোদের উপর বিষ ফোড়ার মতো হাজির হয়েছে টুকটুক। বহরমপুর স্টেশন থেকে বাসস্ট্যান্ড, প্রতিটি কর্মব্যস্ত মোড়ে যাত্রী তোলার জন্য টুকটুকের লম্বা লাইনের সারি এবং ট্র্যাফিক আইনের তোয়াক্কা না করে শহর দাপিয়ে বেড়ানোর ফলে বাড়ছে শহরের যানজট। শহর ছাড়িয়ে রাজ্য ও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে ওই গাড়ি। বহরমপুরের মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস বলেন, “বহরমপুর শহরের যানজট সমস্যা দীর্ঘ দিনের। প্রতি দিন শহরে লোকসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিভিন্ন যানবাহনের সংখ্যাও। এই অবস্থায় কারণ খুঁজে যানজট রুখতে পারাটা খুব জরুরী।” তিনি আরও বলেন, “যানজটের সমাধান বের করতে পুরপ্রধান, বহরমপুর থানার আইসি, ট্র্যাফিক পুলিশের ডেপুটি পুলিশ সুপার ও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক নিয়ে আলোচনায় বসা করা হবে।”
বহরমপুর শহরের যানজট আজকের নয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসন, পুলিশ ও পুরসভা বহরমপুরকে যানজট মুক্ত করতে ব্যর্থ। প্রতিদিনই পথে নেমে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে শহরের বাসিন্দাদের। তার উপর টুকটুক এসে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তার কথায়, বহরমপুর পুর-কর্তৃপক্ষ পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই একতরফা ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই গাড়িকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সেই সুযোগে টুকটুকও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শহরের পথে। রাজ্য সড়ক ধরে এক দিকে চুনাখালি, অন্য দিকে, রাধারঘাট পর্যন্ত এবং ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে ভাকুড়ি ছাড়িয়ে সারগাছি পর্যন্ত যাতায়াত করছে ওই টুকুটুক গাড়ি। জনবহুল ও ব্যস্ততম ওই বিপজ্জনক রাস্তায় যাত্রী-সহ ‘পলকা’ ওই গাড়ি চলাচল নিয়েও উদ্বিগ্ন বহরমপুরের নাগরিক সমাজ। নাগরিক সমিতির সহ-সভাপতি বিষাণ গুপ্ত বলেন, “বহরমপুর শহরে নতুন উপদ্রব ব্যাটারি চালিত ওই টুকটুক। গত কয়েক বছরে পুরসভা এলাকায় নতুন কোনও রাস্তা তৈরি হয়নি। যে সমস্ত রাস্তা রয়েছে, বেদখল হয়ে যাওয়ায় তাও সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফুটপাথ বলে কিছু নেই। সেই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণহীন রিকশার দাপট, ট্র্যাফিকের নিয়মের তোয়াক্কা না করা বেপরোয়া মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য, চার চাকা গাড়িশহরে যানজট বাড়িয়েছে। এই অবস্থায় টুকটুকের অনুমোদন দিয়ে পুর-কর্তৃপক্ষ যানজটের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছে।”
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে ওই বৈঠকে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শহরের যানজট রুখতে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে চুঁয়াপুরের দিক থেকে শহরের ভেতরে পণ্যবাহী লরি বা বাস চলাচল আটকানো থেকে পুর-এলাকার বেশ কিছু রাস্তায় ওয়ান-ওয়ে চালু করা এবং টুকটুক গাড়ি যাতায়াতে নিয়ন্ত্রণ করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। সেই সঙ্গে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের হাল ফেরানোর জন্যও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের আধিকারিককে বলা হবে। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকরী হবে, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন বাসিন্দারা। তাঁদের কথায়, “শহরের যানজট নিয়ে এর আগেও বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উল্টে পরিস্থিতি দিনকে দিনকে ভয়াবহ হয়েছে। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “যানজট কমাতে সবার আগে প্রয়োজন শহরের ট্র্যাফিক পুলিশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো।”
এই মুহূর্তে বহরমপুর ট্র্যাফিক পুলিশের হালও বলার মতো নয়। বহরমপুরের ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছেএক জন ডেপুটি পুলিশ সুপার, ভারপ্রাপ্ত এক জন সাব-ইন্সপেক্টর, ২ জন এএসআই, ১৩ জন কনস্টেবল এবং স্বেচ্ছাশ্রমদানকারী হাতে গোনা ট্র্যাফিক ওয়ার্ডেন। ইন্সপেক্টর পদে কেউ নেই। কিন্তু সরকারি অনুমোদনে উল্লেখ রয়েছেএক জন ডেপুটি পুলিশ সুপার, এক জন ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর ১৪ জন, এএসআই ১৪ জন, ৬৬ জন কনস্টেবল থাকতে হবে। তিন জন গাড়ির চালকের থাকার কথা, কিন্তু এক জনও নেই। সব মিলিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় ট্র্যাফিক পুলিশের সংখ্যা কম থাকায় বহরমপুরের মত ব্যস্ততম ও জনবহুল শহরের ট্র্যাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ। প্রতি দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজটে থমকে থাকছে বহরমপুরের নাগরিক জীবন। ডেপুটি পুলিশ সুপার (ট্র্যাফিক) অশেষকুমার ঝাঁ অবশ্য বলেন, “ফুটপাথ বলে কিছু নেই, রাস্তার ধারেই ফল সিন্ডিকেট, বালি সিন্ডিকেট, পাথর সিন্ডিকেট থেকে বিভিন্ন লরি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠা, ট্র্যাফিক না মেনে বিভিন্ন যানবহান দাপিয়ে বেড়ানোর সঙ্গে শহরের পথে মানুষ, বিভিন্ন গবাদি পশু, রিকশা, ভ্যান, যন্ত্রচালিত ভ্যানো গাড়ি, পণ্যবাহী লরি ও বাসের বেপরোয়া ভাবে চলাচল করাল ফলে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।”
পঞ্চাননতলা রেল গেটের দু’পারে তিনটে লরি সিন্ডিকেট, কাশিমবাজার যাওয়ার এবং বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে কৃষ্ণনাথ রোড বরাবর পুরনো কান্দি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তা দখল করে সারি দিয়ে লরি, বাস ও ট্রান্সপোর্ট ব্যসায়ীদের বিভিন্ন ছোট গাড়ি দাঁড় করানোর ফলে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলেও ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর। সেই সঙ্গে ভাকুড়ি থেকে শুরু হয়ে উত্তরপাড়া মোড় পর্যন্ত পর পর গাড়ি সারানোর গ্যারেজ, অস্থায়ী দোকান ঘর গড়ে ওঠায় রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে পড়ায় বিভিন্ন যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে যাতায়াত করতে ব্যর্থ!
অশেষবাবু বলেন, “যাত্রীদের একাংশেরও সচেতনতার অভাব রয়েছে। রাস্তার যে কোনও জায়গায় দাঁড়িয়ে হাত তুলে বাস-ট্রেকার-অটো-টুকটুক থামিয়ে চড়ে পড়ার প্রবণতা রয়েছে তাঁদের মধ্যে। এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।” তাঁর অভিযোগ, “এখন পর্যন্ত যার কোনও আইনগত বৈধতা নেই সেই টুকটুক কর্মব্যস্ত মোড়ে যাত্রী তোলার জন্য দাঁড়িয়ে থাকছে। ফলে যানজটের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। টুকটুক চালকরা ট্র্যাফিক আইনের নিয়ম না জানায় যানজটে ভুগতে হচ্ছে নাগরিকদের।”
এ দিকে, বহরমপুর শহরের বিকল্প রাস্তা হিসেবে গত কয়েক বছরে কারবেলা রোড ও বহরমপুর স্টেশন থেকে বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তা, সারগাছি থেকে মানকরা রোড হয়ে ভাগীরথীর পাড় বরাবর তৃতীয় সড়ক নির্মাণ হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। যানজট এড়াতে চুঁয়াপুর হয়ে শহরের মধ্যে বাস-লরি ঢুকে পড়ায় যানজট আরও বাড়ছে। অন্য দিকে, গির্জার মোড় হয়ে বাস-লরি ঢুকে পড়ায় রানিবাগান ও বাসস্ট্যান্ডের মুখে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সঙ্গে দিনের যে কোনও সময়ে পণ্যবাহী লরি শহরের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত শুরু করায় পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
বহরমপুর শহরে যানজট হওয়ার জন্য প্রশাসনকেই দায়ি করেন পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য। তিনি বলেন, “আলোচনার মাধ্যমে যানজট সমস্যার সামধান হতে পারে। কিন্তু আলোচনার পথে হাঁটছে না প্রশাসন।”
কিন্তু কোনও রকম আলোচনা ছাড়াই শহরের পথে টুকটুক গাড়ি চলাচলের অনুমোদন পুরসভা কেন দিল ট্র্যাফিক পুলিশ প্রশাসনের সেই প্রশ্নের উত্তরে টুকটুক গাড়ির অনুমোদনের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখছেন পুরপ্রধান। তিনি জানান, “বেকার যুবকদের অর্থ সংস্থানের স্বার্থে টুকটুক গাড়ির রেজিষ্ট্রেশন ও লাইসেন্স দিতে বাধ্য হয়েছি।”
জল ট্যাঙ্কে হামলা। জঙ্গিপুর পুরসভার জল সরবরাহ প্রকল্প চত্বরে শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ চড়াও হল ৫ দুষ্কৃতী। নিরাপত্তা কর্মী গোপাল শেখকে মারধর শুরু করে ৩ জন মিলে। বাকি ২ জন সিঁড়ি বেয়ে জল ট্যাঙ্কের উপর উঠে যায়। নিরাপত্তা কর্মী চিত্কার শুরু করলে আশপাশ থেকে লোকজন ছুটে এলে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। জখম ওই নিরাপত্তা কর্মীকে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ও পুরসভার লোকজন সেখানে ছুটে আসেন। কিন্তু দুষ্কৃতীরা তত ক্ষণে গা ঢাকা দিয়েছে। জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম বলেন, “দুষ্কৃতীরা কেন সেখানে হামলা করেছিল তা স্পষ্ট নয়। তবু সতর্কতা হিসেবে সন্ধ্যের পর থেকে ট্যাঙ্কের জল পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের পর সে জলের সবটাই ফেলে দেওয়া হয়েছে। ঘটনায় শনিবার জঙ্গিপুর শহরে জল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে। তবে ভয়ের কিছু নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy