আদালতের নির্দেশে আপাতত তার ঠিকানা হওয়ার কথা ‘শ্রীঘরে’। কিন্তু সশীরে হাজির হয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে তো খোদ অভিযুক্তই! সে আবার হয় নাকি? হওয়ার কথা নয়। কিন্তু মুর্শিদাবাদের ডাঙাপাড়ার রফিকুল শেকের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।
ঘটনাটি জানাজানি হতেই টনক নড়ে পুলিশের। খোঁজ করতেই মালুম হয়, রফিকুলের ঠিকানা গারদের ওপারে হওয়ার কথা। তবে নিজের বাড়িতে সে রয়েছে বহাল তবিয়তেই। আর দু’সপ্তাহ ধরে তার হয়ে জেলের ঘানি টানছে সেরিফুল। কান্দি মহকুমা আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, গত জানুয়ারি মাসে জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে বোমাবাজির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল কান্দি থানায়। রফিকুল-সহ চার জনের বিরুদ্ধে কান্দি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন নূরতাজ আলি। তবে থানায় তার নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে শুনেই, হাজতবাস থেকে বাঁচতে মুর্শিদাবাদ জেলা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেছিল সে। আদালত অবশ্য তার জামিন না-মঞ্জুর করে দেয়।
জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ূন কবীর বলেন, “এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনও খবর আসেনি। তবে বিষয়টা অবশ্যই খোঁজ নিয়ে দেখব।”
কিন্তু মজার ব্যাপার, রফিকুল জেল হাজতে নেই। তার হয়ে এত দিন জেল হাজতে ছিল সেরিফুল নামে অন্য এক যুবক। সোমবার রফিকুল অবশ্য নিজেই আদালতে আত্মসমর্পণ করে। আদালত এ দিনও ফের তার ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত ৭ জুলাই বহরমপুর থানা এলাকার গোবিন্দপুর গ্রামের সেরিফুল কান্দি আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করে জানায়, সেই রফিকুল। বিচারক তাকে ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন। এর দিন কয়েক পরেই অভিযোগকারী নুরতাজ আলির বাড়ি গিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয় রফিকুল শেখ।
কোথাও একটা ‘গোলমাল’ হয়েছে অনুমান করে শুক্রবার পের মহকুমা আদালতে গিয়ে ঘটনাটি জানান নূর আলি। আর তারপরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। খোঁজ নিতেই বেরিয়ে পড়ে নাম ভাঁনিয়ে রফিকুলের হয়ে জেল কাটছেন সেরিফুল। এ দিন ওই দু’জনকেই কান্দি আদালতে তোলা হয়। কান্দি মহকুমা আদালতের বিচারক সব শুনে রফিকুল শেখকে ১৪দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। সেরিফুলের কী সাজা হবে তা আজ, মঙ্গলবার ঘোষণা করবেন তিনি। এ দিন আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে রফিকুল বলে, “নিজের জমি দখল হয়ে যাচ্ছিল দেখে বচসায় জনিয়ে পড়েছিলাম।” তা বলে হামলায় অভিযুক্ত রফিকুল সরিফুলকে ‘জেল খাটতে’ পাঠালেন কেন? উত্তর মেলেনি। তা হলে কি এর পিছনে কিছু ‘দেনা-পাওনা’র প্রশ্ন জনিয়ে রয়েছে? সরিফুলও এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন।
অভিযাগতারী নূর আলি অবশ্য এর পিছনে পুলিশের ‘অভিসন্ধি’র প্রশনও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, “এত দিন রফিকুল কোথায় আছে তার খোঁজই পাচ্ছিল না পুলিশ। আধালতের নির্দেশ মেনে শেষ পর্যন্ত তার জেল হাজত হলেও জেলে গেল অন্য জন। পুলিশ কিছুই জানে না বলে মনে হয় না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy