Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

হাজার টুকটুকে বাড়ছে যানজট

আচমকাই শ’য়ে শ’য়ে টুকটুক ঢুকে পড়েছে শহরটায়। হাজারেরও বেশি। গতি বেড়েছে ঠিক। কিন্তু উপরি পাওনা যানজটের সমস্যা মেটাবে কে? মুর্শিদাবাদের সদর শহর বহরমপুরে টুকটুক নিয়ে বিতর্ক মাথাচাড়া দিচ্ছে ক্রমশ।

নিয়ন্ত্রণহীন টুকুটুক চলাচলে বহরমপুরে যানজট। —নিজস্ব চিত্র।

নিয়ন্ত্রণহীন টুকুটুক চলাচলে বহরমপুরে যানজট। —নিজস্ব চিত্র।

শুভাশিস সৈয়দ
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৪ ০২:১৬
Share: Save:

আচমকাই শ’য়ে শ’য়ে টুকটুক ঢুকে পড়েছে শহরটায়। হাজারেরও বেশি। গতি বেড়েছে ঠিক। কিন্তু উপরি পাওনা যানজটের সমস্যা মেটাবে কে? মুর্শিদাবাদের সদর শহর বহরমপুরে টুকটুক নিয়ে বিতর্ক মাথাচাড়া দিচ্ছে ক্রমশ।

এমনিতে ব্যাটারি চালিত যাত্রিবাহী গাড়ি টোটো বা টুকটুকের লাইসেন্স দেওয়া নিয়ে প্রভূত জলঘোলা হচ্ছে রাজ্য-দেশ জুড়ে। গত সোমবারই একটি মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বলেছে, টোটো নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় পুরসভা বা পঞ্চায়েতের সঙ্গে কথা বলতে হবে সরকারকে। মুর্শিদাবাদের জেলাসদর বহরমপুর পুরসভা তার অনেক আগেই টুকটুককে লাইসেন্স দিয়ে বসে আছে। বস্তুত, এই রাজ্যে যে কয়েকটি শহরে টুকটুক চলছে, তার মধ্যে বহরমপুর অন্যতম। অভিযোগ, পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বহরমপুর পুরসভা একতরফা ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই গাড়ির স্বীকৃতি দিয়েছে। শহর পথে তো বটেই, এমনকী শহর ছাড়িয়ে বিষ্ণুপুর-মধুপুরের রাস্তা ধরে লাগোয়া এলাকাতেও ছুটে বেড়াচ্ছে ওই গাড়ি। মুর্শিদাবাদের ডেপুটি পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) অশেষ ঝাঁ বলেন, “পরিকল্পনাবিহীন ভাবে শহরটা বেড়ে উঠেছে। ফলে সঙ্কীর্ণ রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। তার মধ্যে টুকটুক গাড়ি নতুন সমস্যা তৈরি করেছে। কোনও রকম আলোচনা ছাড়াই শহরের পথে অবৈধ ওই গাড়ি চলাচলের অনুমোদন দিয়ে পুরসভা ঠিক কাজ করেনি। অন্তত ট্রাফিক পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল।”

টুকটুকের অনুমোদনের বিষয়টি ‘মানবিকতার’ সঙ্গে দেখছেন বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য। তিনি বলেন, “বেকার যুবকদের অর্থ সংস্থানের স্বার্থে টুকটুক গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স দিতে বাধ্য হয়েছি।” লাইসেন্স দেওয়ায় ট্রাফিক পুলিশের মত ছিল বলেই তাঁর দাবি।

বহরমপুর পুরসভায় গত কয়েক বছরে নতুন কোনও রাস্তা তৈরি হয়নি। যে সমস্ত রাস্তা রয়েছে, বেদখল হয়ে যাওয়ায় তা-ও সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়েছে। কৃষ্ণনাথ রোডে, রেজাউল করিম সরণি রোডে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার জায়গা না রেখে পরিকল্পনাহীন ভাবে দোকান ঘর তৈরি করেছে পুরসভা। ক্রেতারা ওই দোকানগুলির সামনে এলোমেলো ভাবে সাইকেল-মোটর বাইক-চার চাকা দাঁড় করিয়ে রাখার ফলে যান চলাচলে ভয়ঙ্কর অসুবিধা হয়। ফুটপাথ বলে কিছু নেই। সেই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণহীন রিকশার দাপট, ট্রাফিকের নিয়মের তোয়াক্কা না করা বেপরোয়া মোটর বাইকের দৌরাত্ম্য, চার চাকা গাড়িব্যাপক যানজটে ভুগছে শহর। এই অবস্থায় পুর-কর্তৃপক্ষ টুকটুকের অনুমোদন দিয়ে যানজটের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছে বলে ক্ষোভ উগরে দেন নাগরিক সমিতির সহ-সভাপতি বিষাণ গুপ্ত। শহরে এখন তেরোশোর মতো টুকটুক চলে। এর মধ্যে অনুমোদন পেয়েছে প্রায় আটশো। রিকশা প্রধান শহরে টুকটুকের উপকারিতা অস্বীকার করছেন না শহরবাসী। এক লহমায় শহরের গতি যেন বেড়ে গিয়েছে হঠাৎ। রিকশা চালকদের একচেটিয়া জুলুমবাজিও কমেছে। কিন্তু টুকটুকের নির্দিষ্ট কোনও রুট এবং স্ট্যান্ড না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। জনবহুল মোড়গুলিতে টুকটুক দাঁড়িয়ে যানজট তৈরি করছে। আগামী দিন টুকটুকের রুট এবং ভাড়ার তালিকা প্রকাশ্যে টাঙিয়ে দেওয়া হবে বলে পুর-কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু জায়গার অভাবে শহরের মধ্যে টুকটুকের স্ট্যান্ড করা যাচ্ছে না।

ব্যাটারি চালিত টুকটুক সমিতির তরফে দেবরাজ ঘোষাল বলেন, “এদিক-ওদিক গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে থাকায় সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আমরাই বা কী করব। পুরসভাকে বলে কাশিমবাজার স্টেশন ও বহরমপুর স্টেশনে স্ট্যান্ড করেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE