আবরণ: শিলিগুড়ি ছেয়েছে কুয়াশায়। ছবি: অমিত মোহান্ত
দুপুর অবধি ঝকঝকে থাকলেও সূর্য ডুবলেই হাড় হিম করা ঠান্ডায় উত্তরের পাহাড়-সমতলের কাবু জনজীবন। রাত যত বাড়ছে, ততই গাঢ় হচ্ছে কুয়াশা। মাঝরাত থেকে গলি থেকে রাজপথ পুরোপুরি চলে যাচ্ছে কুয়াশার চাদরের আড়ালে। ‘ফগ-লাইট’ জ্বালিয়েও ৮-১০ ফুট দূরত্বের বেশি কিছু ঠাহর করা দায়। প্রতি পদে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। তাই পুলিশের তরফে উত্তরবঙ্গ জুড়ে জারি হয়েছে ‘হাই ফগ-অ্যালার্ট’।
বিশেষত, দার্জিলিং পাহাড় ও লাগোয়া সমতলের রাস্তায় পাহারার সময়ে অতি মাত্রায় সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে পুলিশকর্মীদের। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার চৌধুরী বলেন, ‘‘কুয়াশা জনিত কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কর্তব্যরত অফিসার-কর্মীরা তো বটেই, যানবাহন চালকদেরও সতর্ক থাকতে হবে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, রাতভর জাতীয় সড়ক, শহরের ভেতরের বড় রাস্তার ধারে নজরদারিতে থাকেন পুলিশ অফিসারকর্মীরা। তাঁদের পর্যাপ্ত সার্চ লাইট নিয়ে নিরাপদে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডালখোলা, কালিয়াচক, ইসলামপুর, বক্সিরহাট, বারবিশা, ফুলবাড়ি, রাধিকাপুর, মহদিপুরেও রাস্তায় পাহারার সময়ে বাড়তি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কর্তৃপক্ষ। কারণ, অতীতে শীতের সময়ে ঘন কুয়াশায় একাধিক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয়েছে।
ঘটনা হল, সাত দিন ধরেই হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডায় কাবু উত্তরবঙ্গ। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের বিশেষজ্ঞ রঞ্জন রায় বলেন, ‘‘পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবেই এমন কনকনে হয়ে আছে চারদিক। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে রাত নামলেই ঘন কুয়াশার মোড়কে ঢুকে যাচ্ছে সব। সোমবারও ভোর অবধি অতি গাঢ় কুয়াশা থাকবে।’’ আবহাওয়ার উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণের পরে ৪-৫ দিনের আগে আবহাওয়ার উন্নতির কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না রঞ্জনবাবু।
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা
• দার্জিলিং ৩
• শিলিগুড়ি ৮
• জলপাইগুড়ি ৯.৮
• কোচবিহার ৫
• আলিপুরদুয়ার ১০
• বালুরঘাট ৯
• রায়গঞ্জ ১০
• মালদহ ১০
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া মন্ত্রকের সিকিম শাখা জানাচ্ছে, উত্তর সিকিমে তুষারপাত চলছেই। প্রতিদিন ভোর থেকে ঘণ্টা তিনেক তুষারপাত চলছে। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নেমে যাওয়ায় উত্তর সিকিমের বহু ঝোরা এবং জলাশয়ের জল জমে বরফ হয়ে গিয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় তাপমাত্রা আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। যতদিন না আকাশে মেঘ আসছে ততদিন তাপমাত্রার উন্নতির কোনও সম্ভাবনা নেই। একটি দুর্বল পশ্চিমী ঝঞ্ঝা উত্তরের দিকে এগিয়ে আসছে। তবে তা শক্তি সঞ্চয় করতে না পারলে দিনে ঝকঝকে রোদ থাকলেও আকাশে মেঘ জমার কোনও সম্ভাবনা নেই।’’
বস্তুত, বেলা ১০টা থেকে বিকেল ৪টে অবধি রোদ থাকলেও সন্ধ্যা নামলেই এক লাফে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে চলে যাচ্ছে বলে নানা রোগও বাড়ছে বলে জানান শিলিগুড়ির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শঙ্খ সেন। তাঁর পরামর্শ, ‘‘শীত না যাওয়া অবধি বিকেল গড়ালেই পর্যাপ্ত গরম পোষাক পরতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy