কড়কড়ে ভাজা পুঁটির স্বাদই আলাদা। সর্ষে পুঁটি, ঝাল পুঁটি, পুঁটির ঝোল, চচ্চড়িও ভোজন রসিকদের দারুণ পছন্দের। এমনকী অনেকে পুঁটির মুড়ো চিবোতেও দারুণ ভালবাসেন। সব মিলিয়ে বাজারে চাহিদাও আছে পুঁটির। অথচ সেই পুঁটির জোগান বাড়াতেই জেলায় তেমন কোনও উদ্যোগ নেই বলে চুনো মাছপ্রেমীদের অনেকেই আক্ষেপ করতেন। নতুন বছরে সেই আক্ষেপ ঘোচাতেই জানুয়ারি থেকে কোচবিহারের চারটি নদীতে পুঁটি মাছের পোনা ছাড়ার কাজে নামছে মৎস্য দফতর।
১৩ জানুয়ারি দিনহাটায় আয়োজিত চুনোপুঁটি উৎসব উপলক্ষে ধরলা নদীতে প্রথম ধাপে প্রায় ৪ কুইন্টাল মাছের পোনা ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারমধ্যে এক-চতুর্থাংশ থাকবে বিভিন্ন প্রজাতির পুঁটি মাছের পোনা। দফতর সূত্রের খবর, তুফানগঞ্জের রায়ডাক, কালজানি, গদাধর নদীতেও পর্যায়ক্রমে পুঁটি মাছের পোনা ছাড়ার পরিকল্পনা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় এক লক্ষ পুঁটি নদীগুলিতে ছাড়ার চেষ্টা হচ্ছে। মৎস্য দফতরের কোচবিহার জেলা আধিকারিক অলোকনাথ প্রহরাজ বলেন, “বিভিন্ন নদীতে চারাপোনা দফতরের উদ্যোগে আগেও মাছ ছাড়া হয়েছে। পরিকল্পনা করে পুঁটি মাছের পোনা অবশ্য এ বারই প্রথম ছাড়া হবে। প্রস্তুতি এগোচ্ছে।”
আচমকা পুঁটি নিয়ে এমন উদ্যোগ কেন? দফতর সূত্রের খবর, রাজ্য মৎস্য দফতরের কর্তাদের একাংশই ওই ব্যাপারে জোর দিয়েছেন। তাছাড়া স্থানীয় বাজারেও পুঁটির চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া চুনোপুঁটি উৎসবের মাধ্যমে ছোট মাছ সংরক্ষণের পরিকল্পনা হয়েছে। সবমিলিয়েই গুরুত্বের মানদণ্ডে খানিকটা উপেক্ষিত পুঁটির কদর বেড়েছে। স্বর্ণপুঁটি, কাঞ্চনপুঁটি, তিঁতপুঁটি, সরপুঁটি, দেশি পুঁটি সবই নদীতে ছাড়ার চেষ্টা হচ্ছে। একই সঙ্গে অবশ্য নদীতে রুই, কাতলা, মৃগেলের পোনাও ছাড়া হবে। এ ছাড়াও খালবিল, পুকুর, জলাশয়ে পাবদা, নেদস, ট্যাংরা, মৌরলা, বাইম, বেলে, কুরসা, কাকিলার মত মাছের উৎপাদনও বাড়ানো হবে। দফতরের এক কর্তা জানান, মৌরলার বাণিজ্যিক চাষের পরিকল্পনা হচ্ছে। প্রথম লক্ষ্য অবশ্য পুঁটি।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কোচবিহারের ভবানীগঞ্জ থেকে নতুন বাজার, তুফানগঞ্জ থেকে মেখলিগঞ্জ- সর্বত্রই বাজারে পুঁটির চাহিদা বেড়েছে। পছন্দসই আকারের পুঁটি গড়ে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। কিন্তু আগের মত জোগান নেই। এক মাছ বিক্রেতার কথায়, ‘‘বছর পাঁচেক আগেও খুচরো বিক্রির জন্য গড়ে দশ কেজি পুঁটি দৈনিক পাইকারি বাজার থেকে কিনতাম। এখন তো গোটা বাজারেও মাঝেমধ্যে ওই পরিমাণ পুঁটি মাছ থাকেনা। অন্য সব চুনোপুঁটি মাছের জোগানও কমেছে।’’ দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামী বলেন, “পুঁটি-সহ সব চুনোমাছের জোগানই কমেছে। চাহিদা যথেষ্ট। অনেক চিকিৎসকেরাও ওই সব মাছ খেতে পরামর্শ দেন। শুধু নদীতে পোনা ছাড়লে হবে না। ধারাবাহিক উদ্যোগ চাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy