Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

উত্তরের কড়চা

ডুয়ার্সে আছে নানা অগম্য স্থান। সুন্দর প্রকৃতি আর জনজাতির এই প্রাকৃতিক সমারোহকে আরও আকর্ষক করতে স্বেচ্ছায় উদ্যোগ নিলেন কয়েক জন মানুষ। তাঁরা হলেন শান্তিনিকেতনের অরুণাভ দাস, শিলিগুড়ির সমরজিৎ কর এবং মাদারিহাটের বিশ্বজিৎ সাহা, জলপাইগুড়ির পারমিতা দাস এবং আরও অনেকে।

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৫৭
Share: Save:

সবুজ স্বপ্নের ডুয়ার্স

ডুয়ার্সে আছে নানা অগম্য স্থান। সুন্দর প্রকৃতি আর জনজাতির এই প্রাকৃতিক সমারোহকে আরও আকর্ষক করতে স্বেচ্ছায় উদ্যোগ নিলেন কয়েক জন মানুষ। তাঁরা হলেন শান্তিনিকেতনের অরুণাভ দাস, শিলিগুড়ির সমরজিৎ কর এবং মাদারিহাটের বিশ্বজিৎ সাহা, জলপাইগুড়ির পারমিতা দাস এবং আরও অনেকে। এ মাসের ৯ থেকে ১২ তারিখে এঁদেরই উদ্যোগে জলদাপাড়ার হলং-এ অনুষ্ঠিত হয়েছিল জলদাপাড়া চিলাপাতা উইন্টার ফেস্টিভ্যাল। ১১ তারিখে ডুয়ার্সের হলং-এর বনবাংলোর হাতিদের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁরা প্রকাশ করলেন ডুয়ার্সের ভ্রমণ বিষয়ক বই ‘ডুয়ার্স তরাই: সবুজ স্বপ্নের দেশ’। লেখক অরুণাভ দাস। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন বিশ্বভারতীর ইতিহাসের অধ্যাপক অরুণাভর লেখা বইটি ডুয়ার্সের ওপর লেখা দ্বিতীয় বই। সামগ্রিক ভাবে তাঁর লেখা ২৫তম বই। অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসেবে এঁরা ডুয়ার্সের ভাওয়াইয়া গানের শিল্পী ধনেশ্বর রায়কে সংবর্ধনা দেন। অনুষ্ঠানের মোট ৩০ জন সদস্য জটেশ্বর গ্রামে গিয়ে শিল্পীকে সংবর্ধনা জানান। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাঁদের পরবর্তী পদক্ষেপ গোয়া এবং কেরলের মতো বর্ষায় ডুয়ার্সের সৌন্দর্যকে তুলে ধরা। উদ্যোক্তাদের পক্ষে পারমিতা দাস বলেন, “ট্যুরিজম মানে কেবল কয়েকটি জায়গা ঘুরে যাওয়া নয়। প্রকৃতি এবং ডুয়ার্সের জনজাতিদের নিয়ে ডুয়ার্সের যে সৌন্দর্য্য আছে তার একটা আলাদা বৈশিষ্ট আছে। বর্ষার সময় ডুয়ার্সের বনে ঢোকা বারণ। বর্ষায় ডুয়ার্সের প্রকৃতি নতুন করে সেজে ওঠে। বন ছাড়াও ডুয়ার্সে অনেক কিছু আছে। ডুয়ার্সের রূপ একেক সময় একেক রকম। সব কিছুর একটা মেলবন্ধন ঘটানো আমাদের লক্ষ্য।”

মানবিক শেক্সপিয়র

সম্প্রতি নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন, জলপাইগুড়ি শাখার উদ্যোগে সমীর মৈত্র-র ‘শেক্সপিয়রের নাটকে মানবিক মুখ’ গ্রন্থটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ঘটল। গ্রন্থের আবরণ উন্মোচন করেন অধ্যাপক গিরীন্দ্রনারায়ণ রায়। তিনি এই প্রসঙ্গে মানবতাবাদের শুরুর প্রেক্ষাপটটি তুলে ধরেন। সভায় উপস্থিত আনন্দগোপাল ঘোষ জানান, নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন শেক্সপিয়রের জন্মের সাড়ে চারশো বছর পূর্তি লগ্নে এই গ্রন্থ প্রকাশ করে মফস্‌সলে শেক্সপিয়র চর্চা সমৃদ্ধ করল। তবে এই শহরে শেক্সপিয়র চর্চার গৌরবময় দিক আগেই ছিল, ১৯৬৪ সালে আনন্দচন্দ্র কলেজের উদ্যোগে শেক্সপিয়রের জন্মের চারশো বছর উপলক্ষে ওথেলো মঞ্চস্থ হয়। শুধু তাই নয়, শেক্সপিয়র সম্পর্কে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করে সাড়া বাংলায় আলোড়ন সৃষ্টি করে। উপস্থিত ছিলেন গল্পকার অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, পবিত্র ভট্টাচার্য, অধ্যাপিকা শীলা দত্ত ঘটক, সাগরিকা দত্ত-সহ বিদগ্ধজনেরা।

আঞ্চলিক ইতিহাস

সুকুমার বাড়ইয়ের ‘দিনাজপুরের আঞ্চলিক ইতিহাসের নানা দিগন্ত’ গ্রন্থে সংকলিত প্রবন্ধগুলি দুই পর্বে বিভাজিত। প্রাক-স্বাধীনতা পর্বে একটি জেলায় যে কতরকম আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল তার হদিশ মিলবে প্রথম পর্বে। এই পর্বে রায়গঞ্জের স্বাধীনতা সংগ্রামী সুকুমার চন্দ্র গুহর উপর আলোকপাত মূল্যবান সংযোজন। দ্বিতীয় পর্বে, ‘সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষিতে দিনাজপুর ও মালদহের মহিলা জমিদারদের ভূমিকা’ প্রবন্ধে উঠে এসেছে তৎকালীন মহিলা জমিদারদের সামাজিক অবদান। সেই সঙ্গে, ‘উইলিয়াম কেরির বাংলা রচনা প্রসঙ্গে’, ‘ইতিহাসের ইটাহার’ প্রভৃতি প্রবন্ধগুলিও পাঠককে ঋদ্ধ করে। গ্রন্থে সংকলিত প্রবন্ধগুলিও পাঠককে ঋদ্ধ করে। গ্রন্থে সংকলিত প্রবন্ধগুলি দিনাজপুরের শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং সংগ্রামের ঐতিহ্যের সার্থক প্রতিফলক।

নবজাগরণ

সম্প্রতি সামসি কলেজে অনুষ্ঠিত হল আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্র। এক দিনের এই আলোচনার বিষয় ছিল—বিভিন্ন মহাদেশ এবং সংস্কৃতিতে নবজাগরণ, নানা বিষয়ে দৃষ্টিকোণ থেকে। ‘দ্য রেনেসাঁ অ্যাক্রস দ্য কন্টিনেন্ট অ্যান্ড কালচার অ্যান্ড ইন্টার ডিসিপ্লিনারি পারসপেকটিভ’ আয়োজক—ইংরাজি বিভাগ। মুখ্য বক্তা অধ্যাপক গিরীন্দ্রনারায়ণ রায় জানান, নবজাগরণের হাত ধরে আসে উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, আসে শিল্পোদ্যোগও। ১৯৩০-এ আফ্রিকায় নবজাগরণ লক্ষিত হয়। ভারতে ঊনবিংশ শতাব্দীতে যে নবজাগরণ ঘটে, যার কেন্দ্রভূমি ছিল বঙ্গদেশ, তা ভারতীয় সাহিত্য সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনে, চর্চায় ও পরবর্তী কালে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকেও উজ্জীবিত করে।

বইপোকা

ঊনচল্লিশ বছর বইয়ের সংসারে বসবাস তাঁর। বইপোকাই বোধহয় সবথেকে নির্ভরযোগ্য নাম কোচবিহার-হলদিবাড়ি প্রিন্স ভিক্টর নিত্যেন্দ্রনারায়ণ গ্রন্থাগারের প্রাক্তন গ্রন্থাগারিক রমেন্দ্রমোহন দের। তাঁর কর্মজীবন শুরু ১৯৬৭ তে। তখন তিনি ২১। ছোটবেলা থেকে বই পড়ার নেশা ছিলই। এরপর শুরু হল গ্রন্থাগারের সদস্যদের জন্য বই পড়া। বিষয় জানা থাকলে তাঁদের পছন্দসই বই চটজলদি হাতে ধরিয়ে দেওয়া যায়। কী ধরনের বই পড়তেন ? রবার্ট ব্লেক থেকে মোহন সিরিজ। শরৎচন্দ্র-রবীন্দ্রনাথ, আশাপূর্ণা দেবী-প্রতিভা বসু, ঐতিহাসিক গ্রন্থ, ভ্রমণ কাহিনী। তালিকাটা দীর্ঘ বললে বোধ হয় কম বলা হয়। এক সময় উদ্যোগী হয়েছিলেন ছোটদের বইমুখী করতে। পড়ে ফেলেছিলেন ফেলুদা, কাকাবাবু, নন্টে ফন্টে-সহ আরও কত কিছু। সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর জন্য গ্রন্থাগারে অনুষ্ঠিত হত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর নাটক। ঘণিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন সেইসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও। যুক্ত ছিলেন স্থানীয় ‘সঞ্চার’ পত্রিকার সঙ্গেও। অবসর গ্রহণ করেন ২০০৬ সালে। তারপরেই বিনা পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছায় গ্রন্থাগারের কাজ করেছেন ২০০৭ পর্যন্ত। গ্রন্থাগার কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত। এখন তিনি সত্তর। আজও স্বপ্ন দেখেন পাঠক তৈরি করার। প্রিয় গ্রন্থ ‘রম্যাণি বীক্ষ্য’। বই সম্পর্কে কী বলছেন আজীবনের এই পাঠক ? ‘‘বই যে পরম আত্মীয় হতে পারে সারা জীবন ধরে সেটাই অনুভব করলাম।’’ আর গ্রন্থাগার ? ‘‘ ওটাই আমার সত্তা। এখনও যাই। বই পড়ি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE