Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
সেচ দফতরের আধিকারিকদের ঘেরাও করে বাসিন্দাদের নালিশ

বালি তোলায় ধস নামছে জমিতে

অবাধে বালি তোলায় পাড় ভাঙছে কংসাবতীর। ধস নামছে জমিতে। বেআইনি বালি খাদানে ভরে যাচ্ছে সারেঙ্গা ও রাইপুর ব্লকের সীমানা অঞ্চল। এই অভিযোগে খাদান বন্ধের দাবিতে এ বার সরব হলেন রাইপুর ব্লকের ধানাড়া পঞ্চায়েতের তিনটি গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁরা পুলিশ, প্রশাসন ও সেচ দফতরের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন।

এখান থেকে বেআইনি ভাবে বালি তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার উমাকান্ত ধরের তোলা ছবি।

এখান থেকে বেআইনি ভাবে বালি তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার উমাকান্ত ধরের তোলা ছবি।

দেবব্রত দাস
রাইপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৫ ০১:২১
Share: Save:

অবাধে বালি তোলায় পাড় ভাঙছে কংসাবতীর। ধস নামছে জমিতে। বেআইনি বালি খাদানে ভরে যাচ্ছে সারেঙ্গা ও রাইপুর ব্লকের সীমানা অঞ্চল। এই অভিযোগে খাদান বন্ধের দাবিতে এ বার সরব হলেন রাইপুর ব্লকের ধানাড়া পঞ্চায়েতের তিনটি গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁরা পুলিশ, প্রশাসন ও সেচ দফতরের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযোগ পেয়ে সেচ দফতরের আধিকারিকরা সোমবার কংসাবতীর ওই নদীঘাটের বালি খাদানে পরিদর্শনে গেলে তাঁদের ঘিরে ধরে বালি খাদান বন্ধের দাবি জানালেন গ্রামবাসী।

কংসাবতী নদীর একদিকে সারেঙ্গা ব্লকের বিক্রমপুর, গড়গড়িয়া পঞ্চায়েত এলাকা। তার মধ্যে বিক্রমপুর পঞ্চায়েত এলাকার বাম্ভ্রণডিহা এলাকায় বালি ঘাট রয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, তাদের হিসেবে ব্রাম্ভ্রণডিহায় চারটি বালি খাদান রয়েছে। ওই খাদানগুলি কংসাবতী সেচ দফতরের কাছ থেকে লিজ নিয়ে চলছে। অন্যদিকে রাইপুর ব্লকের ধানাড়া পঞ্চায়েত এলাকায় কোনও খাদানের অনুমতি সেচ দেয়নি। যদিও বাসিন্দাদের দাবি, কংসাবতীর দুই পাড়েই বেআইনি ভাবে অনেকগুলি খাদান চলছে। এতে ইতিমধ্যেই নদীগর্ভে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। যত্রতত্র বালি তোলার জন্য নদীতে ভাঙনও বাড়ছে। নদী পাড়ের চাষেরও জমি ঘসে যাচ্ছে। সেই নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে এ দিন ক্ষোভ ছড়ায় সেচ দফতরের আধিকারিকদের সামনে।

নদী তীরবর্তী ধানাড়া, পেঁচাকোলা, দুবলি গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, “কংসাবতী নদীর ওপারে (বিক্রমপুর পঞ্চায়েত এলাকা) সরকার অনুমোদিত বালি খাদান রয়েছে জানি। কিন্তু যাঁরা এই বালি খাদান লিজ নিয়েছেন, তাঁরা নিয়ম ভেঙে নদী থেকে মেশিনের সাহায্যে বালি তুলছেন। ফলে নদীতে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে নদীর দু’টি পাড়ই ভাঙছে। এ পাড়ের জমিও নদীগর্ভে তলিয়ে যেতে বসেছে।” এরই প্রতিবাদে এ দিন সেচ দফতর ও ব্লক প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন ওইসব গ্রামের বাসিন্দারা। অভিযোগ পেয়েই নড়েচড়ে বসে কংসাবতী সেচ দফতর।

মঙ্গলবার কংসাবতী সেচ দফতরের সারেঙ্গা ব্লকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার জয়দীপ পাল, কংসাবতী রেভিনিউ ডিভিশন ২ এর রেভিনিউ অফিসার সৌরভ সেন-সহ কয়েকজন আধিকারিক ওই বালিখাদানগুলি পরিদর্শনে যান। সঙ্গে ছিলেন সারেঙ্গা থানার পুলিশকর্মীরা। সেই সময় ধানাড়া, দুবলি, পেঁচাকোলা গ্রামের প্রায় শ’দুয়েক বাসিন্দা সেখানে জড়ো হয়েছিলেন। সেচ দফতরের আধিকারিকদের হাতের কাছে পেয়ে ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা। বালি খাদান থেকে দিনের পর দিন অবৈধ ভাবে বালি তোলা হচ্ছে বলে তাঁরা অভিযোগ জানান।

ঘটনা হল, এ দিন আর বালি তোলা হয়নি। ফলে বালি তোলার দৃশ্য দেখতে পাননি আধিকারিকরা। এ দিন নদীঘাটে দাঁড়িয়ে ধানাড়া গ্রামের বাসিন্দা স্বপন মণ্ডল, উদয় মণ্ডল, পেঁচাকোলা গ্রামের বাসিন্দা সুরজিৎ ষন্নিগ্রহী অভিযোগ করেন, “নদীতে যত্রতত্র মেশিনের সাহায্যে বালি তোলা হচ্ছে। ফলে নদীর পাড় ধসে পড়ছে। জমিতেও ধস নামছে। এ ভাবে নদীগর্ভে জমি চলে গেলে আমরা যে পথে বসব।”

ধানাড়া পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের শোভা রায় বলেন, “নদী থেকে অবৈধভাবে বালি তোলা হচ্ছে কী না তা বলতে পারব না। তবে এই বালি তোলার জন্য নদীতে বড় বড় গর্ত তৈরি হচ্ছে এটা সত্যি। সেচ দফতর দেখেশুনে ব্যবস্থা নিক।” রাইপুর ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সরোজ নন্দী ও সারেঙ্গা ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক দেবদাস মণ্ডল অবশ্য এ দিন দাবি করেন, “কংসাবতী সেচ কর্তৃপক্ষ এই বালি তোলার অনুমতি দিয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই”।

কংসাবতী রেভিনিউ ডিভিশন ২ এর রেভিনিউ অফিসার সৌরভ সেন বলেন, “বিক্রমপুর মৌজায় চারটি নদীঘাট থেকে বালি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ধানাড়া মৌজায় বালি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারপরেও ওই এলাকার কিছু বাসিন্দা সেখানে বালি তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ ঠিক নয়। এ দিন সরজমিন গিয়ে ওই এলাকা থেকে বালি তোলা হচ্ছে বলে তেমন কিছু চোখে পড়েনি।”

তাঁর দাবি, ‘‘বিক্রমপুর এলাকা থেকে বালি তোলা হচ্ছে। তারপরেও ধানাড়া এলাকার বাসিন্দারা যে অভিযোগ করেছেন তার ভিত্তিতে জায়গাটি কোন মৌজায় তা নির্ধারণের জন্য সারেঙ্গা ব্লকের ভূমি সংস্কার দফতরে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। আপাতত ওই এলাকা থেকে বালি তোলা বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে।’’

জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘বালি খাদানের লিজ কে পাবে, কারা চালাবে, এ সব নিয়ে মাঝে মধ্যেই অনেক খাদান এলাকায় গণ্ডগোল চলে। এ ক্ষেত্রে তেমন কোনও কারণ থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE