Advertisement
০২ মে ২০২৪

সোশ্যাল হোক কর্মীরা, কর্মশালা সিপিএমের

সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ে দলের নেতা-কর্মীদের দক্ষ করতে উদ্যোগী হয়েছে সিপিএম। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সোশ্যাল মিডিয়া নেট-দুনিয়ায় বিপ্লব এনেছে। কিন্তু, এই মাধ্যম ব্যবহারে বাম নেতা কর্মীদের একটা বড় অংশ পিছিয়ে রয়েছেন।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
আদ্রা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৫ ০১:২৩
Share: Save:

সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ে দলের নেতা-কর্মীদের দক্ষ করতে উদ্যোগী হয়েছে সিপিএম। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সোশ্যাল মিডিয়া নেট-দুনিয়ায় বিপ্লব এনেছে। কিন্তু, এই মাধ্যম ব্যবহারে বাম নেতা কর্মীদের একটা বড় অংশ পিছিয়ে রয়েছেন। সেই জড়তা কাটাতে রাজ্য স্তরে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সংক্রান্ত কর্মশালা করছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। আজ, শনিবার থেকে কলকাতার বাগুইআটিতে দলের প্রমোদ দাশগুপ্ত শিক্ষাকেন্দ্রে দু’দিনের এই কর্মশালা হবে। প্রতিটি জেলা থেকে পাঁচ জন কর্মী এই কর্মশালায় যোগ দেবেন। এ ছাড়াও দলের শ্রমিক, কৃষক, মহিলা, যুব ও ছাত্র সংগঠনের দু’জন করে প্রতিনিধি কর্মশালায় যাবেন।

বামেরা বরাবরই রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে বেশি স্বচ্ছন্দ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক ব্যবহার এবং জনজীবনে এই মাধ্যমের প্রভাব অস্বীকার করতে পারছেন না সিপিএম নেতৃত্ব। কর্মশালা সংক্রান্ত বিষয়ে জেলায় রাজ্য নেতৃত্বের তরফে পাঠানো নোটে কর্মশালার কারণ হিসাবে প্রথমেই এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। মাঠে ময়দানে নেমে সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছে তাঁদেরকে যুক্ত করে আন্দোলন সংগ্রামের কোনও বিকল্প নেই—নোটে এই বিষয়টি থাকলেও দলের রাজ্য নেতৃত্বের বক্তব্য, সোশ্যাল মিডিয়ার ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে এই মাধ্যমে দলের অংশগ্রহণ করানোর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ বাড়ছে।

পুরুলিয়ার মতো প্রত্যন্ত ও পিছিয়ে পড়া জেলাতেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে এই বিষয়টি। শনিবারের কর্মশালায় পুরুলিয়া থেকে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীননাথ লোধার নেতৃত্বে যাচ্ছেন বান্দোয়ানের বিধায়ক সুশান্ত বেসরা, পুরুলিয়া জোনাল কমিটির সদস্য কৌশিক মজুমদার, ঝালদার জোনাল কমিটির সম্পাদক উজ্জল চট্টরাজ এবং জেলার এসএফআই নেতা গৌতম দাস। দীননাথবাবু বাদ দিয়ে বাকিরা সকলেই দলের তরুণ প্রজন্ম। তবে, দলের মধ্যে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ব্যবহারের ক্ষেত্রে বর্ষীয়ান দীননাথবাবু যথেষ্ট সক্রিয়। ফেসবুক বা হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে দলের প্রচার কর্মসূচি যতটা করা সম্ভব, নিয়মিত ভাবে তা করেন দীননাথবাবু।

আর বর্তমান পরিস্থিতিতে ঠিক এটাই চাইছেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব। ই-প্রচারের ক্ষেত্রে রাজ্য কমিটি চাইছে, দলের প্রচার মেশিনারির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসাবে বিশেষ করে আন্দোলন সংগ্রামের বিকাশে সোশ্যাল মিডিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে। সিপিএমেরই এক নেতার কথায়, ‘‘তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেসের মতো দলগুলি যেভাবে এই মাধ্যমকে ব্যবহার করে, সেই তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। আমরা চাইছি, ওই দলগুলি যে ভাবে তাদের বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে, আমাদের কর্মীরা তাতে সড়গড় হয়ে প্রচারে উদ্যোগী হোক।’’

ঘটনা হল পুরুলিয়ার মতো জেলায় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে আক্ষরিক অর্থেই দৈন্যদশা জেলার প্রথম সারির সিপিএম নেতাদের। জেলা সম্পাদক এবং সম্পাদকমণ্ডলীর অনেক সদস্যেরই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বাসুদেব আচারিয়া, রাজ্য কমিটির সদস্য প্রদীপ রায়, শ্রমিক নেতা নিখিল মুখোপাধ্যায়দের মতো নেতাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থাকলেও সেখানে ‘বন্ধু’-র (ফ্রেন্ড লিস্ট) সংখ্যা সামান্য। এই নেতারা নিয়মিত ফেসবুক ব্যবহারেও অভ্যস্ত নন। দলের রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য চাইছেন, জেলার নেতারা ফেসবুক, টুইটারের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ব্যবহারে নিয়মিত হোন।

এ ক্ষেত্রে রাজ্যের পর্যবেক্ষণ, দলের অনেক সদস্য কিংবা সমর্থক ফেসবুকে নিয়মিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিজেদের মতামত পোস্ট করেন। বিভিন্ন বিতর্কে অংশ নেন। এই বিশাল সংখ্যক মানুষের কাছে দলের নীতি, কর্মসূচি পৌঁছে দেওয়ার জন্য নেতাদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ে দক্ষ হওয়াটা সময়েরই চাহিদা। ইতিমধ্যেই সমস্ত জেলায় দলের ফেসবুকের অফিসিয়াল পেজ তৈরি করারও পরামর্শ দিয়েছে রাজ্য কমিটি। তবে পুরুলিয়ায়এই পেজ তৈরি করাই হয়নি।

সিপিএমের পুরুলিয়া জেলার এক গুরুত্বপূর্ণ নেতার কথায়, ‘‘কলকাতা-সহ কয়েকটি জেলায় দলগত ভাবে প্রচার কর্মসূচিতে এই মাধ্যমকে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু দলের রাজ্য নেতারা চাইলেও সে দিক দিয়ে কয়েক যোজন পিছিয়ে রয়েছি আমরা। তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস কিন্তু ধারাবাহিক ভাবে সোসাল মিডিয়াকে ব্যবহার করছে দলের প্রচার কর্মসূচিতে।” দীননাথবাবু বলেন, ‘‘সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের প্রভাব বর্তমান সময়ে কোনও মতেই অবহেলা করা যায় না। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে দলের নীতি, কর্মসূচি পৌঁছে দিতে এই মাধ্যমের বিশাল প্রভাব আছে। সেই প্রেক্ষিতেই আমাদের দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব জেলার নেতা-কর্মীদের এই মাধ্যম ব্যবহারে আরও দক্ষ করতে উদ্যোগী হয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE