Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
৫ কোটির চুরির কিনারা, ধৃত ১

ছক কষেই সিঁধ ৫ ইঞ্চি দেওয়ালে

প্রথমে দস্তুর মতো হোমওয়ার্ক। তারপরে পরিকল্পনা মতো নিখুঁত অভিযান। তার জোরেই সিউড়ির বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন জনবহুল এলাকায় প্রথম সারির স্বর্ণ বিপণির শৌচালয়ের দেওয়ালে সিঁধ কেটে চোরের দল হাতিয়ে নিয়েছিল পাঁচ কোটির সোনা-হিরের গয়না (তেমনই দাবি ছিল সংস্থার)।

কিনারা: উদ্ধার হওয়া সোনা-হিরের গয়না। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

কিনারা: উদ্ধার হওয়া সোনা-হিরের গয়না। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদাদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৫৬
Share: Save:

প্রথমে দস্তুর মতো হোমওয়ার্ক। তারপরে পরিকল্পনা মতো নিখুঁত অভিযান। তার জোরেই সিউড়ির বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন জনবহুল এলাকায় প্রথম সারির স্বর্ণ বিপণির শৌচালয়ের দেওয়ালে সিঁধ কেটে চোরের দল হাতিয়ে নিয়েছিল পাঁচ কোটির সোনা-হিরের গয়না (তেমনই দাবি ছিল সংস্থার)। ৩ এপ্রিলের ওই ঘটনার মাস ঘোরার আগেই চুরির কিনারা হয়েছে বলে দাবি করল বীরভূম পুলিশ।

শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে জেলা পুলিশের সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার দাবি করেন, আন্তঃরাজ্য চক্র ওই চুরির পিছনে ছিল। চক্রের মূল পাণ্ডা হাসান শেখ ওরফে চিকনা হাসানকে বৃহস্পতিবার রাতে রামপুরহাট থেকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার হয়েছে প্রায় দু’কেজি মতো সোনা এবং হিরের গয়না। পুলিশের এক কর্তার দাবি, ওই গয়নার বাজার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা।

৩ এপ্রিল রাতের ওই চুরির ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল জেলার সদর শহরকে। একটি বহুতলের দোতলায় রয়েছে ওই বিপণি। সিউড়ি শহরের কেন্দ্রস্থল বলা যায় এই এলাকাকে। ওই বহুতলেই রয়েছে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, জীবন বিমা নিগমের অফিস এবং ওষুধ ও মিষ্টির দোকান। স্বর্ণ-বিপণি ছাড়াও ব্যাঙ্কগুলিতে নিরাপত্তারক্ষী থাকেন। গ্যাস কাটার দিয়ে চুরির পরেও কেন, কেউ কিছু টের পেলেন না, চুরির পরে সেই প্রশ্নও ওঠে।

কিন্তু, গোড়া থেকেই পুলিশের নিশানায় ছিল ওই বহুতল থেকে মাত্র তিন ফুট তফাতে সিউড়ি সুপার মার্কেটের একটি লজ। পুলিশ জানতে পারে, ১৮ দিন ধরে জনা চারেক লোক লজের দু’টি ঘর বুক করে পালা করে থেকেছে। এবং চুরির পরেই তারা বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে। পরে লজ থেকে কিছু সূত্রও পায় জেলা পুলিশ। লজের সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখতে হার্ডডিস্ক নিয়ে যায় পুলিশ। সন্দেহভাজনদের ফেলে যাওয়া নমুনা নিতে কলকাতা থেকে ফরেন্সিক দলও সিউড়ি আসে। পরে সন্দেহভাজনদের স্কেচ আঁকানো হয়। পুলিশের সন্দেহ ছিল, অত্যন্ত দক্ষ একটি দল গোটা ‘অপারেশন’ সেরেছে।

এই সেই শৌচালয়। ফাইল চিত্র

ধৃতকে প্রাথমিক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে তেমনটা মানছে পুলিশও। পুলিশের সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার জানান, আট জনের ওই দলটি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম এসে রেকি করে যায়। তখনই নিশানা করে ওই স্বর্ণ বিপণির সবচেয়ে দুর্বল জায়গা শৌচালয়ের পাঁচ ইঞ্চির দেওয়ালকে। বিপণির নজরদারি কেমন, পুলিশের টহল কতটা সে সব দেখতে মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে ওই লজে থাকতে শুরু করে। ইতিমধ্যে দলের দু’জন কলকাতা থেকে গ্যাস কাটার কেনে। সাহেবগঞ্জ থেকে কেনা হয় স্ক্রু-ড্রাইভার। তারপরে ৩ এপ্রিল রাতে অভিযান চালানো হয়। ধৃতকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, চুরির দিন চার জন দোকানে ভিতরে ছিল। দু’জন ছিল হোটেলে। কাজ সেরে সিউড়ি থেকে ভোরের বাস ধরে রামপুরহাট চলে যায়। সেখানেই ফেলে দেয় কম্পিউটারের কিছু যন্ত্রাংশ, হার্ড ড্রাইভ।

পুলিশ গোপন সূত্রে জানতে পারে, বৃহস্পতিবার রাতে রামপুরহাট হয়ে ওই দলের কেউ ট্রেনে গয়না নিয়ে কলকাতা যেতে পারে। সেই মতো আগেই স্টেশন চত্বরের দখল নেয় পুলিশ। সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হয় ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ জেলার বাসিন্দা হাসান শেখ ওরফে চিকনাকে। শুক্রবার দুপুরে তাকে সিউড়ি সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক নিরুপম কর চোদ্দো দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ornaments Gold Arrest Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE