পুরুলিয়ায় অভিষেকের পাশে তৃণমূল প্রার্থী কে পি সিং দেও। ছবি: সুজিত মাহাতো।
ক’দিন আগেই রোড-শো করে গিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। তারপর সভা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। কিন্তু মঙ্গলবার সেই পুরুলিয়া শহরে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার ভিড় সে সবকে ছাপিয়ে গেল।
পুলিশের হিসেবে, রাহুলবাবুর শো-তে হাজার দেড়েক আর অধীরবাবুর সভায় হাজার আড়াই লোক হলে, অভিষেকের সভায় প্রায় হাজার পাঁচেক মানুষ এসেছিলেন।
বস্তুত এই শহরে কংগ্রেসের যেমন কিছুটা প্রভাব রয়েছে, তেমনই এ বার দলের কয়েকজন বিক্ষুদ্ধ ‘নির্দল’ প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে পড়ায় কিছুটা ‘চাপে’ শাসকদল। তাই ভোটের চারদিন আগে দলের ‘যুবরাজের’ এই সভায় ভাল লোক টানতে পেরে তৃণমূল শহর নেতৃত্ব কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেলেন।
পুরুলিয়া ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের এই সভায় রাজ্য সরকারের কাজের সঙ্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকারের তুলনা টেনে তিনি পুরুলিয়াকে বিরোধী শূন্য করার ডাক দিয়ে গেলেন। অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপি ১ বছরে কী কাজ করেছে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কিন্তু অনেক বেশি কাজ করেছে। বিজেপি ৫ শতাংশ কাজের হিসেব দিতে পারবে?’’ এরপরেই তিনি কর্মীদের জানান, বিরোধীরা প্রচারে এলে তাঁদের কাছে জানতে চাইবেন, অভিষেক কি মিথ্যা কথা বলেছেন? তাঁর কথায়, ‘‘আমি যদি মিথ্যা বলে থাকি, তাহলে আমি ইস্তফা দেব।’’
তিনি বিজেপিকে কটাক্ষ করতে গিয়ে বলেন, ‘‘বিজেপি আগে কংগ্রেসকে হারাক, সিপিএমকে হারাক তারপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারাবে।’’ তিনি জানান, ‘যাঁরা ভাবছেন ইডি দেখিয়ে, ইনকাম ট্যাক্স দেখিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দমিয়ে রাখতে পারবেন তাঁরা ভুল ভাবছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা আন্দোলনের নাম। কোনও শক্তির ক্ষমতা নেই মমতা সরকারকে ফেলে দেবে। সারদা-কাণ্ড নিয়ে কথা ওঠার পরেও পঞ্চায়েত ভোট, লোকসভা ভোট হয়েছে। তৃণমূলের কোনও ক্ষতি হয়নি। পুরনির্বাচনেও জয়ের ধারা অব্যাহত থাকবে। ২০১৬ সালেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মা সারদা করে রাজ্যের ক্ষমতায় দেবেন।
কুড়ায় মলয় ঘটকের সঙ্গে বিদায়ী পুরপ্রধান শম্পা দরিপা। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘আগে তিনি ১০ লক্ষ টাকার গাড়িতে চড়তেন। এখন ৬ কোটি টাকার গাড়িতে চড়েন। ১৫ লক্ষ টাকা দামের স্যুট পরেন। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও সেই টালির চালার বা়ড়িতে থাকেন। হাওয়াই চপ্পল পরেন।’’
এর পরেই তিনি বামফ্রন্ট নেতৃত্বের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘নারী নির্যাতনের কথা বিমানবাবু-বুদ্ধবাবুরা বলছেন। তাপসী মালিক যখন খুন হলেন, তাঁরা তখন কোথায় ছিলেন? বানতলা-ধানতলা কাণ্ডের সময় তাঁরা কোথায় ছিলেন?’’
পুরুলিয়ার আগে অভিষেক ঝালদায় সভা করেন। তবে সেখানে তেমন ভিড় হয়নি। রাতে রঘুনাথপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড থেকে ৮, ৪, ৫ ওয়ার্ড ঘুরে নেতাজি সঙ্ঘের মাঠ পর্যন্ত তাঁর রোড-শো হয়। অভিষেকের সঙ্গে ছিলেন সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, ইন্দ্রনীল সেন।
বাঁকুড়ায় এসেছিলেন দুই মন্ত্রী মলয় ঘটক ও পূর্ণেন্দু বসু। মঙ্গলবার বাঁকুড়া শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় পথসভা করেন মলয়বাবু। মাচানতলা মোড়ে তাঁর বক্তৃতায় আগাগোড়া কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করেন মলয়বাবু। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার অনেক ভাল ভাল প্রকল্প সাধারণ মানুষের জন্য নিয়ে এসেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য সেগুলি আমরা প্রচার করতে পারছি না। অন্যদিকে, বিজেপি সরকার প্রকল্পের জন্য যতটা না বরাদ্দ করছে, তার থেকে অনেক বেশি টাকা ব্যয় করছে প্রকল্পের প্রচারে। আমরা টাকাগুলো মানুষের স্বার্থে প্রচার করছি, তাই প্রচারে টাকা খরচ করতে পারছি না।’’ কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র এ দিন সন্ধ্যায় বিষ্ণুপুরে সভা করেন। যদিও সেখানে লোক ছিল হাতে গোনা। কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, সন্ধ্যা থেকে ঝড়-বৃষ্টিতে লোডশেডিং এবং সে কারণে জনজীবন ব্যাহত। তাই আশানুরূপ লোক হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy