Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
প্রাথমিকে নজর বাঁকুড়া প্রশাসনের

পরীক্ষা নিয়ে বিশেষ ক্লাস

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের মতে, বৃত্তি পরীক্ষায় মেধাবী পড়ুয়াদের চিহ্নিত করা হয়। অন্য দিকে, এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের চিহ্নিত করা। এ ক্ষেত্রে সফল নয়, ব্যর্থ পড়ুয়াদের খুঁজতেই নেওয়া হবে পরীক্ষা।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৭ ০৭:২০
Share: Save:

যোগ বিয়োগে কতটা পারদর্শী হয়েছে রাইপুরের চতুর্থ শ্রেণির ঝুলন গড়াই? পৃথিবীর আকৃতি কেমন সেটা কি জানে রানিবাঁধের তৃতীয় শ্রেণির সৌরভ দুলে? বানানে কতটা দড় সারেঙ্গার তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়ারা? প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজতে এ বারে পরীক্ষা নেবে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। তৈরি হয়ে গিয়েছে প্রশ্নপত্র। চলতি অগস্টেই হবে পরীক্ষা।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পড়ুয়াদের শেখায় কোনও খামতি রয়ে গিয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতেই এই পরিকল্পনা। শুধু পরীক্ষা নিয়েই দায় সারা নয়, পিছিয়ে থাকা পড়ুয়াদের চিহ্নিত করে বিশেষ ক্লাসেরও ব্যবস্থা করা হবে।

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, পরীক্ষা এবং পিছিয়ে থাকা পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা সর্বশিক্ষা মিশন ও জঙ্গলমহল অ্যাকশন প্ল্যান-এর যৌথ উদ্যোগে হচ্ছে। আপাতত জেলার প্রত্যন্ত দক্ষিণ বাঁকুড়ার খাতড়া মহকুমার স্কুলগুলিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে। মহকুমার ৮টি ব্লকের ১৩৪৫টি স্কুলের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির প্রায় ২৬ হাজার পড়ুয়া পরীক্ষায় বসতে চলেছে। ৫০ নম্বরের প্রশ্নপত্র থাকবে।

পরীক্ষা পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত জেলা শাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) সব্যসাচী সরকার, সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্পের জেলা আধিকারিক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায়, জেলার স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) মুনমুন চক্রবর্তী (গোস্বামী)-সহ মোট আট জনের একটি পরিচালন কমিটি গড়া হয়েছে। পড়ুয়ারা নিজেদের স্কুলেই পরীক্ষা দেবে। তবে খাতা দেখবেন অন্য স্কুলের শিক্ষকেরা।

ঘটনা হল, গত দু’বছর ধরে রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানের উদ্যোগে নবম শ্রেণির পড়ুয়াদের মেধার পরীক্ষা নিয়ে পিছিয়ে থাকা পুড়ায়াদে জন্য বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক স্তরে এই ধরনের কোনও প্রকল্প নেই।

ব্লক স্কুল পড়ুয়া

ইঁদপুর ১৮৯ ৪,৫৬৭

খাতড়া ১৩৬ ৩,০১৪

হিড়বাঁধ ১০৭ ২,০৩০

রানিবাঁধ ১৭০ ২,৫৫৬

রাইপুর ২২০ ৪,৩৯৫

সারেঙ্গা ১৩০ ১,৮০৭

সিমলাপাল ১৯৭ ৩,৫৫৩

তালড্যাংরা ১৯৬ ৪,৩৯৯

এ ক্ষেত্রে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগের প্রশংসা করছেন জেলার শিক্ষক ও অভিভাবকদের অনেকেই। বাঁকুড়া সারদামণি গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থ গুপ্তের কথায়, ‘‘ভিত নড়বড়ে হলে ভবিষ্যতে প্রভাব পড়বেই। তাই প্রাথমিকের শিক্ষাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি।’’

বাঁকুড়া জেলা শাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাটাই ছাত্রছাত্রীদের বাকি পড়াশোনার ভিত হয়ে থাকে। তাই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতেই আমরা জোর দেওয়ার কথা ভেবেছি।’’

তিনি জানান, দক্ষিণ বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত এলাকা থেকেই এই প্রকল্প শুরু হচ্ছে পরীক্ষামূলক ভাবে। ধীরে ধীরে গোটা জেলাতেই এই প্রকল্প চালু করার বিষয়টিও প্রশাসনের ভাবনায় রয়েছে।

তাহলে বৃত্তি পরীক্ষার সঙ্গে এই পরীক্ষার ফারাকটা কোথায়?

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের মতে, বৃত্তি পরীক্ষায় মেধাবী পড়ুয়াদের চিহ্নিত করা হয়। অন্য দিকে, এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের চিহ্নিত করা। এ ক্ষেত্রে সফল নয়, ব্যর্থ পড়ুয়াদের খুঁজতেই নেওয়া হবে পরীক্ষা। বৃত্তি পরীক্ষায় সফল পড়ুয়ারা জলপানি পায়। এই পরীক্ষায় ব্যর্থ পড়ুয়াদের জন্য পড়াশোনার বাড়তি সুযোগ করে দেওয়া হবে। আর্থিক কোনও বৃত্তি এখানে থাকছে না।

সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক সুপ্রভাতবাবু জানান, অগস্টেই একটি ছুটির দিন স্থির করে স্কুলে স্কুলে পরীক্ষা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রস্তুতি সারা। আগামী সেপ্টেম্বরে থেকেই বিশেষ ক্লাস শুরু করে দেওয়ার লক্ষ্য
নিয়েছি আমরা।’’

সুপ্রভাতবাবু জানান, বিশেষ ক্লাসগুলি পড়ুয়াদের নিজেদের স্কুলেই হবে। তবে অন্য স্কুল থেকে অতিথি শিক্ষক এনে অথবা সরকারি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দিয়ে ওই ক্লাসগুলি নেওয়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE