কর্মীদের চাঙ্গা করতেই জেনেবুঝে তিনি ভুল কথা বলে থাকেন, সে কথা ঘোষণা করেছেন তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তার পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। তৃণমূলের ওই দাপুটে নেতার দেখানো পথে যে তাঁরাও চলবেন, সে কথা পরিষ্কার করে দিলেন বিজেপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি দেবাশিস মিত্র।
সোমবার নলহাটিতে দলীয় কর্মিসভায় দেবাশিস বলেন, ‘‘বিপক্ষদের দু’একটা চড়-থাপ্পড় না মারলে দলের কর্মীদের মনোবল বাড়বে না। মামলা-মোকদ্দমায় না জড়ালে কর্মীদের আচরণও বদলাবে না।’’ যাঁর উপস্থিতিতে দেবাশিস ওই নিদান দিলেন, সেই বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকেও রাজ্য রাজনীতিতে এই ‘রণকৌশলে’র অন্যতম সমর্থক বলে পরিচিত। অনুব্রতর মতোই বেফাঁস মন্তব্য করে অতীতে একাধিক বার বিতর্কে জড়াতে দেখা গিয়েছে দিলীপকে। যা দেখে শুনে জেলার এক প্রবীণ বাম নেতা বলছেন, ‘‘এ সবই তৃণমূল-বিজেপি-র গটআপ কেস। তৃণমূলের হাত ধরে বিজেপি-ও বীরভূমের মাটিতে রাজনৈতিক ভিত শক্ত করতে চমক-ধমকের রণকৌশল নিয়েছেন। তা মোটেও কাজে আসবে না।’’
রবিবারই বোলপুরে দলের আইনজীবী সংগঠনের সম্মেলনে অনুব্রতর একটি স্বীকারোক্তি সামনে এসেছে। যেখানে তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা কিছু রাজনৈতিক কথা ভুল করে বলে ফেলি। আমি জানি যে, আমি ভুল বলছি। এটা বললে কাগজে ছাপা হবে, চ্যানেলে দেখানো হবে। তবু দলের স্বার্থে বলি। দলকে চাঙ্গা করার জন্য বলতে হয়। কর্মী-সমর্থকদের মনোবল জোগাতে বলতে হয়। তার জন্যই ভুল হলেও বলি।” ওই বক্তব্যের পরেই অনুব্রতর বিরুদ্ধে সুর চড়ান দিলীপ। তাঁর দাবি ছিল, সাম্প্রতিক ভোটের ফল দেখে ভয় পেয়েছে তৃণমূল। তাঁর জেরেই অনুব্রত ওই সাফাই গেয়েছেন।
নলহাটি পুরসভার মেয়াদ শেষের দিকে। আসন্ন পুরভোটের দিকে তাকিয়েই দলীয় কর্মীদের নিয়ে সাংগঠনিক প্রস্তুতি শুরু করতে এ দিন নলহাটিতে দলীয় কার্যালয়ে কর্মিসভায় যোগ দিতে আসেন দিলীপ। দলের নলহাটি নগর মণ্ডল কমিটির সভাপতি অনিল সিংহের উদ্যোগে ওই কর্মী সভায় দিলীপ ছাড়াও বিজেপি-র অন্যান্য নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই বিজেপি রাজ্য সহ-সভাপতি ওই নিদান দেন। পরে দিলীপও কর্মীদের বিডিও অফিস, থানায় আন্দোলন করে প্রশাসনকে চাপে রাখার নির্দেশ দেন। বিধানসভা ভোটে বিপুল জয়ের পরে বিভিন্ন সভায় অনুব্রতকে হুমকি দিতে শোনা গিয়েছে, পরের ভোটে বিরোধীদের মনোনয়নই করতে দেওয়া হবে না। এই আবহে লোকবল দিয়ে প্রতিটি বুথে লড়াই করার ডাক দেন দিলীপ। সেই জন্য বুথ চলো অভিযান, বুথ কমিটি গঠনের জন্যও নির্দেশ দেন।
অনুব্রতর হুমকির প্রতিক্রিয়ায় দিলীপ বলেন, ‘‘শুনেছি উনি বিরোধীদের মনোনয়ন দিতে দেবেন না। এখন উনি নাকি আগে যা বলেছেন, ভুল বলেছেন। জানি না, ওঁর মনের কথা ঠিক কী। সেটা কিছু দিনের মধ্যে প্রকাশ পাবে।” দিলীপের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নলহাটির তৃণমূল বিধায়ক মইনুদ্দিন শামস বলেন, ‘‘কে দিলীপ ঘোষ?’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘বীরভূমের মানুষ উন্নয়নের পাশে আছেন। বাকিদের এখানে স্থান নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy