মুখোমুখি: পুরপ্রধানের অফিসে কাউন্সিলরেরা। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূলের পুরসভায় ক্ষোভের আঁচ দলের অন্দরেই।
এক দিকে, পুরুলিয়া শহরের দেশবন্ধু রোডে পাইপ পাতছে কারা, তা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে শাসকদলের ভিতরেই। তৃণমূল কাউন্সিলরদের বড় অংশই জলকষ্টের মধ্যে ওই পাইপলাইন বসানো নিয়ে সরাসরি নিজেদের ক্ষোভ জানিয়েছেন পুরপ্রধানের কাছে। অন্য দিকে, গত সপ্তাহে পুরসভায় চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল (সিআইসি) গঠন নিয়েও ক্ষুব্ধ সিংহভাগ কাউন্সিলর। তাঁদের অভিযোগ, সিআইসি গঠনে তাঁদের অনেককেই অন্ধকারে রাখা হয়েছে।
দেশবন্ধু রোডে ক’দিন আগেই শুরু হয়েছিল ওই পাইপ লাইন বসানোর কাজ। কিন্তু, কোথায় জলের সংযোগ দিতে ওই পাইপ বসছে, তা নিয়ে তৃণমূলের পুরসভা প্রথম থেকেই মুখে কুলুপ এঁটেছে। বুধবার দলের জনা দশেক কাউন্সিলর শহরের নর্থ লেক রোডের একটি হোটেলে আলোচনায় বসেন। সেখানে পুরসভায় তৃণমূলের দলনেত্রী ময়ূরী নন্দী, তৃণমূলের শহর কমিটির কার্যকরী সভাপতি জ্যোতির্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের কয়েক জন সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে পাইপ লাইন বসানো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কাউন্সিলরেরা।
ময়ূরীদেবী পরে বলেন, ‘‘এখন শহরে তীব্র জলাভাব। অথচ এই নতুন পাইপ লাইন বসানো হচ্ছে কাউকে সংযোগ দেওয়ার জন্য। পুরপ্রধান বলছেন, তিনি জানেন না। উপপুরপ্রধান, যিনি জল বিভাগের দায়িত্বে, তিনিও একই কথা বলছেন। তাহলে জানেটা কে? এমন তো নয় যে, ভূতে এই পাইপ লাইন বসাচ্ছিল!’’ তাঁর দাবি, পুরসভারই কেউ যুক্ত রয়েছে এই কাজে। তদন্ত করে খুঁজে বের করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সাসপেন্ড করতে হবে। অবিলম্বে পাইপ লাইন তুলে ফেলার দাবিও জানিয়েছেন তিনি। বিজেপি-ও এই পাইপলাইন প্রশ্নে সরব হয়েছে। পুরসভা পরিচালনার ক্ষেত্রে জনমানসে যে সমস্ত প্রশ্ন ও অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে, সেই বিষয়গুলিকে সামনে রেখেই মঙ্গলবার বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকেরা শহরে মিছিল করে পুরসভায় স্মারকলিপি দেন।
তৃণমূল সূত্রের খবর, এ দিন হোটেলের বৈঠকে উপস্থিত কাউন্সিলরেরা সিআইসি-র সদস্য বাছার ক্ষেত্রে তাঁদের অনেককেই অন্ধকারে রাখা হয়েছে জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দাবি ওঠে, দলে এক ব্যক্তি এক পদ রাখতে হবে। এই দাবি যে উপ-পুরপ্রধান বৈদ্যনাথ মণ্ডলের হাতে জল ও আলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বিভাগ থাকার কারণেই, সে কথাও জানিয়েছেন ক্ষুব্ধ কাউন্সিলরেরা। বৈঠক সেরে সকলেই পুরপ্রধানের কাছে গিয়ে তাঁদের বক্তব্য ও ক্ষোভের কথা জানান।
পুরসভার দলনেত্রী বলেন, ‘‘পুরসভা যে ভাবে চলছে, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সবে চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল ঢেলে সাজা হয়েছে। কিন্তু তা করা হয়েছে আমাদের অনেককেই অন্ধকারে রেখে। সেটা অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। বেশ কয়েক জন যোগ্য কাউন্সিলরকে বঞ্চিত করা হয়েছে।’’ তৃণমূল কাউন্সিলর বিভাস দাস, কৃষ্ণেন্দু মাহালিদেরও বক্তব্য, পুরসভা পরিচালনা নিয়ে নানা কথা উঠতে শুরু করেছে। তাই সমস্ত বিষয় তাঁরা পুরপ্রধানের নজরে আনলেন।
পুরুলিয়ার পুরপ্রধান সামিমদাদ খান বলেন, ‘‘আমাদের কয়েক জন কাউন্সিলরের বেশ কিছু বিষয়ে ক্ষোভ রয়েছে। আমি তাঁদের বলেছি, সবই দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক হয়েছে। তাঁরা দলের জেলা সভাপতির সঙ্গে বসতে চান। আমি জেলা সভাপতিকে বিষয়টি জানাব।’’ দেশবন্ধু রোডের পাইপ লাইনের বিষয়টি নিয়ে তিনি শীঘ্রই ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান পুরপ্রধান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy