Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মৃত্যুর খবর শুনে ছড়ানো হল ব্লিচিং

১০ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর শেখ আলাউদ্দিন বলছেন, ‘‘মশাবাহিত রোগ না ছড়াতে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে বাড়িতে বাড়িতে তার প্রচার কই। পুরসভাকে জানানোর পরেও কাজ হয়নি।’’

আঁতুড়: সিউড়ির এই দশ নম্বর ওয়ার্ডেই মৃত্যু হয়েছে ছাত্রের। সেখানেই পুকুরের হাল এমন। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

আঁতুড়: সিউড়ির এই দশ নম্বর ওয়ার্ডেই মৃত্যু হয়েছে ছাত্রের। সেখানেই পুকুরের হাল এমন। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৭ ০১:৩৬
Share: Save:

মশাবাহিত রোগ কোনও ভৌগোলিক সীমা মেনে ছড়ায় না। দুবরাজপুর পুরসভাকে এই কথাটা বহুবার বুঝিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের এক কিশোরের মৃত্যুতে প্রমাণ হল তাতেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। যদিও জ্বরে আক্রান্ত ওই কিশোরের মৃত্যুর জন্য ডেঙ্গি-ই দায়ী এমনটা এখনও মানেনি স্বাস্থ্য দফতর। তবে চিকিৎসকদের একাংশ থেকে শুরু করে এলাকাবাসীর একটা বড় অংশ মনে করছেন, ওই কিশোর মারা গিয়েছে ডেঙ্গিতেই।

ডেঙ্গি মারাত্মক আকার নিয়েছে দুবরাজপুর পুর এলাকার সাত নম্বর ওয়ার্ডে। মশার বংশ বিস্তার রোধে বা সচেতনতা প্রচারে যে তৎপরতা সেখানে লক্ষ্য করা গিয়েছে, তার ছিটেফোঁটাও বাকি ওয়ার্ডগুলিতে দেখা দেয়নি। এমনকি ১০ নম্বর ওয়ার্ডে নিকাশি নালা পরিষ্কার, ব্লিচিং ছড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে ছেলেটি মারা যাওয়ার পর থেকে। কোনও কোনও ওয়ার্ডের নিকাশি নালায় হাত পড়েনি কম করে ১৫ দিন।

১০ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর শেখ আলাউদ্দিন বলছেন, ‘‘মশাবাহিত রোগ না ছড়াতে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে বাড়িতে বাড়িতে তার প্রচার কই। পুরসভাকে জানানোর পরেও কাজ হয়নি।’’ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়িও মানছেন সে কথা। তিনি বলছেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর পাশে আছে। তবে মশাবাহিত রোগের মোকাবিলায় সক্রিয় ভূমিকা হতে হবে তো পুরসভাকেই।’’

স্বাস্থ্য দফতরের হিসেবে, জেলায় মোট ডেঙ্গি আক্রান্ত ৬২ জন। দুবরাজপুরের সাত নম্বর ওয়ার্ডেই আক্রান্তের সংখ্যা ৪০। লাগোয়া ৬ নম্বর ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডেও অন্তত চার জনের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গির জীবাণুর ধারক মানুষ। কিন্তু রোগ ছড়ানোয় মূল ভূমিকা থাকে এডিস প্রজাতির মশার। খুব ছোট্ট শরীরের সাদা সাদা স্পট যুক্ত অত্যন্ত চঞ্চল হয় মশাগুলি। ওই মশা সংক্রামিত মানুষকে কামড়ালে ডেঙ্গির জীবাণু ঢোকে মশার শরীরে। এরপর যতগুলি মানুষকে সেই পূর্ণাঙ্গ মশা কামড়াবে জীবাণু ছাড়াবে ততগুলি শরীরে। একবার শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু প্রবেশের ৮-১০ দিনের মধ্যেই রোগ প্রকাশ পায়। ডিম পাড়ার আগে পুষ্টির জন্য একটি স্ত্রী এডিস মশা অন্তত পাঁচটি শরীর থেকে রক্ত চোষে।

জমা পরিষ্কার জলে একবারে ১০০-১৫০টি ডিম পাড়ে একটি এডিস মশা। জীবদ্দশায় তিন বার ডিম পাড়ে। সহজেই অনুমান করা যায়, একটি পূর্ণাঙ্গ বাহক মশা কত সংখ্যক ডেঙ্গি জীবাণুবাহি মশা তৈরি করতে পারে। ফলে রোগটি সংক্রামিত হয় দাবানলের মত। রোগ রোখার একমাত্র উপায় মশার বংশবৃদ্ধি রোধ। সেটা হতে পারে লার্ভা থাকা অবস্থায় সেগুলিকে যদি নষ্ট করে
দেওয়া গেলে কিংবা ডিম পাড়ার সুযোগ না দিলে। স্বাস্থ্যকর্তারা সতর্ক করছে, বাড়ির আশেপাশে কোনও পাত্রে জল জমে থাকতে দেবেন না। বাচ্চাদের হালকা রঙের ফুলহাতা জামা পরিয়ে রাখুন। মশারি টাঙিয়ে শুতে হবে। আর জ্বর হলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

কিন্তু বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেই প্রচারে খামতি রয়েছে পুরসভার। ২০ জন পুরস্বাস্থ্যকর্মীর পক্ষে পুর এলাকার ১৬টি ওয়ার্ডের এত বাড়িতে প্রচার চালানোও কার্যত অসম্ভব। পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডেও তা মানছেন। তিনি বলছেন, ‘‘সীমিত সামর্থের মধ্যেও আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।’’ আজ, শুক্রবার পুর এলাকার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র এবং শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের কর্মী সহায়িকা ও দিদিমণিদের নিয়ে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। তাঁদেরকেই বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাড়ি বাড়ি ঘুরে সচেতনতা প্রচার করতে বলা হবে। সিএমওএইচের উপস্থিতিতে ছোট প্রশিক্ষণও তাঁদের দেওয়া হবে। তবে, এগিয়ে আসতে হবে এলাকার তরুণ প্রজন্মকেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mosquito Dengue Fever ডেঙ্গি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE