ধংস: লোকপুরে। নিজস্ব চিত্র
ব্যবধান মাত্র ২২ দিনের। লোকপুর থানা এলাকায় ফের বিস্ফোরণে উড়ল বাড়ি।
বুধবারের সকালে ঘটনাটি ঘটে বারাবন গ্রামের নিচুপাড়ায় শেখ আইনুসের বাড়িতে। তিনি এলাকায় সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বলেই পরিচিত। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ বিস্ফোরণ ঘটে। উড়ে গিয়েছে আইনুসদের রান্নাঘরের খড়ের চাল। গ্রামবাসীর একাংশের দাবি, ওই বাড়িতে মজুত রাখা বোমা ফেটেই বিস্ফোরণ। তার শব্দে গোটা গ্রাম কেঁপে গিয়েছিল। পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, প্রায় একই সময়ে ওই ঘরটিতে আগুন লাগার ঘটনাও ঘটেছিল। কিন্তু আগে বিস্ফোরণ হয়েছে না আগুন লেগেছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
বীরভূমের পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলছেন, ‘‘আগুন নেভাতে জল দেওয়া হয়েছিল। তাই বিস্ফোরণ ঘটলে ঘটনাস্থল থেকে যে প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ মেলে, এখানে সেটা মেলেনি। কিন্তু, এলাকাবাসী যেহেতু বিস্ফোরণের আওয়াজ পেয়েছেন, আমরা তদন্ত করে দেখছি।’’
গত ১ অগস্ট এই লোকপুর থানা এলাকার ডেমুটিটা গ্রামের শেখ শামিরচাঁদের বাড়িও বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছিল। দল অস্বীকার করলেও এলাকার তৃণমূল কর্মী হিসাবেই পরিচিত ছিল সে। ওই গ্রাম থেকে আড়াই কিমি দূরে বারাবন গ্রামে যার বাড়ির চাল উড়ল, সেই আইনুসের সঙ্গে শামিরচাঁদের ভাল সম্পর্ক ছিল বলে জানাচ্ছেন তৃণমূলেরই একটি অংশ। ডেমুটিটার বিস্ফোরণের পরে জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেছিলেন, ‘‘সমাজবিরোধীদের সঙ্গে রাজনীতির কী যোগ।’’ যদিও এ দিনের ঘটনার পরে খয়রাশোল ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আইনুস আমাদের দলেরই কর্মী। তবে বাড়িতে বিস্ফোরক রাখাকে দল সমর্থন করে না। পুলিশ ব্যবস্থা নিক।’’ যদিও আইনুসকে গ্রেফতার করা হবে কিনা, সে প্রশ্নের জবাব মেলেনি জেলা পুলিশের কাছে।
গত বছর জুনে ওই থানা এলাকার নওপাড়া গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বিস্ফোরণে ধূলোয় মিশে গিয়েছিল। চলতি বছর ডেমুরটিটা ও বারাবন। কেন এত বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে লোকপুরে?
এলাকাবাসী এবং পুলিশের সূত্রে জানা যাচ্ছে, অবৈধ কয়লা সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ এবং রাজনৈতিক ভাবে এলাকার দখলদারি নিয়ে শাসকদলের দু’টি বিবাদমান গোষ্ঠীর লড়াইয়ের জেরেই তপ্ত হয়ে উঠছে লোকপুর। তবে শুধু লোকপুরেই নয়, এই ছবি গোটা খয়রাশোল ব্লকেরই। তৃণমূলের একাংশ জানাচ্ছেন, ডেমুরটিটা গ্রামে শামিরচাঁদ এবং বারাবনে শেখ আইনুসরা যে গোষ্ঠীর, তাদের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াই লেগেই থাকে। তারই প্রস্তুতিতে বোমা মজুত রাখা প্রয়োজন হয়। কিন্তু, আসবাধনতায় বিস্ফোরণের মাধ্যমে সামনে চলে আসে বেআইনি ওই কারবার। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।
কেন বোমা-বন্দুকের এত রমরমা, সে প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপারের বক্তব্য, ‘‘পুলিশ চূড়ান্ত সতর্ক রয়েছে। অভিযানও চলছে। তার পরেও পুলিশ সব ক্ষেত্রে সফল হতে পারে না।’’
এ দিন ঘটনার পরে একটি বৈদ্যতিন মাধ্যমের হয়ে ছবি তুলতে গিয়ে এক ক্যামেরাম্যান মার খান বলে অভিযোগ। পরে সংবাদমাধ্যমের আরও প্রতিনিধি পৌঁছলেও ঘটলাস্থলের আগেই তাঁদের আটকে দিতে ছুটে আসেন আইনুসের সঙ্গীরা। কেন সংবাদমাধ্যম ঢুকতে পাবে না, এই প্রশ্ন করলে গালিগাজ করা হয় বলেও অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy