Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

শিক্ষকের মারে অজ্ঞান শিশু

পরীক্ষা চলাকালীন দুষ্টুমি করায় তৃতীয় শ্রেণির এক পড়ুয়াকে আছাড় মেরে জখম করার অভিযোগ উঠল এক স্কুলশিক্ষকের বিরুদ্ধে। শনিবার দুপুরে সিউড়ির নামকরা একটি বেসরকারি স্কুলের ঘটনা। মাথায় আঘাত পেয়েই জ্ঞান হারায় বছর দশেকের ওই শিশুটি।

হাসপাতালে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিজন। —তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

হাসপাতালে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিজন। —তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২৫
Share: Save:

পরীক্ষা চলাকালীন দুষ্টুমি করায় তৃতীয় শ্রেণির এক পড়ুয়াকে আছাড় মেরে জখম করার অভিযোগ উঠল এক স্কুলশিক্ষকের বিরুদ্ধে।

শনিবার দুপুরে সিউড়ির নামকরা একটি বেসরকারি স্কুলের ঘটনা। মাথায় আঘাত পেয়েই জ্ঞান হারায় বছর দশেকের ওই শিশুটি। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পরে জ্ঞান ফিরেছে তার। বর্তমানে সিউড়ি সদর হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি শিশুটির মাথায় সিটি স্ক্যান করা হয়েছে।

হাসপাতাল সুপার শোভন দে বলেন, ‘‘মাথায় আঘাতের পাশাপাশি বাচ্চাটির খিঁচুনি হচ্ছিল। সেটা আপাতত বন্ধ করা গিয়েছে। জ্ঞান ফিরলেও ওকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। স্ক্যানের রিপোর্ট থেকে যা পাওয়া গিয়েছে, তাতে এক জন নিউরোলজিস্টের পরামর্শের প্রয়োজন। নিউরোলজির কোনও চিকিৎসক এখানে না থাকায় ওকে বাইরে পাঠাতে হবে।’’

স্কুল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সিউড়ি বাসস্ট্যান্ডের কাছে পাইকপাড়া এলাকায় থাকা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ওই স্কুলটিতে (মর্নিং ও ডে মিলিয়ে) প্রায় ১৩০০ শিশু পড়ে। অসুস্থ শিশুটি দিবা বিভাগের। বাড়ি স্থানীয় সুভাষপল্লিতে। অন্য দিনের মতো এ দিনও স্কুলে গিয়েছিল সে। স্কুলে ছিল দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির গেমস্ পরীক্ষা। সেই পরীক্ষা চলাকালীনই দুষ্টুমি করায় দায়িত্বপ্রাপ্ত এক শিক্ষক ওই ছাত্রটিকে আছড়ে মারেন বলে অভিযোগ। তার পর ছেলেটি নেতিয়ে পড়লে ‘নাটক করছিস’ বলে নাকি ওই শিক্ষক ছাত্রটিকে আরও মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সিউড়ি হাসপাতালে দাঁড়িয়ে উদ্বিগ্ন ছাত্রের মা বলেন, ‘‘দেড়টা নাগাদ অন্যদের কাছে খবর পাই, ছেলে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। পরে জেনেছি, ওই শিক্ষকের মারে ছেলের আমার এই অবস্থা।’’ ঘটনার সময় ওই পড়ুয়ার বাবা সুজয় দত্ত বাড়িতে ছিলেন না। রামপুরহাটে ছেলের এই অবস্থার খবর পেয়ে দ্রুত হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। বিকালে ফোনে তিনি বলেন, ‘‘বাচ্চারা তো একটু চঞ্চল হয়ই। তার জন্য এ ভাবে মারতে হবে? আমরা হতবাক!’’ অসুস্থ ছাত্রের মায়ের ক্ষোভ, ‘‘নামী স্কুলে ছেলেকে ভর্তি করেছি। একরত্তি একটা বাচ্চাকে কোনও শিক্ষক এ ভাবে মারধর করতে পারেন, বিশ্বাস করতে পারছি না!’’

ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরিবার এখনও পর্যন্ত থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের না করলেও ঘটনার কথা পুলিশ জানে। সিউড়ি থানার তরফে জানানো হয়েছে, অভিযোগ হলে অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হবে। অভিযুক্ত শিক্ষকের সঙ্গে অবশ্য এ দিন আর যোগাযোগ করা যায়নি। তবে স্কুলে যে এমন একটি অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক জিতেন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ‘‘খেলাধুলার পরীক্ষা চলছিল। এমনিতেই ওই পড়ুয়া একটু চঞ্চল। শুনেছি, এ দিনও স্কুলে দুষ্টুমি করছিল। হতে পারে, ওই শিক্ষক তাতেই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি একটু ঠ্যালা দিতেই ও পড়ে যায়।’’ তিনি আরও জানান, ঘটনাটি ঘটার পরে তাঁরাই ওই ছাত্রটিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। তবে, ওই শিক্ষক যে ঠিক কাজ করেননি, তা মানছেন জিতেনবাবু।

অন্য দিকে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অভিভাবকদের মতে, বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের। যে ঘটনা ওই পড়ুয়া সঙ্গে ঘটেছে, তা যে কারও সন্তানের সঙ্গেও ঘটতে পারে। ওই অভিভাবকদের দাবি, ‘‘অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক স্কুল। সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করুক, যেন আর এমন ঘটনা না ঘটে।’’ এ দিনের ঘটনার ফলে স্কুলের ভাবমূর্তি যে একধাক্কায় অনেকটা নীচে নামল, মানছেন স্কুল কর্তৃপক্ষও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

beating teacher child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE