Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জেলার আকাশে ভাসছে চিনে ফানুস

ধর্মীয় ব্যাখ্যা না জানলেও, অন্ধকার আকাশে  ঝাঁকে ঝাঁকে ভেসে বেড়াচ্ছে আকাশ লণ্ঠন বা ফানুস এ ছবি অনেকেই দেখেছেন।

ফানুস: উড়িয়ে বাতি। নিজস্ব চিত্র

ফানুস: উড়িয়ে বাতি। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৫৯
Share: Save:

গৌতম বুদ্ধ সংসার ত্যাগ করে মুক্তির পথের সন্ধানে বেরিয়ে যাওয়ার আগে মাথার কেশ নিজে কেটে মনে মনে বলেছিলেন, উদ্দেশ্য পূর্ণ হলে, আমার এ কেশগুচ্ছ নিচে না এসে উপরে উড়ে যাবে। সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছিল। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, আজও গৌতম বুদ্ধের সেই কেশগুচ্ছ স্বর্গের দেবতারাও পূজা করেন। এ বিশ্বাসের ভিত্তিতেই আশ্বিনী পূর্ণিমায় বা প্রবারণা পূর্ণিমায় বৌদ্ধরা বিহারে সমবেত হয়ে আকাশে বুদ্ধের কেশকে পুজো করতে আকাশপ্রদীপ জ্বালেন বা ফানুস ওড়ান।

ধর্মীয় ব্যাখ্যা না জানলেও, অন্ধকার আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে ভেসে বেড়াচ্ছে আকাশ লণ্ঠন বা ফানুস এ ছবি অনেকেই দেখেছেন। শুধু বৌদ্ধদের উৎসব কেন, বিশেষ অনুষ্ঠানে বা বনেদি বাড়িতে বিশালাকায় রঙিন ফানুস উড়াতে দেখেছেন বা শুনেছেন এমন মানুষ কম নন। কিন্তু তা এতদিন ছিল নাগালের বাইরে। তবে হাল আমলে বহু মানুষের সেই সাধ মিটিয়েছে ‘চিনে’ আকাশ লণ্ঠন। কালীপুজোর সময় গত কয়েকবছর ধরে কলকাতা বা শহরতলি আকাশে এমন চিনে আকাশ লন্ঠন বা ফানুস ভেসে যেতে দেখে দেখেছেন অনেকে। সেই ফানুস এতটাই জনপ্রিয় যে এখন কলকাতা শহরতলীছেলে গাঁ-গঞ্জের আকাশ মাতিয়ে দিচ্ছে।

ফানুসের চাহিদা যে বাড়ছে, তার ইঙ্গিত গত বছর দুয়েক ধরেই মিলছিল। এই সময়টায় সিউড়ি বোলপুর রামপুরহাট দুবরাজপুরে সন্ধ্যার পরে থেকে আকাশে ভাসতে দেখা যাচ্ছে একের পর এক ফানুস। চাহিদা তরুণ প্রজন্মের ও স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যেই বেশি। ‘‘দিওয়ালি বা কালীপুজো উপলক্ষে আতসবাজি, আলো তো ছিলই। কিন্তু বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে ফানুস উড়ানোর মজাটাই আলাদা।’’— বলছিলেন সিউড়ির কলেজ পুড়ুয়া সুকৃতি মিত্র ও জয়দীপ দাসেরা।

সিউড়িতে আতসবাজি বিক্রেতা উজ্জ্বল দাসের গলায় একই সুর। তাঁর কথায় গত বার থেকে বাজির সঙ্গে ফানুস নিয়ে এসে বিক্রি করছি। প্রথম বছর থেকেই যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছিল ফানুস। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। তবে চাহিদার তুলনায় জোগান অপ্রতুল থাকায় অনেককে ঘোরাতে হয়েছে। কিন্তু এ বার সে সমস্যা নেই। মাত্র ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে রঙ বে রঙের ফানুস হাওয়ার গতিতে বিক্রি হচ্ছে। শুধু বিক্রিই করছেন না, ক্রেতাদের ফানুস ওড়ানোর কায়দাও বাতলাচ্ছেন তিনি।

দুর্গাপুর থেকে দুবরাজপুরে এক বান্ধবীর বাড়ি বেড়াতে এসেছেন তরুণী অর্চিতা মাহাত। তিনি বান্ধবী রমার জন্য খান দশেক ‘চিনে’ আকাশ লণ্ঠন সঙ্গে এনেছেন। রবিবার সন্ধ্যার আকাশে সেই ফানুস বা চিনে আকাশ লণ্ঠনকে উড়তে দেখে খুব খুশি দুই তরুণী। তাঁদের কথায়, ‘‘ঠিক যেন নদীর বুকে নৌকো ভেসে বেড়াচ্ছে!’’

বন্ধুর জন্য ফানুস নিয়ে এলেও দুবরাজপুর বাজারেও প্রচুর বিক্রি হচ্ছে এই চাইনিজ লণ্ঠন। দীর্ঘ দিন আতসবাজি ও ফানুস তৈরির কাজে যুক্ত দৌতম মালাকার বলছেন, আতসবাজির প্রদর্শনী, খেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, বনেদি বাড়ির জন্য প্রতিবছরই ৮, ১০ ফিট উচ্চতার ফানুস তৈরি করি কিন্তু এত সস্তায় সকলের নাগালের মধ্যে রঙিন ফানুসে মজেছেন সকলে। শুধু কালীপুজো নয় এ বার দুর্গাপুজোয়ও বিক্রি হয়েছে দেদার। বাজারে এমন চাহিদা থাকলেও চিনে ফানুসকে তেমন নম্বর দিতে নারাজ অনেকে।

তাঁরা বলছেন, ফানুস শুধু আঁধারে ভেসে যাওয়া আকাশ লণ্ঠন নয়, এর দেখনদারিটাই আসল। ভরদুপুরে বা সাঁঝের আগে আকাশে ভেসে যাওয়া পেল্লাই ফুটবল বা ঘড়ি দেখতে যে আনন্দ সেটা এখানে নেই।

এক ফানুসপ্রেমীর দাবি, ‘‘এই আকাশ লণ্ঠন খাঁটি চৈনিক বংশোদ্ভূত নয়। এ দেশে তৈরি ফানুসের গায়েই চিনে তকমা সেঁটে দেওয়া হচ্ছে।’’

কিন্তু এসব নিয়ে বেশি না ভেবে সিংহভাগই নিজের রঙিন ফানুসটাকে অন্ধকার আকাশে উড়িয়ে দিতেই আগ্রহী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lantern Chinese Lantern Diwali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE