Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সন্ন্যাস ছেড়ে ঘরে দুধকুমার

প্রথা ভেঙে উজানে হাঁটলেন নেতা! লোকে ঘর ছেড়ে সন্ন্যাস নেয়, তিনি এই ভরা ভোটের বাজারে সন্ন্যাস ছেড়ে ঘরে ফিরলেন। তিনি বিজেপি নেতা দুধকুমার মণ্ডল। তাঁর এ ফেরা রাজনৈতিক সন্ন্যাস ছেড়ে বিজেপি’র ঘরে ফেরা। হাওয়ায় খবর ছিল। তবে, বৃহস্পতিবারই রামপুরহাট কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে রাজ্য নেতৃত্ব তাঁর নাম ঘোষণা করেছে।

রামপুরহাটে দুধকুমারকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপির মিছিল। — নিজস্ব চিত্র

রামপুরহাটে দুধকুমারকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপির মিছিল। — নিজস্ব চিত্র

অর্ঘ্য ঘোষ
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৬ ০২:২৩
Share: Save:

প্রথা ভেঙে উজানে হাঁটলেন নেতা!

লোকে ঘর ছেড়ে সন্ন্যাস নেয়, তিনি এই ভরা ভোটের বাজারে সন্ন্যাস ছেড়ে ঘরে ফিরলেন। তিনি বিজেপি নেতা দুধকুমার মণ্ডল।

তাঁর এ ফেরা রাজনৈতিক সন্ন্যাস ছেড়ে বিজেপি’র ঘরে ফেরা। হাওয়ায় খবর ছিল। তবে, বৃহস্পতিবারই রামপুরহাট কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে রাজ্য নেতৃত্ব তাঁর নাম ঘোষণা করেছে। দৃশ্যতই খুশি দুধকুমারবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দল আমাকে যোগ্য মনে করে ওই সম্মান দেওয়ায় কৃতজ্ঞ।’’ দলের একাংশ অবশ্য দুধকুমারের ওই প্রত্যাবর্তনকে ভালভাবে মেনে নিতে পারছেন। তাঁরা প্রকাশ্যে বিরূপ মন্তব্য না করলেও দলের অন্দরে দুধকুমারকে ‘পদ লোভী’ বলে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই দলীয় নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে রাজনৈতিক সন্ন্যাস নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন দুধকুমারবাবু। এমনকী দলে থাকলে তাঁর কিষেণজির মতো দশা হতো বলেও আশংকা প্রকাশও করেন তিনি। দলে কোনঠাঁসা হয়েই রাজ্য নেতৃত্বের দৃষ্টি আর্কষণ করতেই দুধকুমারবাবু ওই নাটক করেন বলেই সেই সময় মন্তব্য করেছিলেন তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীরা। এ দিনও সেই তাঁদের মুখেই সমালোচনার সুর।

অথচ, একসময় অবশ্য দুধকুমারই ছিলেন এলাকায় দলের অগ্রগন্য নেতা। মূলত তাঁরই নেতৃত্বে ময়ূরেশ্বর এলাকায় বিজেপি’র ভালো সংগঠন গড়ে ওঠে। দুধকুমারবাবু নিজেও দু’বার সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর পঞ্চায়েতের প্রধান এবং ২ বার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে ময়ূরেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতাও করেন। ওই কেন্দ্রের আর এক দাবিদার ছিলেন অর্জুন সাহাও। তিনি ময়ূরেশ্বর ১ নং ব্লকের বাসিন্দা। এমনিতেই অন্যান্য দলের মতোই ১ নং ব্লকের সঙ্গে ২ নং ব্লকের বিধানসভার প্রার্থীপদ, নেতৃত্ব সহ বিভিন্ন বিষয়ে দড়ি টানাটানির লড়াই রয়েছে। তার উপরে ২০১২ সালে অর্জুন সাহাকে সরিয়ে দল দুধকুমারকে জেলা সভাপতি মনোনীত করায় পুরসভা নির্বাচনের মুখে তা আরও বেআব্রু হয়ে পড়ে!

অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুধকুমারকে অন্ধকারে রেখে তার বিরোধী গোষ্ঠীর নেতাদের পুরসভায় প্রার্থী করা হয়। তখন তৎকালীন রাজ্য নেতৃত্ব এবং জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের ভিত্তিতে পুরসভায় টিকিট বিলির অভিযোগ তুলে জেলা সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন। সে সময় তাঁকে পদে ফেরানোর দাবিতে সরব হয়েছিলেন তাঁর অনুগামীরা। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্ব অর্জুন সাহাকেই প্রথমে জেলা আহ্বায়ক এবং জেলা সভাপতি মনোনীত করেন। তখন থেকেই দলে কোনঠাঁসা হয়ে পড়েন দুধকুমার। রাজ্য সভাপতি বদলের পর অবশ্য ছবিটা বদলাতে শুরু করে। দুধকুমারকে স্বমহিমায় ফেরানোর জন্য বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে ছোটাছুটি শুরু করেন অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়রা। তারই জেরে দুধকুমার অনুগামীরা ভেবেছিলেন নতুন জেলা কমিটির সভাপতি করা হবে তাঁকে। কিন্তু সভাপতি দূরের কথা জেলা কমিটিতেই ঠাঁই হয়নি তাঁর। সভাপতি করা হয় রামকৃষ্ণ রায়কে। তখনও ঘনিষ্ট নেতাদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দুধকুমার।

ঘটনা হল, সেই ক্ষোভ প্রশমনের জন্য রাজ্য সভাপতি হিসাবে তাঁর নাম প্রস্তাবিত হয়। কিন্তু রাজ্য কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের পর দেখা যায় সেখানেও ঠাঁই হয়নি দুধকুমারের। তার পরই নিজের বাড়িতে বসে রাজনৈতিক সন্ন্যাসের কথা ঘোষণা করেন তিনি। তার এক অনুগামী জানান, এভাবে বার বার মুখ পোড়ার পর ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া দাদার সামনে আর কোনও পথ খোলা ছিল না। একসময় তৃণমূলেও যোগ দেওয়া কথা ছড়িয়ে পড়ে। দুধকুমারবাবু নিজে স্বপন ঘোষের সঙ্গে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কাজ করার এবং বাড়িতে বাচ্চাদের স্কুল নিয়ে সময় কাটানোর কথা বলেন। সবাই ধরেই নিয়েছিলেন রাজনীতির ময়দানে তাঁকে আর দেখা যাবে না। ধারণাটা বদলে যায় মাস খানেক আগে। ময়ূরেশ্বরে মিটিং করতে একাকী তাঁর বাড়ি যান রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। সেদিনই তিনি জানান, ‘‘দুধদা মর্যদার সঙ্গেই দলের হয়ে কাজ করবেন।’’

সেদিনই বোঝা গিয়েছিল, দলে দুধকুমারের প্রত্যাবর্তন কেবল সময়ের অপেক্ষা মাত্র। সম্প্রতি নিজের প্রচারে এসে দুধকুমারের বাড়ি যান অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ও। এ দিন লকেট বলেন, ‘‘দল দুধদাকে যোগ্য সম্মান দেওয়ায় আমি খুশি। তাঁর হয়ে আমি প্রচারে যাব। উনিও আমার হয়ে প্রচার করবেন।’’ দুধকুমারবাবু রামপুরহাটের প্রার্থী হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় অর্জুন সাহা বলেন, ‘‘রাজ্য নেতৃত্ব দুধদাকে প্রার্থী করেছে, আমার কি’ই বা বলার থাকতে পারে!’’ বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘‘দুধকুমার মণ্ডল প্রার্থী হয়েছেন ভাল কথা। কিন্তু কেন সে দিন তিনি দলীয় নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে সন্ন্যাস নিয়েছিলেন। কেনই বা দলেই ফিরছেন, তা উনিই বলতে পারবেন।’’

জেলায় বিজেপিরই একাংশের এই তির্যক মন্তব্যের জবাবে দুধকুমার বলেন, ‘‘সন্ন্যাসের কথা ঘোষণা করলেও আমি অন্য কোনও দলে যোগ দিইনি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দলের কাজে আমাকে প্রয়োজন মনে করে নির্বাচনে প্রতিন্দ্বিন্দ্বতা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। সেই অনুরোধ ফেলতে পারিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dudh kumar mandal bjp return
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE