অপেক্ষা। দুবরাজপুরের ফব প্রার্থী বিজয় বাগদি। (ডান দিকে) তৃণমূল প্রার্থী নরেশচন্দ্র বাউড়ি। —নিজস্ব চিত্র
খোদ গুরুদেব হালিশহর থেকে বোলপুরের বাড়িতে ছুটে এসেছেন। তাঁকে নিশ্চিন্ত করে বলে গিয়েছেন, ‘বেটা চিন্তার কিছু নেই, সব ভাল হবে।’ স্ত্রী তাপসীদেবী, মেয়ে মোনালিসাও উঠতে বসতে তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, ‘‘কেন এত চিন্তা করছো? এতো খাটলে, এর পরেও কী খারাপ কিছু হয়!’’
তাতে কি চিন্তা যায়?
রাতারাতি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে ৭.৪-এ পৌঁছে গিয়েছে। দুর্বল হয়ে পড়েছে শরীর। উৎকণ্ঠায় রাতে একেবারেই ঘুম আসছে না। মুখে বলছেন পৃথিবীর সবচয়ে অসুখী মানুষের নাম ‘নরেশচন্দ্র বাউড়ি’। হ্যাঁ, এ সব অভিজ্ঞতা— দুবরাজপুর বিধানসভা কেন্দ্রের এ বারের তৃণমূল প্রার্থী নরেশবাবুরই। ভোট মিটে গিয়েছে সেই ১৭ এপ্রিল। কিন্তু, ফল কী হবে, ভেবে ভেবেই এখন এমনই হাল নরেশবাবুর। সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বিলম্বিত ফল প্রকাশের সূচি। নরেশবাবু বলছেন, ‘‘যদি কালই রেজাল্ট বের হতো, এই উৎকণ্ঠা থেকে অন্তত মুক্তি পেতাম!’’
রাজনীতির বিশ্লেষকেরা অবশ্য জানাচ্ছেন, চিন্তা তো হওয়ারই কথা! যে কেন্দ্র থেকে নরেশ এ বার প্রার্থী, সেই কেন্দ্রে যুগ যুগ ধরে জিতে আসছেন বাম প্রার্থীরা। আর যাঁর বিরুদ্ধে লড়াই, ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী বিজয় বাগদি তো এখনও অপরাজেও। তা হলে কী, মোটেও স্বস্তিতে নেই বিজয়বাবুও। খয়রাশোলের চূড়োর গ্রামের বাড়িতে বসেই ভোটের ফল নিয়ে নিজের উৎকণ্ঠার কথা বলছিলেন তিনি। স্বীকার করে নিচ্ছেন, ‘‘এতদিন ধরে লড়ছি, এমন মানসিক অবস্থা কখনও হয়নি। সারারাত চোখের পাতা এক করতে পারছি না। তন্দ্রা এলেও লাফিয়ে উঠছি!’’
চার মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন বিজয়বাবু। স্ত্রী ঠান্ডারানি বরাবরের মতোই স্বামীর পাশে থাকার চেষ্টা করছেন। প্রায়-ই পুজো দিচ্ছেন পাশের মনসা মন্দিরে। আর স্বামীকে কেবলই বলছেন, ‘‘এত ভাবছো কেন, যা হয় হবে।’’ কিন্তু তাতে কি চিঁড়ে ভেজে? বিজয়বাবু বলছেন, ‘‘বাড়িতেই থাকতে পারছি না। তার চেয়ে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এসে গল্প করলে মন ভাল থাকছে।’’
এই টানাপড়েনের মাঝেই ক্রমাগত হিসাব নিকাশ চলেছে দুই প্রার্থীর। কোন বুথে কে এগিয়ে আর কে পিছিয়ে। সব দেখেশুনে হাল ছাড়ার পাত্র নন কেউ-ই। কিন্তু তবু মন মানানো মুশকিল। এখনও এতগুলো দিন! নরেশবাবুর কথায়, ‘‘বিধানসভায় প্রথম লড়লাম ঠিকই, কিন্তু ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করছি। একাধিকবার পুরভোটে লড়েছি। মনে হচ্ছে, বেশ কয়েক হাজার ভোটে জিতব। তবু অস্থিরতা কমার নাম নেই!’’
বোলপুরের আরও এক বাসিন্দা এ বার দুবারজপুর কেন্দ্রে লড়ছেন। তিনি বিশ্বভারতীর অধ্যাপক রামপ্রসাদ দাস। বিজেপি-র এই প্রার্থী অবশ্য কোনও রকম চাপে নেই বলেই মুখে দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মানুষ নির্বিঘ্নে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। আমার থেকে অন্য কেউ ভাল পরীক্ষা দিতেই পারেন। তবে, নিজে খুব ভাল পরীক্ষা দিয়েছি। তাই টেনশনের কোনও কারণ দেখি না।’’
বিজেপি প্রার্থীর এই ‘নির্লিপ্ত’ ভঙ্গিই আরও বেশি ‘টেনশনে’ ফেলেছে নরেশবাবু ও বিজয়বাবুকে। তাঁরা মানছেন, ‘‘বিজেপি ভাল অঙ্কের ভোট পেয়েছে। তাতে কার বেশি ক্ষতি হয়েছে, সেই হিসাব চলছে নিরন্তর।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy