Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

চোখ রাঙাচ্ছে অঙ্ক, ডরাচ্ছেন না উমা

কংগ্রেসের টিকিটে বিধায়ক হয়ে তিনি দল বদলে পেয়েছেন— ‘বিশ্বাসঘাতক’ তকমা। উপরি হিসেবে রয়েছে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও। সামাল দিতে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাড়া কেন্দ্রে একাধিকবার সভা করতে হয়েছে। খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসে তাঁর জন্য ভোটের আবেদন জানিয়েছেন। তবুও তৃণমূলের সেই বিদায়ী বিধায়ক তথা এ বারের প্রার্থী উমাপদ বাউরির ভোটে জেতা নিয়ে অস্বস্তি রয়েই গিয়েছে।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৫২
Share: Save:

কংগ্রেসের টিকিটে বিধায়ক হয়ে তিনি দল বদলে পেয়েছেন— ‘বিশ্বাসঘাতক’ তকমা। উপরি হিসেবে রয়েছে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও। সামাল দিতে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাড়া কেন্দ্রে একাধিকবার সভা করতে হয়েছে। খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসে তাঁর জন্য ভোটের আবেদন জানিয়েছেন। তবুও তৃণমূলের সেই বিদায়ী বিধায়ক তথা এ বারের প্রার্থী উমাপদ বাউরির ভোটে জেতা নিয়ে অস্বস্তি রয়েই গিয়েছে। কারণ লোকসভা ভোটের অঙ্ক। দু’বছর আগের ওই নির্বাচনের ফলের নিরিখে বাম ও কংগ্রেসের সম্মিলিত ভোট তৃণমূলের থেকে অনেক বেশি। তাই তৃণমূল এই কেন্দ্র নিয়ে যতটা দুর্ভাবনায়, ততটাই জয়ের ব্যাপারের নিঃসংশয়ে বিরোধী জোট।

পাড়া একসময়ে বামেদের গড় বলে পরিচিত ছিল। গতবার তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে সামান্য ভোটে জিতেছিলেন পাড়ার তৎকালীন কংগ্রেস প্রার্থী উমাপদবাবু। পরে তিনি দলবদলে তৃণমূলে যোগ দেন। তারপর থেকেই তাঁর উপরে চটে রয়েছে স্থানীয় কংগ্রেসের অনেকেই। এ বার উমাপদবাবুকে তৃণমূল প্রার্থী করেছে। ফলে বামেদের সঙ্গে তাদের জোট হওয়ায় প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ এসেছে বলে মনে করছেন পাড়ার কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা। গ্রামে-গ্রামে সিপিএম কর্মীদের সঙ্গে পা মিলিয়ে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে কংগ্রেস কর্মীদের। সঙ্গে রয়েছেন কংগ্রেসের দাপুটে নেতা বলরাম মাহাতা, রামজান মির্ধারা।

বলরামবাবুর কথায়, ‘‘গত বিধানসভা ভোটে অনেক লড়াই করে সিপিএমের ঘাঁটি পাড়ায় উমাপদবাবুকে জিতেয়েছিল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু কর্মীদের লড়াইকে মর্যাদা না দিয়ে উনি বিশ্বাসঘাতকতা করে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। সিপিএমের সঙ্গে আমাদের নীতিগত তফাৎ থাকলেও উমাপদবাবুকে হারাতেই সিপিএম প্রার্থীর হয়ে ভোটে নেমেছেন কংগ্রেসের কর্মীরা।”

বস্তুত দলত্যাগী বিধায়কের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের নেতাদের এহেন একরোখা মনোভাব কিছুটা হলেও ভোটের লড়াইতে উমাপদবাবুকে সমস্যায় ফেলতে পারে বলে মত স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের। জোটে পাড়ার কংগ্রেসকে সর্বোত ভাবে পাশে পাওয়ায় অনেকটাই বাড়তি সুবিধা পেয়েছে বামেরা। ঘটনাচক্রে পাড়ার সিপিএম নেতৃত্ব প্রথম থেকেই রাজনৈতিক ছুঁতমার্গ এড়িয়ে সরাসির ‘জনগণের জোটের’ পক্ষপাতী। তৃণমূলকে হারাতে একের বিরুদ্ধে একের লড়াইতে বিশ্বাসী পাড়ার সিপিএম নেতারা সাম্প্রতিক অতীতে পঞ্চায়েতের উপনির্বাচন ও স্কুল পরিচালন সমিতির নির্বাচনে জোট করে লড়াই করেছে। এই পরিস্থিতিতে পাড়ায় জেতাটা শুধু সময়ের অপেক্ষা বলে প্রত্যয়ী সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জোটপন্থী নেতা দীননাথ লোধা।

কারও ভরসা জোট। কারও বা স্বয়ং দলনেত্রী।ছবি: নিজস্ব চিত্র

সিপিএম সূত্রে জানা যাচ্ছে, জোট নিয়ে দু’দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যখন আলাপ আলোচনা চলছিল, তখন থেকেই পাড়ায় বাম ও কংগ্রেসের নিচুতলায় নির্বাচনী সমঝোতা শুরু। অনেক আগে থেকেই বুথ স্তরে দু’দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে যৌথ কমিটি গড়ে নির্বাচনের কাজ শুরু করে দিয়েছিল। দীননাথবাবুর কথায়, ‘‘আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ডুবে থাকা তৃণমূলকে উৎখাত করে রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে জনগণই জোট বাঁধতে চাইছিল। দু’দলের শীর্ষনেতারা তাতে শিলমোহর দিয়েছে। পাড়ায় আমরা এগিয়েই রয়েছি। এ বার জোট হওয়ায় পাড়ায় আমাদের প্রার্থী দীননাথ বাউরির জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা।”

বিরোধী জোট কিংবা লোকসভা নির্বাচনের ফলের অঙ্কই শুধু নয়, তৃণমূলের উদ্বেগের অন্যতম কারণ দলের স্থানীয় নেতাদের দ্বন্দ্ব। লোকসভা ভোটের সময় সেই দ্বন্দ্বের জেরেই তৃণমূলের ভোট বাক্সে টান পড়েছিল বলে দলের দাবি। যার জেরে তৃণমূলের রঘুনাথপুর ২ ব্লক সভাপতি বদল করে উমাপদকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিছুটা রাশ টানা গেলেও দ্বন্দ্ব যে একেবারে ঘোচেনি তা মানছেন নিচুতলার কর্মীরাও।

আগে বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতারা একে অন্যের ছায়া মাড়াতেন না। তবে এখন নির্বাচনী প্রচারে কাঁধ মিলিয়ে নামতে দেখা যাচ্ছে তাঁদের। সেই সঙ্গে নির্বাচনের আগে বিজেপির ঘরে ভাঙন ধরিয়ে নেতা-কর্মীদের নিজেদের শিবিরে টেনেছে শাসকদল। সব মিলিয়ে পাড়া ফের ধরে রাখতে সার্বিক লড়াইটা শুরু করেছে তৃণমূল। তৃণমূলেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, লোকসভা ভোটের নিরিখে বামেদের ৩৩.৫৩ শতাংশ ভোটের সঙ্গে কংগ্রেসের ১৩.৬৫ শতাংশ ভোট মিললে যা দাঁড়ায়, তৃণমূল (প্রাপ্ত ভোট ৩২.৯৯) বিজেপির ভোট টানতে (তারা পেয়েছিল ১৩.৩১) পারলে অনেকটাই লড়াইয়ের জায়গায় থাকবে। কারণ এই এলাকায় গত বিধানসভা ভোটে বিজেপি মোটে ৩.২১ শতাংশ ভোট টেনেছিল। তবে লোকসভা আর বিধানসভার নির্বাচনকে এক পংক্তিতে ফেলা যায় না বলে পাল্টা দাবি করছে শাসকদল। উমাপদবাবুর দাবি, ‘‘আমি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরেই পাড়া বিধানসভা এলাকায় কংগ্রেসের সংগঠনে ধ্বস নেমেছে। পাড়ায় কংগ্রেসের গুটিকয় নেতা ছাড়া ওই দলের প্রায় পুরোটাই তৃণমূলে চলে এসেছে। লোকসভার ভোটের হিসেব কষে বিরোধী জোট যাই দাবি করুক, বাস্তবে তার উল্টোটাই ঘটবে।” সেই সঙ্গে বিধায়ক হিসেবে এলাকার উন্নয়নে তিনি যা করেছেন, সেই হিসেবও রাখছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE