স্বস্তি: আর কেউ নেই! তন্নতন্ন করে খোঁজার পরে নালা থেকে উঠে আসছেন উদ্ধারকারীরা। শনিবার রাতে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
দুর্ঘটনার পরে শনিবার সারা রাত সিঁটিয়ে ছিল বাঁকুড়া। রবিবার স্বস্তির খবর শোনালো পুলিশ— জাম্পিং প্যাড দুর্ঘটনায় সমস্ত শিশুকেই উদ্ধার করা গিয়েছে।
গন্ধেশ্বরীর চরে বাঁকুড়া শহরের লক্ষ্যাতড়া মহাশ্মশানে প্রতি বছরের মতো কালীপুজোর মেলা বসেছে। উদ্যোক্তা মহাশ্মশান উন্নয়ন কমিটি। শহরের একটি হাইড্রেন শ্মশানের পাশ দিয়ে গিয়ে গন্ধেশ্বরীতে পড়েছে। জায়গাটা একটা ডোবার চেহারা নিয়েছে। ঠিক পাশেই বসানো হয়েছিল জাম্পিং প্যাডটি।
শনিবার রাত তখন সাড়ে আটটা। মেলা জমজমাট। হঠাৎ জাম্পিং প্যাডটি উল্টে ডোবার মধ্যে গিয়ে পড়ে। তীব্র আর্তনাদে চমকে ওঠে গোটা মেলা। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন যে সমস্ত অভিভাবক, সঙ্গে সঙ্গে নালায় ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। মেলায় উপস্থিত অনেকেও নেমে পড়েন উদ্ধার কাজে। পাশের একটি হোটেল থেকে ছুরি নিয়ে এসে জাম্পিং প্যাড ফুটো করে হাওয়া বের করে ফেলা হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, শহরের বাসিন্দা সন্দীপ সরকার বলেন, ‘‘মেলাতে ঘোরাঘুরি করছিলাম। হাঠাৎ শোরগোল পড়ে যায়, বাচ্চারা নালায় পড়ে গেছে। প্রায় পুরো ভিড়টাই সেখানে হাজির হয়। হাবুডুবু খেতে থাকা বাচ্চাগুলোকে কোনও রকমে উদ্ধার করা হচ্ছিল।’’
বাঁকুড়া সদর থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, মেলার ভিড় সামলাতে প্রতিদিন শ’খানেক পুলিশ কর্মী মোতায়েত থাকতেন। তাঁরাও উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আইসি রাজর্ষি দত্ত বলেন, “দুর্ঘটনা ঘটেছে জেনেই এএসআই রাজীব চৌধুরী, কৃষ্ণকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়রা কোনও নির্দেশের অপেক্ষা না করেই জলে নেমে পড়েন। স্থানীয় কিছু মানুষও পুলিশকে সহযোগিতা করেছে।”
ঠিক কত জন শিশু দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল তা বলতে পারছে না বাঁকুড়া পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, সেই সময়ে জনা কুড়ি শিশু ছিল জাম্পিং প্যাডে। পুলিশ জানাচ্ছে, কমবেশি ১২ জনকে ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। নালাটি অল্প দূরেই গন্ধেশ্বরীতে পড়েছে। ফলে বড় কোনও দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছিল। শনিবার অনেক রাত পর্যন্ত তল্লাশি চালায় পুলিশ। কিন্তু আর কাউকে পাওয়া যায়নি। ওই ঘটনায় আর কেউ নিখোঁজ নেই বলেই রবিবার দাবি করেছে পুলিশ।
কী ভাবে ঘটল দুর্ঘটনা?
জাম্পিং প্যাডের মালিক রাজেশ চন্দ্রের দাবি, নিম্নচাপের বৃষ্টিতে জাম্পিং প্যাডের তলার মাটি আলগা হয়ে গিয়েছিল। ভার সামলাতে না পেরেই প্যাডটি উল্টে যায়। তাঁর দাবি, ওই জাম্পিং প্যাডে ৩৫ জন পর্যন্ত শিশু চড়তে পারে। ফলে বেশি ওজনের তত্ত্ব খারিজ করছেন তিনি। রাজেশ বলেন, “আমি দীর্ঘ দিন ধরে এই পেশায় আছি। কোনও দিন এমনটা হয়নি। অন্য কোথাও হয়েছে বলেও শুনিনি। শিশুদের আনন্দ দিতে গিয়ে এতবড় বিপদ যে হতে পারে, সেটা ভাবনাতেও আসেনি কখনও। সব শিশু সুরক্ষিত আছে এটা জানার পরে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছি।’’
তবে এই ঘটনায় নদীর চরে মেলায় কতটা নিরাপত্তা থাকে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে শহরে। মেলার উদ্যোক্তারাও মানছেন, এই ঘটনা তাঁদের চোখ খুলে দিয়েছে। মেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ তথা বাঁকুড়ার উপ-পুরপ্রধান দিলীপ অগ্রবাল বলেন, “এই দুর্ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি, নদী থেকে দূরে মেলা করলেও মেলা প্রাঙ্গণ আলাদা করে ঘিরে রাখা দরকার। সামনের বার থেকে সেটাই করা হবে।’’ উপস্থিত লোকজনের তৎপরতা যে বড়সড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেছে তাও বলেন তিনি। দিলীপবাবুর কথায়, ‘‘পুলিশ ও উপস্থিত কিছু সাধারণ মানুষ নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিশুদের উদ্ধার করতে ডোবায় নেমে পড়েছিলেন। তাঁদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। ওঁদের জন্যই বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে।”
রবিবার সন্ধ্যায় মেলায় গিয়ে দেখা গেল, প্রচুর ভিড়। জাম্পিং প্যাডটি তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে সবার মুখে মুখে শনিবার রাতের দুর্ঘটনার কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy