আসল নয়, সবই নকল।—নিজস্ব চিত্র।
নকল বিলিতি মদ বানানোর চক্র ধরল বাঁকুড়ার আবগারি দফতর। বৃহস্পতিবার রাতে ওই চক্রে জড়িত সন্দেহে গঙ্গাজলঘাটি থেকে তিন জন এবং বাঁকুড়া সদর থানা এলাকা থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে আবগারি দফতর। জেলা আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে রাহুল সিংহ ও তাঁর বাবা তাপস সিংহ গঙ্গাজলঘাটির ভৈরবপুরের, লক্ষ্মণ নন্দী গঙ্গাজলঘাটির ছোট কুমিরা এলাকার এবং গোপাল বাঙাল সদর থানার জগদল্লা এলাকার বাসিন্দা।
ধৃতদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিলিতি ব্র্যান্ড মদের স্টিকার লাগানো বোতল ও ৩২ লিটার নকল মদ উদ্ধার করেছে আবগারি দফতর। এ ছাড়া, মিলেছে মদ তৈরির উপকরণও। জেলা আবগারি দফতরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট শম্ভু রায় বলেন, “ধৃতেরা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিলিতি মদের বোতল জোগাড় করে তাতে নতুন করে ওই কোম্পানির স্টিকার লাগিয়ে নকল মদ ভরে বিক্রি করত। এই মদ খেলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই চক্রের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কিনা, তা দেখা হচ্ছে।’’
আবগারি দফতরের দাবি, জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছেন, রাহুল ও তাঁর বাবা নিজের বাড়িতে ওই নকল মদ বানাতেন। বিলিতি মদের খালি বোতল জোগাড় করতেন। বিভিন্ন মদের ব্র্যান্ডের নকল স্টিকার ও হলোগ্রামও মজুত ছিল তাঁদের কাছে। নকল মদ বানিয়ে পুরনো বোতলে নতুন করে ভরে নকল স্টিকার ও হলোগ্রাম বোতলে লাগিয়ে দেওয়া হত। লক্ষ্মণ তাঁদের বানানো মদ বিভিন্ন ধাবা ও দোকানে বিক্রি করতেন। বাঁকুড়ার ধলডাঙায় গোপাল বাঙালের একটি ধাবা রয়েছে। ওই ধাবাতেও এই নকল মদ বিক্রি হত। আবগারি দফতরের এক কর্তা জানান, এই কারবারের খবর গোপন সূত্রে পেয়ে প্রথমে লক্ষ্মণকে আটক করে জেরা করতেই তিনি সব ফাঁস করে দেন। বৃহস্পতিবার রাতে ধরপাকড়ে নামে আবগারি দফতর। প্রথমে রাহুলের বাড়িতে অভিযান চলে। সেখানে নকল মদ, মদ তৈরিতে ব্যবহৃত প্রায় ৩০ লিটার স্পিরিট, দুই লিটার ক্যারামেল-সহ বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার হয়। পাশাপাশি প্রায় ৬ হাজার বিভিন্ন বিলিতি মদের ব্র্যান্ডের স্টিকার ও নকল হলোগ্রাম এবং বহু পুরনো মদের খালি বোতল পান আবগারি দফতরের আধিকারিকেরা। উদ্ধার হয়েছে বেশ কয়েক বোতল দিশি মদও। রাহুল ও তাঁর বাবাকে গ্রেফতার করা হয়। রাতেই গ্রেফতার করা হয় গোপালকে।
ঘটনা হল বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায় আগেও নকল বিলিতি মদ বানানো চক্রের হদিস পেয়েছিল আবগারি দফতর। তবে মাঝে বেশ কয়েক বছর এই ধরনের কোনও চক্রের সন্ধান জেলায় মেলেনি। জেলায় চোলাই ও পচাই-এর মতো বেআইনি মদের রমরমা রুখতে পুলিশ ও আবগারি দফতরকে প্রায়ই অভিযান চালাতে দেখা যায়। তবে নতুন করে ফের নকল বিলিতি মদ বানানোর চক্র সামনে আসায় আবগারি দফতরের কর্তারা নড়েচড়ে বসেছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, অনেক সময় নকল মদে উপকরণের মিশেল ঠিকঠাক না হলে তা বিষমদেই পরিণত হয়। চোলাই থেকে তা কম মারাত্মক নয়। বিভিন্ন অবৈধ ধাবা, এমনকী গ্রামগঞ্জের মুদিখানাতেও লুকিয়ে এই নকল বিলিতি মদ বিক্রি করা হয়। অনেক সময়েই ক্রেতারা ঠকে যান। তাঁরা বিলিতি মদের দামেই ওই নকল মদ কেনেন।
তবে, বাজেয়াপ্ত হওয়া নকল মদ বিষাক্ত কিনা, তা এখনই স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি আবগারি কর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, ওই মদ পরীক্ষা করে দেখা হবে। নকল বিলিতি মদ তৈরি রুখতে জেলার বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযানও চলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy