Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলের দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত খণ্ডগ্রাম

বোমাবাজি, মারধর। এক পক্ষের নিশানায় আর এক পক্ষ। শাসকদলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে ফের অশান্ত হল দুবরাজপুরের পদুমা পঞ্চায়েতের খণ্ডগ্রাম। এমনকী, পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে চার জ্যারিকেন তাজা বোমাও উদ্ধার করল পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৭
Share: Save:

বোমাবাজি, মারধর। এক পক্ষের নিশানায় আর এক পক্ষ। শাসকদলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে ফের অশান্ত হল দুবরাজপুরের পদুমা পঞ্চায়েতের খণ্ডগ্রাম। এমনকী, পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে চার জ্যারিকেন তাজা বোমাও উদ্ধার করল পুলিশ।

বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা। উদ্ধার হওয়া বোমাগুলিকে শুক্রবার নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন বিকেল পর্যন্ত কোনও পক্ষই কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। উত্তেজনা থাকায় গ্রামে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। যদিও এ দিন সকালেও একপক্ষ আর এক পক্ষকে মারধর করার অভিযোগ তুলেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে ও পরে এলাকার রাশ গিয়াসউদ্দিন শেখ নামে এক তৃণমূল নেতার দখলে থাকলেও পঞ্চায়েত ভোট-উত্তর সেই রাশ চলে আসে মুকুল শেখ নামে আর এক তৃণমূল নেতার দখলে। গিয়াসকে সরিয়ে অঞ্চল সভাপতির মুকুট মুকুলের মাথায় চাপায় দল। কিন্তু দ্বন্দ্ব থেকেই গিয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অশান্তির মূলে সেই দ্বন্দ্বই। শৌচাগারের জন্য উপভোক্তাদের কাছ থেকে ৯০০ টাকা সংগ্রহ করার রাশ কার হাতে থাকবে— নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য না কি বুথ সভাপতি, ঝামেলার সূত্রপাত সেখান থেকে।

তৃণমূল সূত্রের দাবি, মুকুলের ঠিক করে দেওয়া তৃণমূলের খণ্ডগ্রাম বুথ সভাপতি একিনা বিবিই মূলত দেখছিলেন শৌচাগার কার কার বাড়িতে হবে। নির্বাচিত তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য নারায়ণ গড়াইয়ের আপত্তি ছিল এখানেই। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘একিনা বিবি গ্রামের অনেক গরিব মানুষের বাড়িতে শৌচাগারের টাকা নিতে যাননি। তাঁরা ওঁর হাতে টাকা দিতে রাজি ছিলেন না। মানুষের ভোটে আমি জিতেছি। জনপ্রতিনিধি হয়েছি। তাই শৌচগার যাতে প্রত্যেকের বাড়িতে হয়, তা দেখা আমার কর্তব্য।’’ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেই সব পরিবারে কাছে টাকা সংগ্রহের জন্য বের হতেই অশান্তি শুরু হয় বলে তাঁর দাবি। নারায়ণবাবু আরও বলেন, ‘‘ওদের ক্ষোভের অন্য একটি কারণও ছিল। আমার সঙ্গে এমন কিছু লোকজন ছিল, যাঁরা গিয়াস অনুগামী। কেন আমার সঙ্গে তাঁর লোকজন থাকবে, সেই প্রশ্ন তুলেই বোমাবাজি, মারধর শুরু।’’

শুধু নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যই নয়, এ দিন সকালে গিয়াস অনুগামী নিমাই বাউড়ির বাড়িতে ঢুকে মহিলাদের মারধর করারও অভিযোগ উঠেছে একিনা এবং তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে। যদিও সেই অভিযোগ মানতে চাননি একিনা। তাঁর দাবি, ‘‘শৌচাগারের বিষয়টি আমি দেখছি ঠিকই। কিন্তু গরিব মানুষদের বঞ্চিত করার অভিযোগ ঠিক নয়।’’ তা হলে কীসের অশান্তি? একিনার দাবি, ‘‘অশান্তির মূলে রয়েছে সাত বছর আগে এলাকায় একটি হত্যাকাণ্ডের মামলা আদালতে পুনরায় ওঠা। মির ফিরোজ হোসেন নামে এক তৃণমূল সদস্য ২০১০ সালে খুন হন। সেই ঘটনাটি আদালতে ফের খোলার পর থেকেই শেখ গিয়াসউদ্দিন-সহ আরও পনেরো জন অভিযুক্ত নিহতের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছিল। প্রতিবাদ করায় বোমাবাজি করেছে। এলাকা অশান্ত করার চেষ্টা করেছে গিয়াস বাহিনী।’’ প্রায় একই দাবি শেখ মুকুলেরও। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বর্তমানে বিজেপি-র ছত্রছায়ায় থাকা গিয়াসউদ্দিনরাই অশান্তির মূলে।’’

যদিও গিয়াস দাবি করছেন, তিনি কোনও কালেই বিজেপি করেননি। না কাউকে হুমকি দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যে খুনের কথা বলা হচ্ছে, তা আদালতে বিচরাধীন। তাই আমি নির্দোষ বা দোষী, তা আদলত বলবে। কিন্তু গত রাতের ঘটনার সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই। শৌচাগার রাশ কার হাত থাকবে, সেটা নিয়েই আশান্তি পাকিয়েছে ওরাই।’’

তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিত্র অবশ্য বিষয়টিকে গোষ্ঠী কোন্দল বলতে নারাজ। তিনি বলছেন, ‘‘এটা পারিবারিক বিবাদ। তবে বোমাবাজি হওয়া বা বোমা পাওয়ার বিষয়টি পুলিশ দেখছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Group Clash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE