Advertisement
১১ মে ২০২৪
মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি যুবতীর

দু’দিন আগে থেকেই বাস নেই রাস্তায়

ওই যুবতী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জেলার পরিবহণ ব্যবস্থার অনেক উন্নতি করেছেন। আমাদের নিত্যদিনের ভোগান্তি অনেক কমেছে। কিন্তু এমন কিছু দিনে সমস্যা হয়ে যায়। আমার বিশ্বাস ওঁর কানে এই ধরণের সমস্যার কথা পৌঁছলে উনি ঠিক কিছু একটা করবেন।

আশঙ্কা: গত বছর ২১ জুলাইয়ের এই ছবি কি কাল আবার দেখা যাবে?  ফাইল চিত্র

আশঙ্কা: গত বছর ২১ জুলাইয়ের এই ছবি কি কাল আবার দেখা যাবে? ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৭ ০২:৫৪
Share: Save:

প্রতিবছর ২১ জুলাই সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তির ছবিটা মোটের উপর ধরাবাঁধা। কাল সেই দিন। তার আগেই, বুধবার জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাসের পথ চেয়ে হয়রান হতে হয়েছে বলে যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ। তেমনই এক যাত্রী এ দিন ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লিখেছেন। দিনভর ফেসবুকের ওই পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জেলার অনেক বাসিন্দা। সেখানে পরিবহণের এই ছবিটা নিয়ে ক্ষোভ দেখা গিয়েছে।

ওই যুবতী ফেসবুকে জানিয়েছেন, বুধবার পরীক্ষা দিতে তাঁকে কলকাতা যেতে হয়েছে। বাস না থাকায় তাঁর ভোগান্তির কথা জানিয়ে ওই যুবতীর প্রশ্ন, অচল পরিবহণের জেরে যদি কারও চাকরির পরীক্ষায় না বসা হয়, হাসপাতালে না নিয়ে যাওয়া যায় কোনও রোগীকে, সেই দায় কে নেবে? নিজের পোস্টে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নমূলক কাজকে সমর্থন করে সেটি অরাজনৈতিক বলে স্পষ্ট লিখেছেন ওই যুবতী। সরকারের পক্ষে বা বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া তাঁর পোস্টে না লেখার আবেদনও করেছেন তিনি।

কী সমস্যা হয়েছিল এ দিন?

ফোনে ওই যুবতী জানান, ভোরে গ্রাম থেকে কোতুলপুর যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে জানতে পারেন, প্রথম বাসটিই বাতিল হয়েছে। ঘণ্টা দেড়েক পরে পরের বাস আগে। সেখান থেকে আরামবাগ যাওয়ার একটি বাস ধরেন তিনি। কিন্তু মাঝ পথে ওই বাস থামিয়ে সেটি ২১ তারিখের জন্য নিয়ে নেন কিছু তৃণমূল কর্মী। তাঁদের সমস্যার কথা জানানোর পরেও কোনও লাভ হয়নি। ওই কর্মীরা জানান, তাঁরা যদি বাস ছেড়েও দিন, কিছুটা রাস্তা যাওয়ার পরে অন্য কেউ সেটি আটকে নিয়ে নেবে। ওই যুবতী জানান, এর পরে কর্মীদের থেকে স্থানীয় নেতার ফোন নম্বর নিয়ে তাঁকে ফোন করে সমস্যার কথা বলেন তিনি। তাতেও লাভ হয় না। শেষ পর্যন্ত ছোট গাড়ির শরণ নিতে হয়। অবশ্য আরামবাগ পৌঁছনোর পরে আর সমস্যা হয়নি। সেখান থেকে সরকারি বাস ধরে কলকাতা যান তিনি। কিন্তু সকালের অভিজ্ঞতায় এ দিন আর ফেরার ঝুঁকি নিতে সাহস হয়নি তাঁর।

ওই যুবতী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জেলার পরিবহণ ব্যবস্থার অনেক উন্নতি করেছেন। আমাদের নিত্যদিনের ভোগান্তি অনেক কমেছে। কিন্তু এমন কিছু দিনে সমস্যা হয়ে যায়। আমার বিশ্বাস ওঁর কানে এই ধরণের সমস্যার কথা পৌঁছলে উনি ঠিক কিছু একটা করবেন।

পরিবহণ নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরাও। এ দিন মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর)-কে ইমেল করে বাস তুলে নেওয়া নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা কমিটির সদস্য অনিল পণ্ডিত। তিনি বলেন, ‘‘বিষ্ণুপুর থেকে ইন্দাস হয়ে হিংজুড়ি, বালসি, পাত্রসায়র-সহ বিভিন্ন রুটে রবিবার থেকেই বাস তুলে নেওয়া হয়েছে। পড়ুয়া, ব্যবসায়ী, নিত্যযাত্রী— সবাই নাকাল হচ্ছেন। একটা সভার জন্য এ ভাবে সমস্ত বাস তুলে নেওয়ার প্রতিবাদ করে মহকুমাশাসককে ইমেল করেছি।’’

প্রতি বছর ২১ জুলাইয়ের কয়েক দিন আগে থেকেই জেলার সড়কগুলি সুনসান হয়ে যায়। সভার জন্য বেসরকারি বাস তুলে নেওয়ার হিড়িক পড়ে। হাতে গোনা কিছু সরকারি বাস রাস্তায় নামিয়েই প্রশাসন দায় সারে বলে যাত্রীদের বরাবরের অভিযোগ। ছোট গাড়িতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর বাড়তি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না।

বাঁকুড়া বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার সংগঠনের হাতে থাকা জেলার প্রায় ৪০০ বাসই ২১ জুলাই-এর সমাবেশে যাওয়ার জন্য ভাড়া করা হয়েছে। তার পরেও সমাবেশের জন্য বাসের চাহিদা রয়ে গিয়েছে। বাস নিয়ে কার্যত টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছে বলে খবর। ২১ জুলাইয়ের জন্য এক নেতার বুক করা বাস রাস্তায় অন্য নেতা ধরে ‘হাইজ্যাক’ নিচ্ছেন— এমন নজিরও রয়েছে এই জেলায়। মাঝ রাস্তায় যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে বাস নিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে আগে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে ঠকে শিখে বুধবার থেকেই অনেক বাস রাস্তায় নামেনি বলে জানা গিয়েছে।

বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন থেকেই তারকেশ্বর-কলকাতা রুটের বেশির ভাগ বাস চলেনি। বাইরের জেলার অনেক বাসও এ দিন বাঁকুড়ামুখী হয়নি। এই ঘটনার জেরেই বুধবার জেলার পরিবহণ ব্যবস্থা ধাক্কা খেয়েছে। যার জেরেই ভোগান্তি হয়েছে ওই যুবতীর মতো অনেকের। তবে এই ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন বাঁকুড়া বাস মালিক সমিতির কর্তারা। সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও উত্তর না দিয়েই ফোন কেটে দেন। রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা অবশ্য এ দিন বাস না চলার অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, “বাস চলছে না বলে আমার কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি।”

২১শে জুলাইয়ের ভোগান্তি এড়াতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন? শ্যামলবাবুর মাপা উত্তর, “আমরা আলোচনা চালাচ্ছি।” ওই দিন জেলার পরিবহণ ব্যবস্থা সচল রাখতে প্রশাসনেরই বা ভাবনাচিন্তা কী? বাঁকুড়া জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘অতিরিক্ত সরকারি বাস নামানো হবে।”

তবে কতগুলি সরকারি বাস পথে নামবে আর তাতে ভোগান্তি কতটা মিটবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে জেলার অনেক যাত্রীরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE