Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
রেলগেট ভেঙে লাইনে ট্রেলার, কাঁটাডিতে বেলাইন মালগাড়ি

বগির উপর উঠে গেল বগি, মৃত এক

মালগাড়ির বদলে যদি যাত্রিবাহী ট্রেন চলে আসত, তা হলে কী যে হতো! রেললাইনের উপরে দেশলাই বাক্সের মতো ছড়িয়ে থাকা মালগাড়ির বগিগুলো দেখে আতঙ্কে এমনই বলছিলেন রেলের কর্মীরা। ততক্ষণে মালগাড়িতে ধাক্কায় দুমড়ে যাওয়া ট্রেলারের কেবিন কেটে চালকের মৃতদেহ নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

রেলগেট ভেঙে লাইনে চলে আসা ট্রেলারের সঙ্গে মালগাড়ির সংঘর্ষে বেলাইন হয়ে গেল ১১টি বগি। শনিবার ভোরে পুরুলিয়ার আড়শা থানার কাঁটাডির এই ঘটনায় ট্রেলার চালক মারা যান। আহত হন ট্রেনের চালক-সহ তিনজন। পুরুলিয়া-চাণ্ডিল শাখায় এ দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।

রেলগেট ভেঙে লাইনে চলে আসা ট্রেলারের সঙ্গে মালগাড়ির সংঘর্ষে বেলাইন হয়ে গেল ১১টি বগি। শনিবার ভোরে পুরুলিয়ার আড়শা থানার কাঁটাডির এই ঘটনায় ট্রেলার চালক মারা যান। আহত হন ট্রেনের চালক-সহ তিনজন। পুরুলিয়া-চাণ্ডিল শাখায় এ দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আড়শা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৫ ০০:৪৫
Share: Save:

মালগাড়ির বদলে যদি যাত্রিবাহী ট্রেন চলে আসত, তা হলে কী যে হতো!

রেললাইনের উপরে দেশলাই বাক্সের মতো ছড়িয়ে থাকা মালগাড়ির বগিগুলো দেখে আতঙ্কে এমনই বলছিলেন রেলের কর্মীরা। ততক্ষণে মালগাড়িতে ধাক্কায় দুমড়ে যাওয়া ট্রেলারের কেবিন কেটে চালকের মৃতদেহ নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ট্রেলাকের খালাসিকেও আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়ে গিয়েছে। মালগাড়ির চালক ধনঞ্জয়কুমার দাস ও সহকারী চালক সুবোধ কুমারেরও মাথায় ও চোখে চোট লেগেছে। তাঁদের বোকারোর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এক রেল আধিকারিক বলেই ফেললেন, কপাল ভাল তাই প্যাসেঞ্জার বা এক্সপ্রেস ট্রেনের বদলে মালগাড়ির সঙ্ঘে ট্রেলারের ধাক্কা লেগেছে। না হলে জ্ঞানেশ্বরীর মতো কাণ্ড ঘটে যেত।

শনিবার ভোর প্রায় ৪টে ৪০ নাগাদ এই ভয়ঙ্কর রেল দুর্ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়ার কাঁটাডি লেভেল ক্রসিংয়ে, পুরুলিয়া-জামশেদপুর জাতীয় সড়কের উপর। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে চলে আসেন আদ্রা ডিভিশনের ডিআরএম অনশুল গুপ্ত ও এডিআরএম ভি পি শরাফ ও রেলের আধিকারিকেরা। আসেন জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার ও অন্য পুলিশ কর্তারাও। ডিআরএম বলেন, ‘‘এ দিন ভোরে লেভেল ক্রসিংয়ের গেটবুম ভেঙে একটি পণ্যবাহী ট্রেলার লাইনে চলে আসায় মালগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। মালগাড়িটির ১১টি বগি বেলাইন হয়ে গিয়েছে। এই দুর্ঘটনার জেরে পুরুলিয়া-চাণ্ডিল শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।’’ তিনি জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য রেলকর্মীরা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজে নেমে পড়েছেন। তবে দুর্ঘটনার কারণে জাতীয় সড়কেও এ দিন দিনভর যান চলাচল ব্যাহত হয়। তবে ট্রেলারের চালক ও খালাসির পরিচয় জানা যায়নি। রেলগেট বন্ধ দেখেও চালক গেট ভেঙে কেন লাইন পার হতে চেয়েছিলেন তাও পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়।

উদ্ধারে নেমে পড়েছেন রেলের কর্মীরা। কিন্তু কাজ বেশ কঠিন। চারপাশে ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে ১১টি বগি।

স্থানীয় সূত্রে ও রেলপুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আপ লাইনে পুরুলিয়ার দিক থেকে টাটানগরের দিকে একটি খালি মালগাড়ি আসছিল। তাই কাঁটাডি লেভেল ক্রসিংয়ের গেট বন্ধই ছিল। ওই লেভেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান অশোককুমার কুইরির কথায়, ‘‘হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ শুনি। তাকিয়ে দেখি লেভেল ক্রসিংয়ের গেট ভেঙে লাইনের উপরে একটি ট্রেলার উঠে গিয়েছে। চোখের সামনে দেখি একটা বগির উপর অন্য বগি উঠে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রবল শব্দ।’’ সঙ্গে সঙ্গে তিনি কাঁটাডি স্টেশনে খবর দেন। একেবারে পিছনের বগিতে ছিলেন গার্ড জি কে সিংহ। তাঁর কথায়, ‘‘প্রচণ্ড ঝাঁকুনির সঙ্গে প্রবল জোরে শব্দ পেয়ে আমিও খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি ট্রেনটা থেমে গেল। নেমে দেখে সামনের বগিগুলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে। এগিয়ে গিয়ে দেখি ট্রেলারটা দু’ভাগ হয়ে পড়ে রয়েছে। চারপাশে ধাতব প্লেট ছিটকে পড়ে রয়েছে।’’

ট্রেলারটি ধাতব প্লেট নিয়ে যাচ্ছিল। তদন্তকারীদের মতে, গেটবুম ভেঙে লাইনে উঠে গিয়ে ট্রেলারটি ইঞ্জিনে ধাক্কা মারে। সংঘর্ষের ফলে ট্রেলার থেকে ছোট ছোট ধাতব প্লেট ছিটকে রেললাইনের উপর আছড়ে পড়ে। প্রায় ৭০ কিলোমিটার বেগে ছুটে যাওয়া খালি মালগাড়ির চাকা ওই প্লেটের উপর পড়ে বেলাইন হয়ে যায়। এর ফলে বগিগুলি একে অন্যের উপরে আছড়ে পড়ে। ছিঁড়ে যায় আপ লাইনের ওভারহেডের তার। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই ওই শাখায় সমস্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। আটকে যায় জাতীয় সড়কও।


ছড়িয়ে রয়েছে ট্রেলারে থাকা ধাতব প্লেট।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় জাতীয় সড়কের উপরে লেভেল ক্রসিংয়ের কাছেই লাইনের উপরে আড়াআড়ি ভাবে একটির পর একটি বগি পড়ে রয়েছে। ট্রেলারের চালকের কেবিন ও মালবহনের প্লাটফর্ম আলাদা হয়ে গিয়েছে। লাইনের উপরে ছড়িয়ে রয়েছে ধাতব প্লেট। রেলকর্মীরা উদ্ধার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। কাজের দেখাশোনা করছিলেন রেলের পদস্থ আধিকারিকরা। বেলায় বোকারো ও চক্রধরপুর থেকে দু’টি ক্রেন এনে বগিগুলো সরানোর কাজ শুরু করে।

রেলকর্মীরা জানান, ট্রেলারের কেবিন দুমড়ে গিয়েছিল। কেবিন কেটে ভিতরে আটকে থাকা চালক ও খালাসিকে উদ্ধার করা হয়। হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে, খালাসির মাথা ও দেহের নানা অংশে গভীর চোট রয়েছে। তাঁর জ্ঞান ফেরেনি। এ দিকে মালগাড়ির চালক ও খালাসি দুর্ঘটনার পরে ইঞ্জিনের মধ্যেই ছিটকে পড়ে চোট পান। রেলের একটি বামপন্থী কর্মী সংগঠনের সভাপতি মলয় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘তাঁদের মাথায় ও চোখের কাছে চোট রয়েছে। প্রথমে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে তাঁদের বোকারোয় পাঠানো হয়।

ঘটনার জেরে এ দিন ধানবাদ-টাটানগর এক্সপ্রেস, টাটানগর-দানাপুর এক্সপ্রেস, চক্রধরপুর-গোমো প্যাসেঞ্জার, ঝাড়গ্রাম-পুরুলিয়া প্যাসেঞ্জার, টাটানগর-আসানসোল প্যাসেঞ্জার, টাটানগর-ধানবাদ প্যাসেঞ্জার বাতিল করা হয়। মুরি স্টেশনে থামিয়ে দেওয়া হয় রাঁচি-হাওড়া এক্সপ্রেস, হাটিয়া-টাটানগর প্যাসেঞ্জারকে, আদ্রায় হাওড়া-চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জারকে। সড়ক পথে পুলিশ নেমে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে। পুরুলিয়া মফস্সল থানার টেঙ্গির মোড় থেকেই এই সড়কের সমস্ত যানবাহন বরাবাজারের দিকে ঘুরিয়ে দেয় পুলিশ। ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় টেঙ্গির মোড়ে যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন। ডিআরএম জানান, যত দ্রুত সম্ভব তাঁরা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। তবে দিনভর আমজনতা তো বটেই রেলকর্মীদের মধ্যেও শোনা গিয়েছে, বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া গিয়েছে। পুরুলিয়ার স্টেশন ম্যানেজার অমিতাভ মজুমদার বলেন, ‘‘ভাগ্যিস মালগাড়ির বদলে যাত্রিবাহী ট্রেন ছিল না। তা ছাড়া দুর্ঘটনার পরে পরেই ডাউন লাইনেও কোনও ট্রেন এসে পড়েনি। থামানোর সময় না পাওয়া গেলে সেই ট্রেনও বগির স্তূপে ধাক্কা মারলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে যেত।’’

ছবি: সুজিত মাহাতো

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

train train accident Arsha rail
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE