বাগান: ফুটেছে রজনীগন্ধা। নিজস্ব চিত্র
গন্ধসুধায় ভরে রয়েছে পাঁচিল ঘেরা বাতাস। এক ফালি জমিতে রজনীগন্ধার চাষ করছেন রঘুনাথপুর উপসংশোধনাগারের সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন বন্দিরা।
বন্দি জীবনে মুক্তির দিশা দেওয়ার এই উদ্যোগ যৌথ ভাবে নিয়েছে উদ্যানপালন দফতর ও সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। এর আগে উদ্যানপালন দফতরে সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রঘুনাথপুরের সংশোধনাগারের বন্দিদের নিয়ে পেঁয়াজ, আনারস প্রভৃতি চাষ হয়েছে। উদ্যানপালন দফতরের রঘুনাথপুর মহকুমার আধিকারিক তামসী কোলে জানান, মার্চে রজনীগন্ধার কন্দ আর সার দেওয়া হয়েছিল। সংশোধনাগারের একপ্রান্তে প্রায় পাঁচ কাঠা জমিতে রজনীগন্ধা চাষ করেছেন জনা পঞ্চাশেক বন্দি, জানালেন উপসংশোধনাগারের নিয়ামক তথা জেলার অভিজিৎ বিশ্বাস। বন্দিদের সাহায্য করছেন সংশোধনাগারের কর্মী ও উদ্যানপালন দফতর। কাজকর্ম কেমন চলছে সেই ব্যাপারে নিজে নিয়মিত খোঁজ নেন অভিজিৎবাবু।
তবে গোড়ায় কাজটা খুব একটা সহজ ছিল না। ফুল চাষের অভিজ্ঞতা আগে না থাকায় চিন্তায় ছিলেন সবাই। রুক্ষ মাটি কুপিয়ে নিয়মিত পরিচর্যা করে— সার, জল দিয়ে বাগানের উপযুক্ত করতে যথেষ্ট মেহনত করতে হয়েছে বন্দি ও কর্মীদের। এখন অবশ্য পাঁচ কাঠা জমির পুরোটাই সবুজ। বর্ষায় স্নিগ্ধ সতেজ রজনীগন্ধা ফুটে উঠেছে সেখানে। তামসীদেবী বলেন, ‘‘সংশোধনাগারে চাষ করা ফুলগুলি গন্ধ খুবই ভাল। চত্বরের পরিবেশটাই এখন অন্য রকম লাগছে। ফলন ভাল হয়েছে।’’ এই কাজের প্রশংসা করেছেন মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) দেবময় চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘উদ্যোগটার মধ্যে যথেষ্ট অভিনবত্ব আছে।’’
কিন্তু এই উদ্যোগ কেন?
সংশোধনাগারের কর্মদের একাংশ জানান, উপসংশোধনাগারের নিয়ামক অভিজিৎবাবু বরাবরই নতুন কিছু করতে চান। বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের গঠনমূলক কাজের মধ্য দিয়ে জীবনের দিশা দেখাতে কিছু করার কথা ভেবেছিলেন তিনি। সেই থেকেই মরসুমি ফল চাষ শুরু। তারই ধারাবাহিকতায় সংশোধনাগারের মাটিতে ফুটেছে রজনীগন্ধা। অভিজিৎবাবু জানান, বন্দিরা সাজার মেয়াদ শেষে বাড়ি ফিরে যাতে স্বাবলম্বী হতে পারে, সে কথা ভেবে হাতে কলমে অর্থকরী চাষ শেখানোর কথা ভাবা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘জন্মগত ভাবে কেউ অপরাধী হয় না। পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনেকে অপরাধের রাস্তায় এসে পড়েন। সংশোধনাগারে তাদের মানসিকতা বদলের চেষ্টা করা হয়। আমরা সেই চেষ্টাই করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy