জার্মানিতে রবীন্দ্রনাথ।
জীবনে তিন বার জার্মানি সফরে গিয়েছেন। সেই তিন বারে মোট ১৩টি গান রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তারই মধ্যে ১২টি গানের পাণ্ডুলিপির প্রতিলিপির প্রদর্শনী হতে চলেছে বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রসঙ্গীত গবেষণা কেন্দ্র ‘রবিবিতান’-এ। আজ, মঙ্গলবার রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে জার্মানির সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে একটি বিশেষ প্রদর্শনী ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ওই কেন্দ্র। অনুষ্ঠানে এ নিয়ে বক্তব্য রাখবেন জার্মানির বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক মার্টিন কেম্পচেন।
১৯২১, ১৯২৬, ও ১৯৩০ সালে জার্মানি সফর করেছেন রবীন্দ্রনাথ। ওই দেশে তাঁর গুণমুগ্ধের সংখ্যা প্রচুর। বিশেষজ্ঞেরা জানান, ১৯২১ সালে প্রথম বার জার্মানি সফরে গিয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। তখন সদ্য প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে অপমানজনক হার দেখেছে জার্মানি। ‘ভার্সাইল’ চুক্তির ভারে বিপর্যস্ত জার্মানি, এমন কারও অপেক্ষায় ছিল, যিনি সে দেশের আত্মমর্যাদাবোধের পুনর্গঠন করে নতুন করে জীবনের মানে খুঁজতে শেখায়। জার্মানিতে প্রথম সফরে আসার আগেই রবীন্দ্রনাথ সে দেশের সঙ্কটের মুহূর্তে সাধারণ নাগরিকদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন। তিনি তাঁদের মনোবল বাড়াতে আসছেন বলেও জানিয়েছিলেন। তাই মাসখানেক ধরে রবীন্দ্রনাথ যখন জার্মানির এক শহর থেকে আর এক শহরে সভা করে বেড়াচ্ছেন, প্রতিটি হল মন্ত্রমুগ্ধ জার্মানদের ভিড়ে ঠাসা থাকত। সে বছরই হামবোল্ডট বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া বিখ্যাত ‘দ্য মেসেজ অফ দ্য ফরেস্ট’ শিরোনামের বক্তৃতার বেশ কিছু অংশ দু’দিন পরে বার্লিনের এসপ্লানেড হোটেলে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের স্বকণ্ঠে রেকর্ড করে রেখেছিল জার্মানরা। ১৯৩০ সালের সফরে তিনি তাঁর আঁকা বেশ কিছু ছবির প্রদর্শনীও সেখানে করেছিলেন।
রবিবিতান কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় জানান, তিন বারের সফরে রবীন্দ্রনাথ ‘মধুর, তোমার শেষ যে না পাই’, ‘রয় যে কাঙাল’, ‘কার চোখের চাওয়ার হাওয়াই’-এর মতো মোট ১৩টি গান রচনা করেছিলেন। ইন্দিরাদেবী বলেন, ‘‘তার মধ্যে একটি গানের পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় না। বাকি ১২টি গানের পান্ডুলিপি এবং জার্মানিতে প্রদর্শিত গুরুদেবের আঁকা ছবিগুলির কয়েকটির প্রতিলিপি প্রদর্শিত হবে।’’ এ ছাড়াও রবীন্দ্র গবেষক উইলিয়াম রাদিচে সম্প্রতি ‘গীতাঞ্জলি’র কিছু গান নিয়ে ইংরেজিতে একটি গ্রন্থ লিখেছেন। সেই গ্রন্থটি এবং ওই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন প্রবীণ আশ্রমিক তথা পাঠভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সুপ্রিয় ঠাকুর। রাদিচের বইটির সম্পাদনা করেছেন মার্টিন কেম্পচেন।
অনুষ্ঠানে পাঠ করা হবে সাহিত্যিক অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কিত ‘শরণার্থীর ঋতু ও শিল্পভাবনা’ গ্রন্থের কিছু অংশ। ইন্দিরাদেবী জানান, জার্মানিতে থাকা অলোকরঞ্জনবাবু বর্তমানে কলকাতায় এসেছেন। তিনি-ই তাঁর গ্রন্থ থেকে ওই অংশগুলি নির্বাচিত করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy