পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নবীন। নিজস্ব চিত্র
বাপ-মা মরা ছেলেকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল জেঠতুতো দাদা-বৌদির বিরুদ্ধে। অন্য এক গ্রামবাসীর বাড়িতে ঠাঁই পাওয়া সেই কিশোরকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করল চাইল্ড লাইন। পুরুলিয়ার বরাবাজারের ভাগাবাঁধ পঞ্চায়েতের চিরুডি গ্রামের ঘটনা। যদিও মারধরের অভিযোগ মানতে চাননি অভিযুক্ত দম্পতি।
বছর তেরোর ওই কিশোর নবীন মাহাতোকে সোমবার দুপুরে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই কিশোরের শরীরের নানা জায়গায় চোট রয়েছে। এ দিন তার হাতের এক্স-রে করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার পায়ের এক্স-রে করা হবে। চাইল্ড লাইনের জেলা কো-অর্ডিনেটর দীপঙ্কর সরকার বলেন, ‘‘ওই কিশোরকে কেন মারধর করে বাড়িছাড়া করা হয়েছে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
নবীন ছেলেবেলাতেই তার বাবা-মাকে হারায়। স্থানীয় বামু সাধু স্কুলের অষ্টম শ্রেণির এই পড়ুয়া নিঃসন্তান মেজ জেঠু রমানাথ মাহাতোর কাছে খাওয়াদাওয়া করত। ওই বাড়িতেই থাকে বড় জেঠুর ছেলে সুধীর ও তাঁর স্ত্রী। নবীন জানিয়েছে, তার বাবা-মা মারা যাওয়ার পরে মামারবাড়িতেই সে ছিল। বছর তিনেক আগে বাড়ি ফেরে। তার অভিযোগ, ‘‘বড় জেঠার ছেলে আমার বাবার ভাগের জমিতে চাষাবাদ করে। সেই জমি ছাড়েনি। আমি বাবা-মায়ের ঘরে থাকতাম। সেই ঘর থেকেও তাড়ানোর চেষ্টা করত। নানা অজুহাতে সে আমাকে প্রায়ই মারধর করত।’’
রবিবার কী ঘটেছে? চাইল্ড লাইনের সদস্য অশোক মাহাতো ও ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতো নবীনের কাছে তার উপরে অত্যাচারের কথা শোনেন। তাঁরা জানিয়েছেন, রবিবার দুপুরে সে স্নান সেরে ফিরে দেখে ওই ঘরে জেঠতুতো দাদা সুধীর কাঠের টুকরো জড়ো করে রেখেছেন। এমনই অবস্থা যে নবীনের কথায় ওই ঘরে শোওয়া-বসার জায়গাও ছিল না। সেখানে কেন কাঠ জমা করা হয়েছে, নবীন জানতে চাইতেই সুধীর চ্যালা কাঠ তুলে তাকে বেদম মারতে থাকে বলে অভিযোগ। সুধীরের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীও মারধরে হাত লাগান বলে অভিযোগ। তারপরে কাঁদতে কাঁদতে সে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।
নবীনের মেজ জেঠু এ দিন বলেন, ‘‘ওই সময়ে আমি জমিতে কাজ করতে গিয়েছিলাম। ফিরে শুনি দাদার ছেলে নবীনকে মেরে বের করে দিয়েছে। আমার স্ত্রী ওদের আটকাতে গিয়েছিল, কিন্তু ওরা তাঁকে পাত্তা দেয়নি।’’ যদিও সুধীরের দাবি, ‘‘নবীনকে আমরা মারধর করিনি। সে নিজেই কেন ঘর ছেড়ে চলে গিয়েছে জানি না।’’
কাঁদতে কাঁদতে ভরদুপুরে অভুক্ত নবীন বাড়ি থেকে দু’কিলোমিটার দূরে বামু সাধু আশ্রম মোড়ে চলে যায়। সেখানেই তাঁকে দেখে ওই এলাকার বাসিন্দা টুহুলাল মাহাতো নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খেতে থাকতে দেন। টুহুলালের কথায়, ‘‘জমি থেকে ফেরার পথে দেখি রাস্তায় দাঁড়িয়ে বছর তেরোর এক বালক কাঁদছে। কেমন মায়া হল। বাড়িতে নিয়ে এসে খাবার ও শোবার জায়গা করে দিই।’’
ওই এলাকার কিছু বাসিন্দা জানান, নবীনের শরীরের হাল দেখে তাঁরা ওকে বিকেলে বরাবাজার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করান। চোটের ফলে হাত-পা ফোলা দেখে চিকিৎসক এক্স-রে করাতে বলেছিলেন।
ভাগাবাঁধ গ্রামের বাসিন্দা ব্লক কংগ্রেস সভাপতি ভগীরথ মাহাতো বলেন, ‘‘রবিবার বিকেলে খবর পাই, এক কিশোরকে মেরে ঘরছাড়া করা হয়েছে। তখন ছেলেটির কোনও হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই সঙ্গে সঙ্গে পুরুলিয়ায় চাইল্ড লাইনকে খবর দিই।’’
তবে চাইল্ড লাইনের সদস্যেরা জানাচ্ছেন, স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের কাছে অভিযোগ করছেন, মদ ব্যবসায়ী সুধীর মাঝে মধ্যেই নবীনকে মারধর করেন। আসলে সুধীর যে কোনও ভাবে নবীনকে হটিয়ে দিয়ে সমস্ত সম্পত্তির মালিক হওয়ার মতলব করেছেন। এ অভিযোগও মানতে চাননি সুধীর।
হাসপাতাল থেকে অভিযোগ পেয়ে পুরুলিয়া সদর থানা বরাবাজার থানাকে ঘটনাটি জানিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ জমা পড়লেই তদন্ত শুরু করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy