Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
মৃত্যুতে উঠে আসছে প্রশ্ন

শৌচালয় নেই খোদ পুরমাতার

এলাকায় প্রায় পঞ্চাশটি পরিবারের বাস। কিন্তু কোনওটিতেই নেই শৌচালয়। কেন? খোঁজ নিতে গিয়ে সেই উত্তর মিলল না বটে, কিন্তু জানা গেল খোদ এলাকার কাউন্সিলরের বাড়িতেও শৌচালয় নেই।

শুভ্র মিত্র
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৭ ১২:৫৪
Share: Save:

এলাকায় প্রায় পঞ্চাশটি পরিবারের বাস। কিন্তু কোনওটিতেই নেই শৌচালয়। কেন? খোঁজ নিতে গিয়ে সেই উত্তর মিলল না বটে, কিন্তু জানা গেল খোদ এলাকার কাউন্সিলরের বাড়িতেও শৌচালয় নেই।

রবিবার বিষ্ণুপুর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাটনধার এলাকায় টিভি কেব্‌ল ধরে রাখা ধাতব তার বিদ্যুতের তারে ঠেকে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় রাহুল বাউড়ি নামে বছর দশেকের এক বালকের। কাটানধারে মামার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল রাহুল। ওই দিন সকালে শৌচ করতে পাড়ার মাঠে যাচ্ছিল সে। সেই সময়েই ধাতব তার থেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। ওই ঘটনার পর থেকে স্থানীয় বাসিন্দা অজিত ক্ষেত্রপাল, বুলু বাউড়িরা আক্ষেপ করে বলছেন, ‘‘বাড়িতে একটা শৌচালয় থাকলে হয়তো বেঘোরে মরত না ছেলেটা।’’

বিষ্ণুপুর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ওই এলাকায় প্রায় পঞ্চাশটি পরিবার বসবাস করে। এলাকার বাসিন্দারা মূলত দিন মজুরি করেই সংসার চালান। এক সময়ে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কেবল টিভি ছিল। কিন্তু সেট টপ বক্স বাধ্যতামূলক হওয়ার পরে সেই খরচ আর টানতে পারেননি অনেকেই। বাসিন্দারা জানান, এখন গোটা পাঁচ-ছয় বাড়িতে কেব্‌ল সংযোগ রয়েছে। কিন্তু পুরনো সংযোগের কেব্‌লগুলি এখনও বিদ্যুতের খুঁটি দিয়ে টানা রয়ে গিয়েছে। সেই কেব্‌ল ধরে রাখা একটি গ্যালভানাইজড লোহার তার ছিঁড়ে উপরের বিদ্যুতের তারে ঠেকে গিয়েছিল। রবিবার সেটি গায়ে ঠেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় রাহুলের।

এখনও কেন পুর-এলাকার মধ্যেই একটি পাড়া নির্মল হতে পারল না?

বিষ্ণুপুর পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর তৃণমূলের রাখি ক্ষেত্রপাল। তাঁর আগে দু’দফায় ওই ওয়ার্ডে বিরোধী দলের কাউন্সিলররা ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা অজিত ক্ষেত্রপাল, মন্দিরা ক্ষেত্রপালদের অভিযোগ, বাম কাউন্সিলরদের আমলে শৌচালয় তৈরির জন্য গ্রামের অনেকের থেকে এক হাজার টাকা করে জমা নেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, টাকা নেওয়ার পরে শৌচালয় হয়নি। জমা দেওয়া টাকা ফেরতও পাওয়া যায়নি। ১ নম্বর ওয়ার্ডে ২০০৫ থেকে ২০১০ পর্যন্ত কাউন্সিলর ছিলেন সিপিএমের অন্তু ঘোষ। ২০১০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত কাউন্সিলর ছিলেন সিপিএমেরই পূনম দাস। তাঁরাও একই অভিযোগ করেছেন। অন্তু বলেন, ‘‘আমার আমলে পুরসভা সার্ভে করেছিল। টাকাও নিয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’’

স্থানীয় বাসিন্দা কল্যাণ দাস, চন্দনা ক্ষেত্রপালদের দাবি, এলাকার কোনও বাড়িতেই শৌচালয় নেই। তাঁরা বলেন, ‘‘বাইরে থেকে আত্মীয়রা এলে খুবই লজ্জায় পড়ি। এখন নির্মল বাংলা নিয়ে এত প্রচার হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এলাকায় কিছুই হল না।’’

রবিবার রাহুলের মৃত্যুর পরে এলাকায় যাওয়া হলে বেশ কিছু কিশোরী এবং তরুণীও শৌচালয় না থাকায় তাদের সমস্যার কথা আলাদা ভাবে জানায়। কোতুলপুরের লাবণ্য ক্ষেত্রপালের বাপের বাড়ি কাটানধারের নামোপাড়ায়। সম্প্রতি বাপের বাড়ি এসেছেন তিনি। লাবণ্য বলেন, ‘‘কোতুলপুরেও বাড়িতে বাড়িতে এখন শৌচালয়। কিন্তু বিষ্ণুপুর শহরের এই অবস্থা।’’

এই বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে রবিবার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের রাখি ক্ষেত্রপালের বাড়িতে গেলে তিনি জানান, তাঁর বাড়িতেও শৌচালয় নেই। কিন্তু কেন? আর কোনও উত্তর দিতে চাননি তিনি।

শৌচালয় না থাকার বিষয়টি মেনে নিয়েছেন বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘ক্ষোভ স্বাভাবিক। ওই এলাকার একটি বাড়িতেও শৌচালয় নেই। ‘আমার বাড়ি’ প্রকল্পে ওই এলাকার বাসিন্দাদের শৌচালয়-সহ বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হবে।’’ তাঁর দাবি, ছ’ মাস আগে সমীক্ষা করা হয়েছে। শহর জুড়ে পাঁচ হাজার শৌচালয় তৈরির প্রকল্পের অনুমোদনও মিলেছে। সেই টাকা এলেই কাজ শুরু করে দেওয়া হবে।

সমীক্ষা করে ওই এলাকার বাসিন্দাদের থেকে শৌচালয় তৈরির জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন বিষ্ণুপুরের দীর্ঘ দিনের পুরপ্রধান শ্যামবাবু। তিনি বলেন, ‘‘১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলররা মিথ্যা অভিযোগ করছেন। বরং এলাকায় যে শৌচালয় নেই, সে কথা তাঁরা আমাকে বা পুরসভাকে জানাননি।’’

আর বর্তমান তৃণমূল কাউন্সিলরের বাড়িতেই শৌচালয় নেই কেন?

শ্যামবাবুর উত্তর, ‘‘ওই এলাকার কারও বাড়িতেই শৌচালয় নেই। কাউন্সিলরের বাড়িতে শৌচালয় তৈরি করে দেওয়া হলে রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে যেত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Toilet Bishnupur Katandhar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE