সামান্য ঝড়বৃষ্টিতেই অবধারিত ভাবে বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয় এলাকা। আর এক বার বিদ্যুৎ গেলে পরিষেবা স্বাভাবিক হতে লেগে যায় বহু দিন। সেই ক্ষোভে বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগের কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর, কর্মী ও ঠিকাদারকে মারধর করলেন এলাকাবাসী। রবিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগের খয়রাশোল সাবস্টেশনে।
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, খয়রাশোলের লোকপুরের নওপাড়া থেকে বেশ কিছু লোক এসে রবিবার রাতে চড়াও হয়। বিদ্যুৎ দফতরের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার স্নেহাশিস সিংহ বলেন, ‘‘ঘটনাটি নিন্দনীয়। সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, সম্পত্তি নষ্ট এবং কর্মীদের মারধরের ঘটনায় মোট ন’জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে।’’
মারধর বা সম্পত্তি নষ্টকে সমর্থন না করলেও বিদ্যুৎ দফতরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ হাওয়ার পর্যাপ্ত কারণ রয়েছে বলে মনে করেন এলাকার অনেকেই। রবিবারের ঘটনার পিছনেও বিদ্যুৎ দফতরের গাফিলতিকে দায়ী করছেন সকলে। এমনকী কাঁকরতলা, খয়রাশোল এবং লোকপুর থানার পুলিশ কর্মীদের একাংশও সেটা মানছেন।
রবিবার ছিল রথ। ইদের ঠিক আগের দিনও। এমন উৎসবের মরসুমে বিকেল পাঁচটা থেকেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল খয়রাশোলের বিস্তীর্ণ এলাকা। কখন বিদ্যুৎ আসবে, আদৌ আসবে কি না— সে উত্তর পেতে দফতরে ফোন করেও সাড়া মেলেনি। এ ভাবে ঘণ্টাতিনেক কাটার পরই ধৈর্য্যচ্যুতি হয়। হামলা হয় সাবস্টেশনে। দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, খয়রাশোলের মোট দুটি সাবস্টেশনের আওতায় রয়েছে মোট চারটি ফিডার। বাবুইজোড়, লোকপুর, খয়রাশোল এবং ভীমগড়। শতাধিক গ্রাম রয়েছে। রবিবার বিকেলের বৃষ্টিতে খয়রাশোল সাবস্টেশনের বাবুইজোড় ও লোকপুর ফিডার বসে যায়। দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, তারই ফলেই সমস্যা।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের কথায়, সাবস্টেশনে ঢুকে কোনও কথা না শুনেই ঠিকাদার সাধন ঘোষ এবং উত্তম রায় নামে এক বিদ্যুত কর্মীকে বেধড়ক মারধর করে বিক্ষোভকারীরা। ভাঙচুর করা হয় চেয়ার, টেবিল। খয়রাশোল ব্লকের বাসিন্দাদের পাল্টা দাবি, ব্লকের বিদ্যুৎ পরিষেবা খারাপ। একবার সমস্যা হলে সেটা মেটাতেই অনেক সময় লাগিয়ে দেয় দফতর। মুষ্টিমেয় দু’এক জন ঠিকাদারকে লাগিয়ে কাজ সারে দফতর। প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে একাধিক জায়গায় সমান ভাবে কাজ তুলতে সমস্যা হয়। কখনও গাড়ির অভাবে, কখনওবা লোকের অভাবেও এমনটা ঘটে।
ক্ষোভ রয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি বসানো নিয়েও। একবার ঝড়বৃষ্টি হলেই কোনও না কোনও খুঁটি পড়ে যায়। ব্লকজুড়ে অনেক জায়গায় হাইটেনশন লাইনের উপরে রয়েছে গাছের ডাল। সেগুলিকেও গরম কিংবা বর্ষার আগে কেটে দেওয়ার কোনও উদ্যোগ নেই। দফতরের গাফিলতির অভিযোগ উড়িয়ে স্থানীয়দের অসহযোগিতাকেই দায়ী করছেন খয়রাশোল সাবস্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার শৌভিক মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘রমজান মাসে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরা কী করতে পারি?’’ তাঁরা দায়ী করছেন, দেদার বিদ্যুৎ চুরি, হাইটেনশন লাইনের উপরে ঝুঁকে থাকা গাছ কাটতে না দেওয়া, কথায় কথায় চড়াও হওয়াকেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy