রূপান্তর: ডোবা বদলে গিয়েছে পুকুরে। জয়পুরের রাজগঞ্জে শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।
মোটা টাকা হাতে পেয়ে অনেকেই চেয়েছিলেন ভাগ করে নিতে। টানাটানির সংসারে ওই টাকার প্রয়োজনীয়তা কম নয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জঙ্গল বাঁচানোর প্রাপ্ত টাকায় মাটি কাটার মেশিন নামিয়ে আর নিজেরা পরিশ্রম করে গ্রামবাসী একটা ডোবাকে বদলে ফেলেছেন আস্ত পুকুরে। বাঁকুড়ার জয়পুর বিটের রাজগঞ্জ গ্রামের ডোবা সদৃশ বনপুকুরের নাম এ বার সার্থক হল।
শুক্রবার সেই পুকুর পুজো করে সেখানেই পাত পেড়ে খেলেন রাজগঞ্জের ১১০টি পরিবার। তার আগে এলাকায় বাদ্যি বাজিয়ে শোভাযাত্রা বের করেন তাঁরা। বাস্তবিক খুশি হওয়ার মতোই ঘটনা তাঁদের এই পুকুর প্রাপ্তি। এতদিন শালজঙ্গলে ঘেরা এই গ্রামের মানুষদের ভরসা বলতে ছিল পঞ্চায়েতের দেওয়া একটি টিউবওয়েল। কিন্তু গ্রামে ডোবা থাকলেও বেশির ভাগ সময়ে সেই কাদা-জল ব্যবহারের উপযুক্ত ছিল না।
একসময়ে এই গ্রামের যাঁরা পেট চালাতে জঙ্গলের গাছপালা নির্বিচারে কাটতেন, ১৯৯০ সালে বন দফতরের ডাকে তাঁরাই কুড়ুল ফেলে জঙ্গল বাঁচাতে তৈরি করেছিলেন রাজগঞ্জ বনসুরক্ষা কমিটি। ১০ জনকে নিয়ে গড়ে তোলা সেই কমিটির সদস্য এখন ৮০ জন। কমিটির প্রবীণ সদস্য মধু লোহার, গৌর লোহার, নিরঞ্জন লোহার বলেন, ‘‘রাত-ভোর পাহারা দিয়ে ২৩০ হেক্টর শাল জঙ্গল দুষ্কৃতীদের হাত থেকে জঙ্গল বাঁচিয়ে রেখেছি। যখনই সমস্যাই পড়েছি জঙ্গল বাঁচাতে ডেকেছি বিটবাবু দুর্গাশঙ্কর দাসকে। তিনি দৌড়ে এসেছেন।’’
সে জন্য বন দফতর নিয়ম করে গাছ কাটার পরে বিক্রির একটা লভ্যাংশ বন সুরক্ষা কমিটিকে দেয়। অন্যান্য বছর টাকার পরিমাণ কম হওয়ায় কমিটির সদস্যেরা নিজেরা ভাগাভাগি করে নিতেন। কিন্তু গত বছর বন সুরক্ষা কমিটির হাতে আসে চ লক্ষ সাতান্ন হাজার সাতশো একুশ টাকা।
শান্তনু লোহার, বিকাশ লোহাররা জানান, অত টাকা দেখে অনেকেই ভাগ করে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আবার অনেক সদস্যই প্রস্তাব দেন, ওই টাকায় বনপুকুরের ডোবা সংস্কার করলে কেমন হয়? তা হলে স্নান করা থেকে জমিতে সেচের সুবিধা হবে ভেবে সবাই মত দেন। এরপর গত তিন মাস ধরে তাঁরা ডোবার মাটি কেটে ২০০ মিটার লম্বা ও ১০০ মিটার চওড়া এবং ৪০ ফুট গভীর একটি পুকুর খুঁড়ে পেলেন। যেখানে শক্ত মাটিতে তাঁদের কোদাল-গাঁইতি কাজে লাগেনি, সেই মাটি কাটতে তাঁরা প্রাপ্ত টাকায় মেশিন নামিয়েছেন। পুকুরে যাওয়ার রাস্তাও তৈরি করেছেন। ভবিষ্যতের বন সুরক্ষা কমিটির টাকা থেকে পুকুরপাড়ে গ্রামের মহিলাদের জন্য শৌচাগার বানানোর ভাবনাও আছে তাঁদের।
এ দিন গ্রামবাসী জানান, আর জল কষ্ট রইল না গ্রামে। পুকুরের জল যেমন সবার কাজে লাগবে, তেমনই জঙ্গলের পশু-পাখির তৃষ্ণাও মিটবে।
বিষ্ণুপুর পাঞ্চেতের ডিএফও নিলরতন পান্ডা বলেন, ‘‘জয়পুর রেঞ্জের অন্য ১৫টি বন সুরক্ষা কমিটি কিছু না কিছু সামাজিক কাজ করেছেন। তবে রাজগঞ্জ বন সুরক্ষা কমিটি দেখার মতো একটা কাজ করল। এই ঐক্যবদ্ধ কাজ অন্য বন সুরক্ষা কমিটিগুলির কাছে নিদর্শন হয়ে থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy