Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
পুরুলিয়াতেই দাহ ৪ জনের

মৃত্যুর খবরে অসুস্থ স্ত্রীও

মন্দারমণির বাড়ি থেকে গাড়ি চালিয়ে বিমা সংস্থার এজেন্ট বিশ্বনাথবাবু মেয়ে, মা ও পরিচারিকাকে নিয়ে মঙ্গলবার পুরুলিয়ার জীবনানন্দ সরণির ভাড়া বাড়িতে ফিরছিলেন। দুপুরে পুরুলিয়া মফস্‌সল থানার বিড়গিড়ি গ্রামের অদূরে, পুরুলিয়া-বাঁকুড়া (৬০-এ) জাতীয় সড়ক থেকে কিছুটা পাশে নেমে গিয়ে তাঁর গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের পিছনে সজোরে ধাক্কা মেরে দুমড়ে মুচড়ে যায়। সেখানেই মারা যান বিশ্বনাথবাবু, তাঁর মেয়ে ও মা। পরে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে মৃত্যু হয় ঊষারানির।

শোকার্ত: হাসপাতালের মর্গের বাইরে শ্রাবণী পাল। নিজস্ব চিত্র।

শোকার্ত: হাসপাতালের মর্গের বাইরে শ্রাবণী পাল। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৭ ০২:০৮
Share: Save:

স্বামী, মেয়ে, শাশুড়ি দুর্ঘটনায় চোট পেয়েছেন শুনেছিলেন। হয়তো বেঁচে যাবে, এই আশা নিয়েই কলকাতা থেকে মঙ্গলবার রাতে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানে এসে সত্যিটা জানার পরে আর নিজেকে সামলাতে পারেননি কলকাতার এনআরএস হাসপাতালের নার্স শ্রাবণী সাও। স্বামী বিশ্বনাথ সাও (৪২), মেয়ে দেবদত্তা সাও (১৪), ও শাশুড়ি অঞ্জলি সাও (৬৬) এবং পরিচারিকা ঊষারানি মণ্ডল (১৯) গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন শুনে সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়েন শ্রাবণীদেবী। বারবার অচৈতন্য হয়ে পড়েন। শেষে তাঁকেও হাসপাতালের ফিমেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি করতে হয়।

মন্দারমণির বাড়ি থেকে গাড়ি চালিয়ে বিমা সংস্থার এজেন্ট বিশ্বনাথবাবু মেয়ে, মা ও পরিচারিকাকে নিয়ে মঙ্গলবার পুরুলিয়ার জীবনানন্দ সরণির ভাড়া বাড়িতে ফিরছিলেন। দুপুরে পুরুলিয়া মফস্‌সল থানার বিড়গিড়ি গ্রামের অদূরে, পুরুলিয়া-বাঁকুড়া (৬০-এ) জাতীয় সড়ক থেকে কিছুটা পাশে নেমে গিয়ে তাঁর গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের পিছনে সজোরে ধাক্কা মেরে দুমড়ে মুচড়ে যায়। সেখানেই মারা যান বিশ্বনাথবাবু, তাঁর মেয়ে ও মা। পরে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে মৃত্যু হয় ঊষারানির।

বুধবার দুপুরে সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের পরে দেহগুলি বের করা হয়। তখন ওয়ার্ড থেকে শ্রাবণীদেবীকে সেখানে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর ভাই শঙ্কর পাত্র। স্বামীর দেহ আঁকড়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন শ্রাবণীদেবী। আক্ষেপ করতে থাকেন, ‘‘আমি বলেছিলাম গাড়ি নিও না। শুনলে না।’’ শববাহী গাড়িতে মেয়ের দেহ তুলতে দেখার পরে তাঁকে আর সামলানো যায়নি। স্বামীর পরে মেয়ের দেহ যখন তোলা হচ্ছে আর রাখা গেল না শ্রাবণী দেবীকে. মেয়ের দেহ ধরে ধরে মাথা ঠুকে চিৎকার করতে থাকেন— ‘‘বাবি আমাকে ছেড়ে যাস না। মাকে ছেড়ে যেতে নেই রে।’’ দিদিকে সামলাতে শঙ্করবাবুর হিমশিম অবস্থা। পাশে এসে দাঁড়ান বিশ্বনাথবাবুর সহকর্মীরা।

শঙ্করবাবু বলেন, ‘‘দিদির কাছেই শুনেছি, বিশ্বনাথবাবু গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে তাঁকে ফোন না করে দুর্ঘটনার আধ ঘণ্টা আগে সে পরিচারিকার মোবাইলে ফোন করেছিল। সবাই কেমন আছে, তা খোঁজ নেয়। কিন্তু তারপরেই এমন ঘটবে ভাবেনি।’’

বিশ্বনাথবাবুদের পৈতৃক বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের মন্দারমণি থানার কালিন্দিতে। মন্দারমণি থানার তেঘরির গ্রামে ঊষারানির বাড়ি। শনিবার ওঁদের নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন বিশ্বনাথবাবু। এ দিন মর্গের বাইরে এক কোণে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন পরিচারিকার বাবা প্রভাসচন্দ্র মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘মামণি (ঊষারানির ডাক নাম) যে আর নেই, বিশ্বাসই হচ্ছে না।’’

এ দিন বিমা সংস্থার সহকর্মীরাই চার জনের দেহ সৎকারে হাত লাগান। বিশ্বনাথবাবুর সহকর্মী শিবাজি চট্টোপাধ্যায়, অমৃত পান্ডে, মনোজকুমার সিংহ বলেন, ‘‘এমনই পরিণতি যে ওঁদের সমবেদনা জানানোর ভাষাও নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Wife Accident Died
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE