Advertisement
E-Paper

এফআইআর নিল না পুলিশ, ক্ষুব্ধ বিজেপি

সংঘর্ষে আহত দলীয় কর্মীদের তিনি পুলিশের সামনেই বিরোধীদের খুনের প্ররোচনা দিয়েছিলেন। বাঁকুড়ার সেই সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার বিজেপি থানায় লিখিত অভিযোগ জানালেও পুলিশ তা এফআইআর তো দূর অস্ৎ, জেনারেল ডায়েরি হিসেবেও নিল না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৪ ০০:২৩
বাঁকুড়া থানা থেকে বেরিয়ে আসছেন বিজেপি নেতারা। —নিজস্ব চিত্র।

বাঁকুড়া থানা থেকে বেরিয়ে আসছেন বিজেপি নেতারা। —নিজস্ব চিত্র।

সংঘর্ষে আহত দলীয় কর্মীদের তিনি পুলিশের সামনেই বিরোধীদের খুনের প্ররোচনা দিয়েছিলেন। বাঁকুড়ার সেই সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার বিজেপি থানায় লিখিত অভিযোগ জানালেও পুলিশ তা এফআইআর তো দূর অস্ৎ, জেনারেল ডায়েরি হিসেবেও নিল না। কোনও নম্বর না দিয়ে শুধু থানার স্ট্যাম্প মেরে ছেড়ে দিল। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ওদের অভিযোগ আপাতত জমা রাখা হল। প্রয়োজনে পরে কেস হিসেবে দেখা যেতে পারে। এই ঘটনায় ফের একবার পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিরোধীরা।

নদিয়ার নাকাশিপাড়ায় তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের কুকথার ভাষণ সামনে আসার পরে বিজেপি থানায় অভিযোগ জানালেও একই ভাবে পুলিশ তা এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করেনি। এ বার সেই একই ভূমিকায় দেখা গেল বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশের। বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তথা দলের রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার এ দিন দিল্লিতে ছিলেন। টেলিফোনে তিনি বলেন, “নিজের স্বার্থসিদ্ধিতে এবং দলের দোষ ঢাকতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে পুলিশকে ব্যবহার করছেন, তাতে তাঁর পুলিশের কাছে এর বেশি আর কী আশা করব।” সুভাষবাবু জানান, কলকাতা ফিরে এ ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেবে দল।

বাঁকুড়া সদর থানার মন্যাডি গ্রামে সম্প্রতি বিজেপি-র প্রভাব বাড়ায় তৃণমূলের সঙ্গে ছোটখাটো গোলমাল চলছিলই। গত শনিবার সকালে তা বড় আকার নেয়। দু’দলের কর্মীদের সংঘর্ষে আহত হয়ে ১২ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। ১১ জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। মঙ্গলবার মন্যাডি গ্রামে গিয়ে দলের কর্মীদের বাঁকুড়া জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী পরামর্শ দিয়ে আসেন, “তোদের বাড়িতে কোনও ব্যাটা ঢুকলে কেটে দিবি। আমি বুঝে নেব। তোদের বাড়িতে বাইরের কোনও লোক ঢুকলে বলিদান করে দিবি। আমি বুঝে নেব।”

অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে গ্রামে গিয়ে দলীয় কর্মীদের অরূপবাবু উস্কানি দিয়ে খুনের প্ররোচনা দিয়েছেন বলে বিজেপি-র অভিযোগ। বুধবার বাঁকুড়া জেলায় দু’টি সভায় এসে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ জানিয়ে দিয়ে যান, সভাধিপতির বিরুদ্ধে দল এফআইআর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ দিন সকালে দলের জেলা সভাপতি জয়ন্ত মণ্ডল জেলা নেতৃত্বকে সঙ্গে নিয়ে বাঁকুড়া থানায় অরূপবাবুর বিরুদ্ধে এফআইআর করতে যান। অভিযোগ পত্রের উপর বাঁকুড়া সদর থানার স্ট্যাম্প দিয়ে ‘রিসিভড’ লিখে দেওয়া হলেও কোনও কেস নম্বর দেওয়া হয়নি। যা নিয়ে রীতিমত ক্ষুব্ধ বিজেপি-র জেলা নেতৃত্ব। দলের জেলা সহ-সভাপতি জীবন চক্রবর্তী বলেন, “ডিউটি অফিসার আমাদের অভিযোগ গ্রহণ করার পরে এফআইআর হিসেবে নেওয়া হয়েছে বলে জানালেও কোনও নম্বর দেয়নি, মামলার ধারাও দেয়নি।”

অভিযোগ কী হিসেবে পুলিশ নিয়েছে? পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার ফোন ধরেননি। তবে জেলা পুলিশের একাধিক আধিকারিক জানিয়েছেন, বিজেপি-র অভিযোগপত্রটি আপাতত স্মারকলিপি হিসেবে ধরছেন তারা। পরবর্তীকালে প্রয়োজন হলে ওই অভিযোগপত্র ধরে মামলা করা যেতে পারে।

ঘটনাটি রাজ্য বিজেপি সভাপতির কানেও গিয়েছে। এ দিন তিনি বলেন, “কেস নম্বর না দেওয়া মানে পুলিশ লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করে তা ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দিল। এর প্রেক্ষিতে কোনও পদক্ষেপ পুলিশ করবে না।” তাঁর দাবি, এই ঘটনাই সারা রাজ্য জুড়ে ঘটছে। পুলিশ কতটা নিরপেক্ষ তা ফের একবার রাজ্যের মানুষের কাছে জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল। দিল্লিতে গিয়ে অরূপবাবুর হুমকির কথা শুনিয়ে এসেছেন সুভাষবাবু। এ দিন দুপুরে তিনি বলেন, “আমি এখন দিল্লিতে আছি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে সব ঘটনা জানিয়েছি। পুলিশ অভিযোগের কোনও কেস নাম্বার দেয়নি বলেও নেতৃত্বকে জানিয়েছি।”

যাঁর বক্তব্য ঘিরে এই বিতর্ক, সেই অরূপ চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার বলেন, “আমার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ গুরুত্বহীন। তাই এ নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।” বিজেপি নেতাদের উদ্দেশ্যে তাঁর কটাক্ষ, “বিজেপি-র নেতারা যদি জেলায় থাকতে ভয় পাচ্ছেন, তাহলে তাঁরা বরং দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর কাছে চলে যান। তাঁদের সুরক্ষা-সহ যাতায়াতের ব্যবস্থা আমিই করে দেব।”

agitation of bjp fir police bankura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy