Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ডিভিসি-র প্রকল্পে ক্ষতিপূরণ নেওয়ার ভিড়, শুরু তরজাও

বহু আলোচনা, বোঝানোর পরেও যে জমিহারারা ক্ষতিপূরণের চেক না নেওয়ার ব্যাপারে অনড় ছিলেন, তাঁদেরই বড় অংশ মঙ্গলবার চেক নিলেন প্রশাসনের হাত থেকে। যা ইঙ্গিত দিচ্ছে, এত দিন ধরে রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ যে কারণে ঝুলেছিল, সেই ‘ওয়াটার করিডর’ সংক্রান্ত সমস্যা হয়তো এ বার মিটে যাবে।

রঘুনাথপুরে চলছে চেক বিলি। পৌলমী চক্রবর্তীর তোলা ছবি।

রঘুনাথপুরে চলছে চেক বিলি। পৌলমী চক্রবর্তীর তোলা ছবি।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৬
Share: Save:

বহু আলোচনা, বোঝানোর পরেও যে জমিহারারা ক্ষতিপূরণের চেক না নেওয়ার ব্যাপারে অনড় ছিলেন, তাঁদেরই বড় অংশ মঙ্গলবার চেক নিলেন প্রশাসনের হাত থেকে। যা ইঙ্গিত দিচ্ছে, এত দিন ধরে রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ যে কারণে ঝুলেছিল, সেই ‘ওয়াটার করিডর’ সংক্রান্ত সমস্যা হয়তো এ বার মিটে যাবে।

মঙ্গলবার থেকে নিতুড়িয়া ব্লকের রায়বাঁধ পঞ্চায়েতে দু’দিনের ওই শিবির শুরু হয়েছে। রায়বাঁধ মৌজার যে ২৫০ জন জমিহারা এখনও ক্ষতিপূরণ নেননি, তাঁদের জন্যই এই শিবির। প্রথম দিন ৭৮ জনকে ডাকা হয়েছিল। দিনের শেষে তাঁদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি চেক ও নগদ টাকা নিয়েছেন। ডিভিসি-র এই প্রকল্পের ডিরেক্টর দেবাশিস মিত্র তাই বলছেন, “এই প্রকল্পে জলের সংস্থানে ওয়াটার করিডর ঘিরে তৈরি হওয়া জটিলতা কাটছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখন যথেষ্ট ইতিবাচক।”

তবে, এই কৃতিত্বের ভাগ নিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। বিজেপি-র দাবি, তাদেরই মধ্যস্থতায় অনিচ্ছুক জমিদাতাদের বোঝানো সম্ভব হয়েছে। এ দিন চেক বিলির শিবিরে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে উপস্থিত বিজেপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার, দলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং স্থানীয় বিজেপি নেতারা। অথচ, শাসকদলের কেউই নেই। পঞ্চায়েত অফিসের পাশেই সভা করে জমিহারাদের ক্ষতিপূরণ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন বিজেপি।

সুভাষবাবুর দাবি, “তৃণমূলের স্থানীয় বিধায়ক, জেলা সভাধিপতি বা মন্ত্রী জমিহারাদের প্রাপ্য অধিকার দেওয়ানোর চেয়ে নিজের দলের লোকদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার দিকে বেশি নজর দিয়েছিলেন বলেই সমস্যা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা প্রথম থেকেই ইতিবাচক আন্দোলনের পথে হেঁটে ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে ওই জমিহারাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করিয়েছি। তাতেই বরফ গলেছে।” বিকাশবাবুও বলেন, “আমাদেরই চাপে ডিভিসি ঠিকা শ্রমিক হিসাবে জমিহারাদের নিতে চাওয়ায় তাঁরা ক্ষতিপূরণ নিতে রাজি হয়েছেন।”

জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো অবশ্য বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ-প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে অনেক আগে থেকেই থমকে থাকা ওয়াটার করিডরের কাজ চালু করেছিল। বিজেপি এখন একটা নাটক করে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।” প্রশাসনের একাংশেরও দাবি, লোকসভা ভোটের পরে এই সমস্যা মেটাতে রাজ্য সরকারের শীর্ষস্তর থেকে স্পষ্ট নির্দেশ পাওয়ার পরেই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করে ওয়াটার করিডরের কাজ চালানো হয়েছে। যদিও ঘটনা হচ্ছে, এর আগে শাসক দলের উদ্যোগে প্রশাসন যে ক’টি চেক বিলির শিবির করেছিল, তাতে জমিহারাদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য। এমনকী রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক নিজের গাড়িতে করে জমিহারাদের নিয়ে আসতে উদ্যোগী হলেও এক-দু’জনের বেশি তাতে সাড়া দেননি।

তা হলে এমন কী হল, যে এ দিনের শিবিরে এক সঙ্গে ৪০ জনেরও বেশি চেক নিতে চলে এলেন?

ওয়াটার করিডরের কাজ একটা সময় লাটে উঠেছিল স্থানীয় জমিহারাদের লাগাতার বিরোধিতায়। সমস্যা সামাধানে প্রশাসনিক সাহায্য না পাওয়ার অভিযোগ তুলে রঘুনাথপুর থেকে দশ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় ঝাড়খণ্ডে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনাও শুরু করেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। সেই সময় তৃণমূলের বিধায়ক থেকে শুরু করে সভাধিপতি আসরে নামলেও জমিহারাদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ফলে, দশ কিলোমিটার জলের পাইপ লাইন পাতার জন্য মাটি খোঁড়ার কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল ঠিকাদার সংস্থা।

লোকসভা ভোটের কিছু আগে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। ওয়াটার করিডরে বাধা দেওয়া ‘জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটি’ বিজেপি-র ছাতার তলায় চলে আসে। যে দুই পঞ্চায়েত এলাকায় মূল প্রকল্প গড়ে উঠছে, সেই রায়বাঁধ ও গুনিয়াড়ায় ভাল ফলও করে বিজেপি। রায়বাঁধে তারা তৃণমূলকে পিছনে ফেলে দেয়। আর গুনিয়াড়ায় তৃণমূল সামান্য এগিয়েছিল। বিজেপি সূত্রের খবর, কেন্দ্রে তাদের সরকার থাকার সুবাদে ডিভিসি যাতে ওয়াটার করিডরের জমিহারাদের মধ্যে থেকে ন্যূনতম দুশো লোককে প্রকল্পে ঠিকা শ্রমিকের কাজ দিতে রাজি হয়, সেই চেষ্টাও করেন বিজেপি নেতৃত্ব। পাশাপাশি জমিরক্ষা কমিটিকে কাজ বন্ধ করে আন্দোলনের রাস্তা থেকে সরে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়।

গত ৬ অগস্ট রঘুনাথপুরে মহকুমা শাসকের দফতরে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বিজেপি নেতা ও জমিহারাদের প্রতিনিধিদের বৈঠকে ঠিক হয়, ছ’মাসের মধ্যে দুশো জমিহারাকে ঠিকা শ্রমিকের কাজে নিয়োগ করা হবে এবং চলতি মাস থেকেই অনিচ্ছুক জমিহারাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এর পরেই তৎপর হয় পুলিশ-প্রশাসন। ফের কাজ শুরু হয় ওয়াটার করিডরের। ডিভিসি সূত্রের খবর, দশ কিলোমিটারের মধ্যে এখন মাত্র ১১০০ মিটার মাটি কাটার কাজ বাকি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

raghunathpur dvc subhraprakash mondal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE