Advertisement
০৭ মে ২০২৪
তেরো জনেরই সশ্রম কারাদণ্ড

পরিবারের কাছে ফিরতে চান লাভপুরের নির্যাতিতা

জেলের সাজা কাটিয়ে ফিরলে দুষ্কৃতীদের বোধোদয় হবে। লাভপুর গণধর্ষণ-কাণ্ডে সাজাপ্রাপ্তদের প্রতি এমনটাই বার্তা দিলেন নির্যাতিতা আদিবাসী তরুণী। শনিবার ওই মামলায় দোষী সাব্যস্ত ১৩ জনকেই কুড়ি বছর সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছে বোলপুর আদালত। এ দিন সাজার কথা শুনেই নির্যাতিতা বলেন, “ওই শয়তানগুলোর যাবজ্জীবন সাজা হলেই বেশি ভাল হত। তবে, কুড়ি বছর পর যখন জেল থেকে বেরোবে তখন আর কারও সঙ্গে নোংরামি করার কথা ভাববে না। আশা করছি, এটুকু শিক্ষা ওদের হবে।”

সাজা শোনার পর ভেঙে পড়েছেন দোষীদের পরিজন। বোলপুর আদালত চত্বরে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

সাজা শোনার পর ভেঙে পড়েছেন দোষীদের পরিজন। বোলপুর আদালত চত্বরে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৪৭
Share: Save:

জেলের সাজা কাটিয়ে ফিরলে দুষ্কৃতীদের বোধোদয় হবে। লাভপুর গণধর্ষণ-কাণ্ডে সাজাপ্রাপ্তদের প্রতি এমনটাই বার্তা দিলেন নির্যাতিতা আদিবাসী তরুণী। শনিবার ওই মামলায় দোষী সাব্যস্ত ১৩ জনকেই কুড়ি বছর সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছে বোলপুর আদালত। এ দিন সাজার কথা শুনেই নির্যাতিতা বলেন, “ওই শয়তানগুলোর যাবজ্জীবন সাজা হলেই বেশি ভাল হত। তবে, কুড়ি বছর পর যখন জেল থেকে বেরোবে তখন আর কারও সঙ্গে নোংরামি করার কথা ভাববে না। আশা করছি, এটুকু শিক্ষা ওদের হবে।”

বস্তুত, মধ্যমগ্রাম গণধর্ষণ মামলার মতোই এই মামলাতেও গণধর্ষণ সংক্রান্ত পরিবর্তিত আইনের ৩৭৬ (ডি) ধারা মোতাবেক সাজা হয়েছে। সরকারি আইনজীবী মহম্মদ সামসুজ্জোহা বলেন, “লাভপুর গণধর্ষণ মামলায় শুক্রবারই অতিরিক্ত জেলা জজ সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরী অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। এ দিন তিনি প্রত্যেককেই ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা শোনান। একই সঙ্গে দোষীদের ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা হয়েছে।” ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৩ ও ৩৪২ ধারা অনুযায়ী দোষীদের ছ’মাস কারাদণ্ড হয়েছে। প্রত্যেকটি সাজাই একযোগে চলবে। ঘটনার আট মাসের মধ্যেই মামলার রায় হল।

গত ২০ জানুয়ারি বীরভূমের লাভপুর থানার সুবলপুর গ্রামে ভিন্ জাতের এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ‘অপরাধে’ ওই আদিবাসী তরুণী ও তাঁর সঙ্গীকে রাতভর গাছে বেঁধে মারধর করা হয়। পর দিন সালিশি বসানোর পরে গণধর্ষণ করা হয়।

সরকারি আইনজীবী আরও জানিয়েছেন, নির্যাতিতার মেডিক্যাল টেস্ট এবং ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি মোবাইল অভিযোগ প্রমাণ করতে সাহায্য করেছে। তিনি বলেন, “ওই মোবাইলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ছবি মিলেছিল। তার মধ্যে নির্যাতিতার বেশ কিছু আপত্তিকর ছবিও ছিল। ওই সব ছবির তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ধৃতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা গিয়েছে।” এ দিকে, বিচারপতি জানিয়েছেন, উচ্চ আদালতে আর্জি জানানোর ক্ষেত্রে সাজাপ্রাপ্তেরা সামর্থ না থাকলে লিগাল এডের প্যানেলের আওতাভুক্ত আইনজীবীদের সহায়তা দেওয়া হবে। এ দিকে, আগের দিনের মতোই এ দিনও বিচারকের সাজা শোনার জন্য দোষীদের পরিবারের বহু সদস্য আদালত চত্বরে হাজির হয়েছিলেন। সকাল সাড়ে ১১টার পরে সাজা ঘোষণার পরে দোষী ১৩ জনই বিচারকের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকেন। সারাক্ষণ বিচারকের দিকে হাতজোড় করেই তাকিয়ে ছিলেন মাঝি-হাড়াম (মোড়ল) বলাই মাড্ডি। সাজা ঘোষণার পরেই একে একে তেরো জনকে এজলাসের বাইরে নিয়ে গিয়ে আদালতের হাজতে রাখা হল। সাজা ঘোষণার পরে কেউ-ই কোনও কথা বলেননি। তবে, এ দিনও আদালত চত্বরে উপস্থিত পরিজনেরা রায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সাজাপ্রাপ্ত দেবরাজ মণ্ডলের স্ত্রী শম্পা মণ্ডল বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। ষড়যন্ত্র করে আমার স্বামীকে ফাঁসানো হল। ও কোনও দোষ করেনি।”

অন্য দিকে, দোষীদের যাবজ্জীবন না হওয়ায় কিছুটা হতাশ হলেও নতুন করে জীবন শুরু করার কথা ভাবছেন লাভপুরের নির্যাতিতা তরুণী। সিউড়ির হোম থেকে ফোনে বলেন, “এ বার আমি গ্রামে ফিরতে চাই। ভাইদের সঙ্গে একসঙ্গে থাকব।” বীরভূমের জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী অবশ্য তরুণীকে তাঁর পরিবারের লোকেদের কাছে দ্রুত ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

lavpur gangrape case lavpur rape gangrape
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE