চালান হিসেবে এ ভাবেই স্লিপ ব্যবহার করা হচ্ছে খাদানে। ছবি: অনির্বাণ সেন।
রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবাধে বালি-পাথর বিক্রির আসছিল অনেক দিন ধরেই। এই ধরনের অবৈধ কারবারে কিছু সরকারি কর্মী জড়িত আছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। শুক্রবার আচমকা নলহাটি পাথর শিল্পাঞ্চল যাওয়ার রাস্তায় নলহাটি ১ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের চেকপোস্ট পরিদর্শন করলেন প্রশাসনিক কর্তারা। জাল চালান দিয়ে পাথর ভর্তি গাড়ি বের করে দেওয়ার জন্য দুই দালাল কে গ্রেফতার করলেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, নলহাটি ১ ব্লক ভূমি এবং ভূমি সংস্কার দফতরের দুই কর্মীকেও শো-কজ করলেন রামপুরহাট মহকুমাশাসক।
মহকুমাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, “মহকুমা এলাকায় পাথর, বালি বিক্রির ক্ষেত্রে বেশ কিছুদিন থেকে রাজস্ব আদায় ফাঁকি দেওয়ার একটা চক্র বিভিন্ন ভাবে কাজ করছে বলে অভিযোগ আসছিল। সে জন্য বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। এ দিন নলহাটি পাথর শিল্পাঞ্চল এলাকায় সেই টিম নিয়ে আচমকা হানা দেওয়া হয়েছে। তার ফলও মিলেছে। এই দুর্নীতির সঙ্গে সরকারী কর্মী থেকে অনেকে যুক্ত। তদন্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ওই টিমে রামপুরহাট মহকুমাশাসক, মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরর, রামপুরহাট ১ ও নলহাটি ১ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক এবং কর্মীরা হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের স্পেশাল রেভিনিউ অফিসার দেবব্রত সাউ বলেন, “এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ নলহাটি পাথর শিল্পাঞ্চল এলাকা যাওয়ার রাস্তার উপর নলহাটি ১ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের অধীন চেকপোস্ট পরিদর্শনে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পাথর বিক্রি করার জন্য জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে যে চালান দেওয়া হয়েছে, সেই চালানের মধ্যে কিছু চালানে সরকারি ‘হলোগ্রাম’ নকল করা হয়েছে। চালানে আধিকারিকদের সইও নকল। তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, এলাকায় নকল চালান বই ছাপিয়ে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে।” তিনি জানান, খোদ মহকুমাশাসক দু’জন দালালকে নকল চালান দিয়ে পাথর ভর্তি গাড়ি বের করে দেওয়ার জন্য হাতে নাতে ধরেছেন। ধৃতেরা হল নলহাটি থানার পাহাড়ি এলাকার পিয়ারুল শেখ ও নতুনগ্রাম এলাকার সহদেব লেট। সেই সঙ্গে কর্তব্যে গাফিলতি’র অভিযোগে নলহাটি ১ ব্লকের বিএলঅ্যান্ডএলআরও দফতরের দু’জন কর্মীকে শো-কজ করেন।
জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক নীলকমল বিশ্বাস বলেন, “পাথর ব্যবসায়ীদের সাধারণত এক মাসে ১ লক্ষ সিএফটি পাথর বিক্রির জন্য ১ লক্ষ ২৬ হাজার সরকারের ঘরে জমা দিতে হয়। এক শ্রেণির চক্র অবৈধ ভাবে পাথর বিক্রি করার জন্য নকল চালান ছাপানোর কাজ করছে। জেলা জুড়ে তাদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় চলছে। দফতরের লোক জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্ত করে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।” এলাকায় নলহাটি পাথর ব্যবসায়ী মালিক সমিতির দু’টি শাখা আছে। একটি শাখার সম্পাদক পিন্টু সিংহ বলেন, “যাঁরা পাথর ব্যবসায়ী নন, তাঁদের কাছেই নকল চালান রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে এর আগে অনেকবার বলা হয়েছে। প্রশাসন নকল চালান উদ্ধার করে সরকারের ঘরে আরও বেশি করে রাজস্ব যেন জমা করে সেটা আমরাও চাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy