Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বুথে চলুন, নতুনডিকে বোঝালেন আধিকারিকরা

প্রথমে বিধানসভা। তার পরে পঞ্চায়েত ভোট। দু’বারই আয়োজন-উদ্যোগের খামতি ছিল না। মুসলিম মহিলাদের বুথে আনতে রাখা হয়েছিল শুধুই মহিলা ভোটকর্মী ও মহিলা পুলিশ। প্রথা কিন্তু ভাঙেননি রঘুনাথপুরের নতুনডি গ্রামের মুসলিম মহিলা ভোটাররা। বুথমুখো হননি তাঁদের কেউই। এ বার লোকসভা ভোটের আগে তাই তাঁদের বুথমুখো করাটাই চ্যালেঞ্জ পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের কাছে।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৪৪
Share: Save:

প্রথমে বিধানসভা। তার পরে পঞ্চায়েত ভোট। দু’বারই আয়োজন-উদ্যোগের খামতি ছিল না। মুসলিম মহিলাদের বুথে আনতে রাখা হয়েছিল শুধুই মহিলা ভোটকর্মী ও মহিলা পুলিশ। প্রথা কিন্তু ভাঙেননি রঘুনাথপুরের নতুনডি গ্রামের মুসলিম মহিলা ভোটাররা। বুথমুখো হননি তাঁদের কেউই। এ বার লোকসভা ভোটের আগে তাই তাঁদের বুথমুখো করাটাই চ্যালেঞ্জ পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের কাছে। পুরুলিয়ায় নির্বাচনের এখনও দিন কুড়ি বাকি। কিন্তু, স্থানীয় পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে শুধু নতুনডির মহিলাদের নিয়ে তাই সর্বদল সভা করল ব্লক প্রশাসন। সেখানে বিডিও বার্তা দিলেন, “অতীত ভুলে এ বার ইতিহাস তৈরি করতে হবে নতুনডিতে!”

রঘুনাথপুর ২ ব্লকের নতুনডি-কলাগড়া পঞ্চায়েতের নতুনডি গ্রামে স্বাধীনতার পর থেকে কোনও নির্বাচনেই বুথমুখো হননি মুসলিম সম্প্রদায়ের মহিলারা। এ বার নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই নতুনডি নিয়ে তাই উদ্যোগী হয়েছেন বিডিও উৎপল ঘোষ। বৃহস্পতিবার বিকেলে তুনডি-কলাগড়া পঞ্চায়েতে কার্যালয়ে গিয়েছিলেন বিডিও, ব্লকের সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্পের আধিকারিক দিলীপ মণ্ডল-সহ প্রশাসনিক আধিকারিকরা। সঙ্গে ছিলেন মসজিদের ইমাম, স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পের সুপারভাইজারও। ছিলেন তৃণমূল, সিপিএম ও কংগ্রেসের তরফে প্রতিনিধিরাও। নতুনডিতে প্রথা ভাঙার কৌশল খুঁজতে চলে দীর্ঘ আলোচনা।

কিন্তু কী ভাবে নতুনডি গ্রামে ভোট দেওয়ানো যাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের মহিলাদের? সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই গ্রামে প্রায় ৬০০ মহিলা ভোটার রয়েছেন। বৈঠক শেষে কিন্তু আশাবাদী বিডিও উৎপলবাবু। তিনি জানালেন, আলোচনায় উপস্থিত সব রাজনৈতিক দলেরই প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন এ বার তাঁরা সর্বোত ভাবে চেষ্টা করবেন মহিলাদের বুথে আনতে।” ঘটনা হল বৈঠক শেষে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা রফিক শেখ, সিপিএমের সইদুল্লা খানরা এক সুরে বলছেন, “এ বার আমরা সর্বোতভাবে চেষ্টা করব। অন্তত নিজেদের পরিবারের মহিলারা যাতে ভোটটা দেয় সেই প্রচেষ্টা শুরু করেছি।”

“ঠিক এটাই চাইছি আমরা। কারণ নতুনডিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের মহিলাদের ভোট না দেওয়ার পিছনে কোনও ধর্মীয় বিধিনিষেধ নেই। সমস্যাটা শুধু মানসিকতার।” বলছিলেন বিডিও। সর্বদল বৈঠকে একটি মসজিদের ইমাম রহমতউল্লা খান স্পষ্টই জানিয়েছে, ভোট দেওয়ায় কোনও ধর্মীয় সমস্যা নেই। বিডিও বলেন, “নতুনডিতে মহিলা ভোটারদের ১০০ শতাংশরই সচিত্র ভোটার কার্ড রয়েছে। বাইরে বেরিয়ে পরিচয়পত্রের ছবি তোলায় মহিলারদের সমস্যা হয়নি। তাহলে কেন ভোট দিতে যাবেন না তাঁরা? এটাই আমরা সর্বদল বৈঠকে জানতে চেয়েছিলাম।” তিনি জানান, নির্দিষ্ট কোনও সমস্যা নেই। পুরোটাই মানসিকতার সমস্যা। দীর্ঘদিন ধরে গ্রামে যে প্রথা চলে আসছে সেটা প্রথম কে ভাঙবে সেটাই মূল সমস্যা।

বিডিওর কথার সমর্থন মিলেছে তৃণমূল ও সিপিএমের কর্মীদের কথাতেও। সইদুল্লা খান বলেন, “বলতে পারেন এটা দীর্ঘদিনের একটা গোঁড়ামি। একজন কেউ সাহস করে এগিয়ে এসে ভোটটা দিলেই প্রথাটা ভেঙে যাবে। ব্যক্তিগত ভাবে এ বার চেষ্টা করছি যাতে আমার পরিবারের ও আত্মীয়দের পরিবারের মহিলারা ভোট দেনন” রফিক শেখের দাবি, “বিডিওকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি এ বার অন্তত আমার পরিবারের মহিলাদের ভোট দেওয়ানোর চেষ্টার খামতি থাকবে না।” কংগ্রেসের নেতা অনিমেষ চার বলেন, “সর্বদল বৈঠক সেরেই আমাদের দলের কর্মী-সমর্থকদের বলেছি গ্রামের মহিলাদের কাছে গিয়ে এ নিয়ে প্রচার চালাতে হবে।” বিডিও জানান, “এ বার আমরা গ্রামের প্রতিটি ঘরে গিয়ে মহিলাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে ভোট দিতে অনুরোধ জানাব।” গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদেরও এই কাজে নামানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই নতুনডি গ্রামে ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি, রাস্তা, নলকূপ, শৌচাগার তৈরির মাধ্যমে উন্নয়নে বিশেষ জোর দিয়েছে বলে দাবি ব্লক প্রশাসনের। ব্লকের এক পদস্থ কর্তার কথায়, “এলাকার উন্নয়নের মাধ্যমেই আমরা গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছতে চেয়েছি। এ বার ভোট চাইছি।” নতুনডি কি প্রথা ভাঙছে? উত্তর অবশ্য মিলবে ৭ মে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

subhraprakash mondol raghunathpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE