Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
বাঁকুড়া মিশন গার্লস

রান্নার কাজ চাই, স্কুলে হাঙ্গামা একদল মহিলার

মিড-ডে মিল রান্নার দায়িত্ব তাঁদের হাতে তুলে দিতে হবে, এই দাবি তুলে স্কুলের ঢুকে পড়ুয়াদের জন্য রান্না চলাকালীন স্কুলে ঢুকে রান্নার সরঞ্জাম ছুড়ে ফেলে দিল একদল মহিলা। কয়েক ঘণ্টা স্কুল চত্বরে বিক্ষোভও দেখালেন ওই মহিলারা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মঙ্গলবার এই ঘটনার জেরে দিনভর উত্তপ্ত রইল বাঁকুড়া শহরের মিশন গার্লস হাইস্কুল চত্বর। ব্যাহত হল স্কুলের পড়াশোনা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৪ ০১:০০
Share: Save:

মিড-ডে মিল রান্নার দায়িত্ব তাঁদের হাতে তুলে দিতে হবে, এই দাবি তুলে স্কুলের ঢুকে পড়ুয়াদের জন্য রান্না চলাকালীন স্কুলে ঢুকে রান্নার সরঞ্জাম ছুড়ে ফেলে দিল একদল মহিলা। কয়েক ঘণ্টা স্কুল চত্বরে বিক্ষোভও দেখালেন ওই মহিলারা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মঙ্গলবার এই ঘটনার জেরে দিনভর উত্তপ্ত রইল বাঁকুড়া শহরের মিশন গার্লস হাইস্কুল চত্বর। ব্যাহত হল স্কুলের পড়াশোনা। অনির্দিষ্টকালের জন্য মিড-ডে মিল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের নতুনচটি এলাকার এই স্কুলটিতে ২০০৭ সাল থেকে মিড-ডে মিল চালু হয়েছে। প্রথম থেকেই ‘অন্নপূর্ণা’ নামের একটি স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর আট জন মহিলা সদস্য এই স্কুলে রান্নার কাজ সামলে আসছেন। কিন্তু, কয়েক বছর ধরে ২১ নম্বর ওয়ার্ডেরই কিছু মহিলা তাঁদের এই কাজ দিতে হবে বলে দাবি জানাচ্ছিলেন। তাঁদের সমর্থনে অন্নপূর্ণা গোষ্ঠীর মহিলাদের সরানোর দাবিতে সরব হয়েছেন এই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তনুশ্রী ঘোষ সিন্দালও। এ নিয়ে তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষ, পুরসভাকেও একাধিক বার জানিয়েছেন। কিন্তু, স্কুল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় কাউন্সিলরের এই দাবি মেনে নিতে রাজি হননি।

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অবিজিতা চৌধুরী জানান, এ দিন স্কুল চলাকালীন জনা ২৫ মহিলা হঠাৎই মিড-ডে মিলের রান্নাঘরে ঢুকে তাণ্ডব শুরু করেন। রান্নায় নিযুক্ত স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের রান্নাঘর থেকে বের করে দিয়ে রান্নার সরঞ্জাম ছুড়ে বাইরে ফেলে দেন। তার পর স্কুল চত্বরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের স্কুল থেকে হটিয়ে দেয়। প্রধান শিক্ষিকা বলেন, “এই ঘটনার জন্য সারাদিন স্কুলের পড়াশেনা ব্যাহত হল। স্কুলে উত্তেজনার সৃষ্টি হল। আমরা সব জানিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করব।” স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, হামলাকারী মহিলাদের কয়েক জন ২১ নম্বর ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা। অন্যেরা শহরের নানা এলাকায় থাকেন।

প্রধান শিক্ষিকার অভিযোগ, এলাকার কাউন্সিলর দীর্ঘদিন ধরে এই ওয়ার্ডের মহিলাদের রান্নার দায়িত্ব দিতে হবে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষের উপরে চাপ সৃষ্টি করছেন। কিন্তু, রান্নার দায়িত্বে থাকা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সদস্যারা ভালভাবেই কাজ করছেন। তাই স্কুল তাঁদের সরাতে চায় না। কাউন্সিলরের দাবি না মানায় পরোক্ষ ভাবে তিনিই মহিলাদের দিয়ে এই কাজ করিয়েছেন, দাবি করে অভিজিতাদেবী বলেন, “এলাকার কাউন্সিলরই এই ঘটনার জন্য দায়ী। বিষয়টি আমরা পুলিশকে জানাব।” মিড-ডে মিল নিয়ে ঝামেলার মীমাংসা নাহওয়া পর্যন্ত আপাতত স্কুলে দুপুরের রান্না বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন স্কুল পরিচালন কমিটির সম্পাদক কামাক্ষ্যা বিশ্বাস। তাঁর কথায়, “প্রশাসন আমাদের উপরেই স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী ঠিক করার দায়িত্ব দিয়েছিল। আমরা অন্নপূর্ণা গোষ্ঠীর মেয়েদের রান্নার কাজে নিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু, এখন তা নিয়ে অহেতুক ঝামেলার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রশাসন এ বিষয়ে মধ্যস্থতা করে সমস্যার মীমাংসা না করে দেওয়া পর্যন্ত আমরা মিড-ডে মিল বন্ধ রাখব।” এই হামলার জেরে রান্নার কাজে নিযুক্ত মহিলারা যথেষ্ট ভয়ে রয়েছেন। ফের তাঁদের উপরে ওই মহিলারা চড়াও হতে পারেন, এই আশঙ্কাও করছেন তাঁদের অনেকে।

কাউন্সিলর তনুশ্রীদেবী অবশ্য এই ঘটনার দায় নিতে নারাজ। তাঁর দাবি, “আমার ওয়ার্ডের স্কুল। অথচ আমার ওয়ার্ডের মহিলাদেরই রান্নার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না, এ নিয়ে এলাকার মহিলারা আমার কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই আমি স্কুলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম। কিন্তু, স্কুল কর্তৃপক্ষ না মানায় বিষয়টি নিয়ে আমি আর মাথা ঘামাইনি।” তাঁর আরও বক্তব্য, এ দিন স্কুলে যা হয়েছে, তার জন্য ওই মহিলারাই দায়ী। তিনি এই ঘটনার সঙ্গে কোনও ভাবেই জড়িত নন। বাঁকুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান শম্পা দরিপা অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ কাকে মিড-ডে মিলের দায়িত্ব দেবে, তা ঠিক করার অধিকারী পরিচালন কমিটি। তাতে বাইরের কারও কিছু বলার নেই। শম্পাদেবী বলেন, “আমি এই মুহূর্তে বাইরে রয়েছি। বাঁকুড়ায় ফিরে ঘটনাটি সম্পর্কে বিশদে খোঁজ নেব।”

জেলা তৃণমূল নেতাদের একাংশও মানছেন, স্কুলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দলীয় কাউন্সিলরের এই হস্তক্ষেপ ‘অপাঞ্ছিত’। এই ধরনের ঘটনায় দলকেই অস্বস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। দলের এক নেতার কথায়, “এই হামলায় কী লাভ হল? রান্নার কাজে নিযুক্ত মহিলারা আতঙ্কে রইলেন। আর মাঝখান থেকে দুপুরের রান্না করা খাবার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হল স্কুলের ছোটছোট ছেলেমেয়েরা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bankura mid day meal bankura mission girls
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE