পিয়ারডোবা স্টেশনের কাছে খোলা ছিল ৭৯টি প্যানড্রল ক্লিপ। ঘণ্টা দেড়েক বন্ধ থাকে ট্রেন চলাচল। ছবি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।
রেলকর্মীর তৎরতায় বড়সড় দুর্ঘটনা এড়ালো রেল। বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা-খড়গপুর শাখায় পিয়ারডোবা স্টেশনের কাছে ঘুঘুমোড়া গ্রামে রেললাইন থেকে ৭৯টি প্যানড্রল ক্লিপ খোলা অবস্থায় পাওয়া যায়। তার আধ ঘণ্টা পরেই ওই লাইনে আদ্রা-খড়গপুর ট্রেন যাওয়া কথা ছিল। তাই কংক্রিটের সঙ্গে রেললাইনকে আঁকড়ে ধরে রাখা এতগুলি প্যানড্রল ক্লিপ নাশকতার উদ্দেশেই কেউ খুলে ছিল কি না তা ভাবাচ্ছে রেলকে।
রেলকর্মী সংগঠন মেনস কংগ্রেস বিশেষ তদন্তকারী দলকে দিয়ে ঘটনার তদন্ত করার জন্য রেল কর্তৃপক্ষকের কাছে দাবি জানিয়েছে। এডিআরএম (আদ্রা) ভিপি শরাফ বলেন, “রেললাইন পরীক্ষার কাজে যাওয়া ট্র্যাকম্যান সময় মতো খোলা প্যানড্রল ক্লিপগুলি দেখতে পেয়ে খবর দেওয়ায় বড়সড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে। সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখে ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’’
বিষ্ণুপুরের স্টেশন ম্যানেজার হরিদাস রায় জানান, সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ ডাউন রেললাইন পরীক্ষার সময় বিষয়টি নজরে আসে। এর কিছু পরেই বিষ্ণুপুর স্টেশনে ঢোকে খড়গপুরগামী আদ্রা-খড়গপুর প্যাসেঞ্জার। ট্রেনটি বিষ্ণুপুর স্টেশনেই আটকে দেওয়া হয়। রেলের ইঞ্জিনিয়াররা মেরামতির কাজ শুরু করেন। ঘণ্টা দেড়েক বাদে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।” জিআরপি-র বাঁকুড়া কেন্দ্রের ওসি সুভাষচন্দ্র জানা বলেন, “৭৯টি প্যানড্রল ক্লিপ কী ভাবে খোলা পাওয়া গেল পরিস্কার নয়। ঘটনাস্থল থেকে জঙ্গল কিছুটা দূরে। প্রাথমিক ভাবে এর পিছনে নাশকতার কোনও ছক রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। দুষ্টুমি করে কেউ এমন কাজ করেছে কি না তাও দেখা হচ্ছে।” তবে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদারের দাবি, “৩০টি প্যানড্রল ক্লিপ খোলা হয়েছে। জিআরপি এবং আরপিএফ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তবে এতগুলি ক্লিপ খুলে যাওয়ার কথা নয়। পুলিশের তদন্তে বোঝা যাবে এর পিছনে কোনও নাশকতার উদ্দেশে ছিল কি না।”
এক সঙ্গে এতগুলি প্যানড্রল ক্লিপ খোলার ঘটনার পিছনে নাশকতা ঘটানোর বা অন্তর্ঘাতের চেষ্টা দেখছেন রেলের কিছু কর্তা। আদ্রার এডিআরএম ভিপি শরাফ এ দিন জানান, সাধারণ ভাবে এক সঙ্গে এতগুলি প্যানড্রল ক্লিপ খোলার ঘটনা কখনোই সম্ভব নয়। এর পেছনে নাশকতার চেষ্টা থাকতেই পারে। অন্যদিকে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছে রেলকর্মী সংগঠন মেনস কংগ্রেস। সংগঠনের নেতা সুব্রত দে বলেন, “একই জায়গায় অতগুলি প্যানড্রল ক্লিপ খোলার ঘটনা আশঙ্কাজনক। সময়মতো ধরা না পড়লে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারত ওই লাইন দিয়ে যাওয়া যে কোনও ট্রেন। আমরা রেল কর্তৃপক্ষের কাছে বিশেষ তদন্তকারী দলকে দিয়ে তদন্তের দাবি করেছি।”
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, লাইনে থাকা সিমেন্টের স্লিপার এই লোহার প্যানড্রল ক্লিপের মাধ্যমেই রেললাইনকে ধরে রাখে। ফলে এই ক্লিপ সরিয়ে নিলে কার্যত স্লিপারের উপরে কোনও অবলম্বন ছাড়াই স্রেফ বসানো অবস্থায় থাকবে রেললাইনটি। যে কোনও ট্রেন সামান্য গতিতে গেলেই লাইন সরে যাবে এবং অবধারিত ভাবে লাইনচ্যুত হবে ট্রেনটি। রেলের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পদস্থ কর্তারা জানাচ্ছেন, একটি স্লিপারের চারটি ক্লিপ লাইনকে ধরে রাখে। ফলে ৭৯টি ক্লিপ খোলার মানে ২০টি স্লিপারের উপরে বসানো প্রায় গোটা একটি রেল লাইন সরে যাবে স্লিপার থেকে।
বস্তুত দ্রুতগতিতে যাওয়া ট্রেনগুলি চলাচলের কারণে অনেক সময় আলগা হয়ে পড়ে এই প্যানড্রল ক্লিপগুলি। তাই নির্দিষ্ট সময় অন্তর কি-ম্যানরা লোহার বড় হাতুড়ি দিয়ে ক্লিপগুলিকে ফের জুড়ে দেন লাইনের সঙ্গে। যাত্রী সুরক্ষার জন্য এই কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই লাইনেই রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপুর্ণ এবং দ্রুতগামী ট্রেন এই শাখায় চলাচল করে। বর্তমানে এই শাখায় ট্রেন চলাচলের সর্বোচ্চ গতি বাড়িয়ে প্রতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার করা হয়েছে। কাজেই রেল কর্তারাই জানাচ্ছেন, ঘটনাটি ওই রেলকর্মীর নজর এড়িয়ে গেল বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটার প্রবল সম্ভাবনা ছিল। তবে যে কর্মীর তৎপরতায় দুর্ঘটনা আটকানো গেল, তার পরিচয় সন্ধ্যা পর্যন্ত রেল কর্তৃপক্ষ জানাতে পারেননি।
অন্য দিকে, এ দিন ছাতনা রেলগেটের মাঝে রেললাইনের উপরে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে একটি ট্রাক আটকে পড়ে। পরে অন্য একটি ট্রাকের সঙ্গে দড়ি বেঁধে আটকে পড়া ট্রাকটিকে লাইন থেকে সরানো হয়। এর জেরে পটনা-এনরাকুল্লাম এক্সপ্রেস ও চক্রধরপুর-কামাক্ষ্যা এক্সপ্রেস প্রায় ১০ মিনিট আটকে পড়ে। পরে ট্রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy