Advertisement
১১ মে ২০২৪
পরে ঢোঁক গিললেন তৃণমূল নেতা

লাঠি হাতে নামুন, মঞ্চ থেকে বার্তা

কেউ বললেন ঐক্যের কথা, কেউ বললেন লাঠি হাতে নামতে, কেউ নির্দেশ দিলেন পুলিশকে চাপে রাখতে সংগঠন বাড়াতে। বাঁকুড়ায় যুব তৃণমূলের কর্মিসভায় নানা নেতার গলায় শোনা গেল নানা মত। আগামী শুক্রবার দুর্গাপুরে কর্মিসভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই প্রস্তুতিতে রবিবার বাঁকুড়ার বিকনায় একটি কর্মিসভার আয়োজন করে জেলা যুব তৃণমূল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০০
Share: Save:

কেউ বললেন ঐক্যের কথা, কেউ বললেন লাঠি হাতে নামতে, কেউ নির্দেশ দিলেন পুলিশকে চাপে রাখতে সংগঠন বাড়াতে।

বাঁকুড়ায় যুব তৃণমূলের কর্মিসভায় নানা নেতার গলায় শোনা গেল নানা মত। আগামী শুক্রবার দুর্গাপুরে কর্মিসভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই প্রস্তুতিতে রবিবার বাঁকুড়ার বিকনায় একটি কর্মিসভার আয়োজন করে জেলা যুব তৃণমূল।

বাঁকুড়া জেলায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা কারও অবিদিত নয়। এহেন কর্মিসভায় যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে আলোচনা হবেই তা একপ্রকার নিশ্চিত ছিল। হলও তাই। সম্প্রতি একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েতের অনাস্থা সামাল দিতে গিয়েই নাজেহাল দশা হচ্ছে দলের জেলা নেতৃত্বের। তার পর আবার প্রায়ই এক তৃণমূল নেতা অন্য তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট, গোষ্ঠীবাজি, সরকারি প্রকল্পের টাকা তছরূপের মতো নানা অভিযোগ আনছেন প্রকাশ্যেই। সভায় মূল বক্তা ছিলেন তমলুকের সাংসদ তথা প্রাক্তন রাজ্য যুব সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী।

তিনি আগাগোড়া সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা করেছেন। দলের কর্মীদের মিডিয়ার দ্বারা প্রভাবিত হতেও নিষেধ করেছেন তিনি। বদলে ‘তুই বড় না মুই বড়’ তা নিয়ে তর্ক না করে সকলকে একসাথে কাজ করার ডাক দিয়েছেন। তিনি বলেন, “সংবাদ মাধ্যম যাই বলুক, রাজ্যের মানুষ আমাদের পাশে রয়েছেন। তার প্রমাণ বিভিন্ন জেলার সভায় এই হাজার-হাজার মানুষের উপস্থিতি বুঝিয়ে দিচ্ছে।”

তবে জেলা নেতাদের বক্তব্যে মূল সুর বাঁধা দিল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানো। জেলা নেতারা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে নানা পরামর্শ দেন। শুধু তাই নয় কোন্দল মিটিয়ে কর্মীদের কী করা উচিত সেই পথও নির্দেশ করে দেন। যেমন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খান বলেন, “সবাই এক হয়ে গ্রামে গ্রামে মাইক বেঁধে প্রচার করুন। কুৎসার জবাব দিতে হবে। সকলে লাঠি নিয়ে রাস্তায় নামবেন। তবে মারপিট করতে নয়, রাজনৈতিক প্রচার করতে।” সৌমিত্রবাবুর কথা শেষ হওয়ার পরে ধন্দে পড়ে যান সভায় আসা তৃণমূল কর্মীদের অনেকেই। ফিসফিস করে অনেকেই একে-ওকে জিজ্ঞেস করতে থাকেন, “মারপিট না করলে প্রচারে লাঠি নিয়ে বের হতে যাব কেন?” একই প্রশ্ন সভার শেষে ফোনে সৌমিত্রবাবুকে করা হলে তিনি নিজেও নিজের বক্তব্যের মানে বের করতে ফাঁপরে পড়ে যান। খানিক থেমে তাঁর ব্যাখ্যা, “আসলে আরএসএস-এর কর্মীরা গ্রামে গ্রামে ক্যাম্প করে লাঠি খেলা শেখাচ্ছে। আমি সে কথাই বলতে গিয়েছিলাম। উল্টো বলে ফেলেছি। এই ক্যাম্পের বিরুদ্ধে আমাদের প্রচার চালাতে হবে।” কিন্তু কোথায় এমন কর্মশালা হচ্ছে তা জানাতে পারেননি তিনি।

সৌমিত্রবাবুর পরে বক্তব্য দিতে ওঠেন জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী। তাঁর কথায় বেশির ভাগটাই ছিল আত্মসমালোচনার সুর। ভোটে জেতার পরে অনেকেই আরামপ্রিয় হয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এরপরেই তিনি বলেন, “কিছু সরকারি আধিকারিক ও পুলিশের একাংশ ভিতরে ভিতরে বিজেপিকে উস্কানি দিচ্ছে। কোন পুলিশ, কোন আধিকারিক বিজেপিকে উস্কানি দিচ্ছে তা নজরে রাখুন। নিজেদের সংগঠন জোরালো করতে হবে। তাহলে কোনও বিজেপি কর্মীকে ছেড়ে অকারণে পুলিশ কোনও তৃণমূল কর্মীকে ধরলে তার প্রতিরোধ করা যাবে। পুলিশ তখন আপনার কথা শুনতে বাধ্য হবে।”

ইদানীং রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠছে তৃণমূলের বিরুদ্ধেই। প্রকাশ্য মঞ্চে এ কথা বলে নিজেদের দাবি চাপাতে পুলিশের উপর আক্রমণাত্মক হওয়াকে সমর্থন করছেন তিনি? অরূপবাবুকে এ প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, “না, আমরা এখন সরকারে আছি, তা কেন করব। তবে সংগঠন মজবুত হলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো যায়। সে কথাই বলতে চেয়েছি।” সভায় জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা পরিষদীয় সচিব অরূপ খাঁ, যুব তৃণমূল সভাপতি শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bankura tmc mamata bondhopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE