পাত্রসায়রের একটি কারখানায় তৈরি হচ্ছে ফ্লাই অ্যাশ ইট। দেবব্রত দাস
রাজ্য সরকার সরকারি সমস্ত প্রকল্পে ফ্লাই অ্যাশ থেকে তৈরি ইট ব্যবহারের নির্দেশ দিলেও সব ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। বদলে সরকারি কাজে পোড়ামাটির ইটই ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বাঁকুড়া জেলা ফ্লাই অ্যাশ ব্রিকস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
সম্প্রতি বাঁকুড়া জেলাশাসকের কাছে লিখিত ভাবে এই অভিযোগ জানিয়েছেন ওই সংগঠনের কর্মকর্তারা। তাঁদের অভিযোগ, সরকারি সব দফতরের নির্মাণ বা মেরামতির কাজে তাঁদের তৈরি ইট ব্যবহারের জন্য জেলাশাসক লিখিত ভাবে নির্দেশ জারি করেছেন। তারপরেও জেলার বহু ব্লকের বিভিন্ন দফতরের নির্মাণ কাজে এই ইট নেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে তাঁরা চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে বসেছেন। জেলাশাসক বিজয় ভারতীর আশ্বাস, “সরকারি বিভিন্ন দফতরে ওই ইট যাতে আরও বেশি ব্যবহার করা হয় তার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বাঁকুড়া সদর, মেজিয়া, ছাতনা, সোনামুখী, পাত্রসায়র, বিষ্ণুপুর-সহ কয়েকটি ব্লকে বর্তমানে ফ্লাই অ্যাশের ইট তৈরির ১৮টি কারখানা চালু রয়েছে। এ ছাড়াও জেলায় আরও কয়েকটি কারখানা শীঘ্রই চালু হতে চলেছে। প্রতিটি কারখানা থেকে প্রতি মাসে ৩ থেকে ৫ লক্ষ ইট উৎপাদন হয়। পোড়া মাটির ইটের তুলনায় বাজারে এই ইটের দাম কিছুটা কম হলেও সাধারণ গৃহস্থের কাছে এই ইটের চাহিদা তুলনামূলক ভাবে এখনও সে ভাবে বাড়েনি। বাজার ধরতে তাই ব্যবসায়ীরা এখন সরকারি প্রকল্পের মুখাপেক্ষী হয়ে রয়েছেন।
বাঁকুড়া জেলা ফ্লাই অ্যাশ ব্রিকস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম কর্মকর্তা বিমল ঘর বলেন, “জেলার সব দফতরের নির্মাণ কাজে ফ্লাই অ্যাশের ইট ব্যবহার করার জন্য গত ২৮ জানুয়ারি বাঁকুড়ার জেলাশাসক একটি লিখিত নির্দেশ দিয়েছেন। তারপর কয়েকটি ব্লকে হাতেগোনা কিছু কাজে শুধু এই ইট নেওয়া হয়েছে। তাও সামান্য পরিমাণে। বহু সরকারি নির্মাণ কাজ হলেও আমাদের ইট সে ভাবে কেনা হচ্ছে না।” তাঁর দাবি, সরকারি প্রকল্পে ইট না নেওয়ায় প্রতিটি কারখানায় ব্যাপক পরিমাণে ইট মজুত থাকছে। ইট বিক্রি না হওয়ায় উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। এর ফলে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সকলেই এখন চরম আর্থিক সমস্যায় পড়ে গিয়েছেন।
পাত্রসায়রের একটি ফ্লাই অ্যাশ ইট কারখানার মালিক শেখ মণিরুল ইসলাম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী গ্রাম উদ্যোগ প্রকল্পে খাদি বোর্ডের মাধ্যমে স্থানীয় ব্যাঙ্ক থেকে মোটা টাকা ঋণ নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করেছি। সরকারি প্রকল্পে ইট নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। পাত্রসায়রের বিডিও কয়েকটি প্রকল্পে কিছু ইট নিয়েছেন। কিন্তু সরকারের অন্য দফতরের নির্মাণ কাজে এই ইট নেওয়া হয়নি।” তিনি জানান, বর্তমানে তাঁর কারখানায় প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার ইট তৈরি হচ্ছে। কিন্তু বিক্রি সে ভাবে না হওয়ায় এখন প্রায় পাঁচ লক্ষ ইট তাঁর কারখানায় মজুত হয়ে রয়েছে। অন্য দিকে বিক্রি না হওয়ায় ঋণ পরিশোধও করতে পারছেন না। অথচ খাদি বোর্ড এবং ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পরিশোধের জন্য তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।
পাত্রসায়রের বিডিও অপূর্বকুমার বিশ্বাস বলেন, “পরিমাণে কম হলেও কিছু কাজে আমরা ওই ইট কিনে ব্যবহার করেছি। সরকারি গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে, সীমানা প্রাচীর দেওয়ার কাজে ওই ইট নেওয়া হয়েছে।”
বাঁকুড়ার জেলাশাসকও সরকারি সব প্রকল্পে এই ইট যে ব্যবহার করা হচ্ছে না, তা মেনে নিয়েছেন। জেলাশাসক বলেন, “ফ্লাই অ্যাশ ইট নির্মাণকারী একটি ব্যবসায়ী সংগঠন বিষয়টি নিয়ে কিছু দাবি জানিয়েছিল। এ ব্যাপারে আমি সব দফতরকেই তাদের নির্মাণ কাজে কী ভাবে ওই ইট নেওয়া যায় তার জন্য আগেই নির্দেশ দিয়েছি।” তিনি জানান, কিছু প্রকল্পে ওই ইট নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। গীতাঞ্জলি-সহ সরকারের গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে ওই ইট যাতে বেশি করে ব্যবহার করা যায় তার জন্য ব্লক আধিকারিকদের তিনি জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy