মায়ের আদলে ছেলের মূর্তি। বাঁকুড়ার বেলগড়ায়। —নিজস্ব চিত্র
কখন তিনি মর্ত্যে আসতেন, কখন ফিরে যেতেন কয়েক বছর আগেও তা কার্যত টেরই পেতেন না জেলাবাসী। দুর্গা, মনসা, সরস্বতীর খাসতালুকে কার্যত জমিই ছিল না তাঁর। কিন্তু, বিগত কয়েক বছরে ছবিটা পুরোপুরি পালটে গিয়েছে। বাঁকুড়াতেও এখন জাঁকিয়ে বসেছেন সিদ্ধিদাতা গণেশ!
আগে কতগুলো গণেশ পুজো হতো বাঁকুড়া শহরে? প্রশ্নটা শুনে মাথা চুলকেও উত্তর দিতে পারছেন না বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ কর্তারা। “তবে এ বছর মোট ছ’টি পুজো কমিটি লিখিত ভাবে গণেশ পুজোর অনুমতি নিয়ে গিয়েছে। অলিখিত ভাবে আরও অন্তত ১০-১৫টা পুজো হবে’বলছেন এক পুলিশ অফিসার। শুধু শহরেই নয়, বাঁকুড়ার গ্রামাঞ্চলেও গণেশ পুজোর সংখ্যা নেহাত কম নয়। এত দিন দুর্গাপুজো ও হাতে গোনা কিছু সরস্বতী পুজোতেই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পুজো উদ্বোধন করতে এ দিক ও দিক ছুটতে দেখা যেত। এখন গণেশ পুজোতেও শুরু হয়েছে সেই রীতি। যেমন, বাঁকুড়ার তৃণমূল সাংসদ মুনমুন সেন শুক্রবার সকালেই ছাতনায় গিয়েছিলেন গণেশ পুজোর উদ্বোধন করতে।
‘ছাতনা বাজার কমিটির’ এই পুজোটি প্রায় ১২ বছর ধরে বন্ধ ছিল। এ বছর থেকে ফের তা চালু করা হল। ওই পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য স্বরাজ মিশ্র বলেন, “বছর দুয়েক ধরে গোটা রাজ্যেই গণেশ পুজো ধুমধাম করে হচ্ছে। তাই আমরা ফের আমাদের পুজোটি চালু করার সিদ্ধান্ত নিলাম। উদ্বোধনে সাংসদকে পেয়ে আমাদের খুব ভাল লাগছে।” বাঁকুড়া শহরের নুনগোলারোডেও ‘নবদিশা গণেশ চতুর্থী’ নামে পুজো কমিটি গড়ে জাঁকিয়ে গণেশ পুজোর আয়োজন করেছেন স্থানীয় যুবকেরা। এটি এই পুজোর তৃতীয় বর্ষ। পুজো কমিটির সম্পাদক জগন্নাথ দে বলেন, “এমনিতেই ভাদ্র মাসে কোনও পুজো অনুষ্ঠান না থাকায় সবাই মিইয়ে পড়ত। কয়েক বছর ধরে গোটা রাজ্যেই গণেশ পুজো হচ্ছে এই মাসে। তাই আমরাও শুরু করেছি।” এই পুজোকে কেন্দ্র করে সেজে উঠেছে নুনগোলারোড এলাকা। সুদৃশ্য প্যান্ডেল ও ছিমছাম আলোয় বেশ জমাটি পরিবেশেই হচ্ছে পুজো। একই ভাবে গণেশ পুজো উপলক্ষে সেজেছে শহরের চকবাজার, লালবাজার, পাটপুর, আশ্রমপাড়া, বিডিআর কলোনি, শ্যামদাসপুরের মতো এলাকাগুলি। বাঁকুড়া শহরের বেলগড়া এলাকার টাইগার ক্লাবের গণেশ পুজো প্রায় ১১ বছরের পুরনো। এই ক্লাবের অন্যতম সদস্য সন্দীপ রামের কথায়, “বছর তিনেক আগেও তেমন ভাবে গণেশ পুজোর চল ছিল না বাঁকুড়ায়। লোকজনের মধ্যে কোনও মাতামাতিও ছিল না। ইদানীং শহরের অলিগলিতেও ছোট-মাঝারি-বড় মাপের গণেশ পুজো দেখা যাচ্ছে। শহর জুড়েই একটা পুজো পুজো রব।” রাতে শহরের আকাশে গণেশ পুজো উপলক্ষে দেখা গিয়েছে আতসবাজিও।
যাই হোক, গণেশ পুজোর এই বাড়বাড়ন্ত কিন্তু হাসি ফুটিয়েছে মৃৎশিল্পীদের মুখে। শহরের পুরনো মৃৎশিল্পী শ্যামসুন্দর চন্দ জানান, ভাদ্র মাসে কোনও উৎসব না থাকায় মাছি তাড়াতে হত তাঁদের। এই সময়টায় বিশ্বকর্মা মূর্তি গড়ার কাজও শুরু হয়ে যেত। তবে গত কয়েক বছর ধরে গণেশের মূর্তি গড়ার বায়না মিলতে শুরু করায় কিছুটা হলেও বাড়তি রোজগারের একটা রাস্তা খুলে গিয়েছে তাঁদের কাছে। তাঁর কথায়, “চলতি বছরই সাতটি বড় মূর্তি গড়ার বরাত পেয়েছিলাম আমি। ছোট ছোট মূর্তি তো অনেক বিকিয়েছে।”
মুম্বইয়ের একান্ত আপন উৎসবকে এ ভাবেই ধীরে ধীরে আপন করে নিচ্ছে বাঁকুড়াও। ‘গণপতি বাপ্পা’-র মধ্যে দিয়েই আগামী দিনে আরও বেশি করে করে সিদ্ধিলাভের স্বপ্ন দেখছেন বহু মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy