Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সালিশির জেরে গ্রামছাড়া বধূ, অধরা অভিযুক্তেরা

গ্রামেরই দুই যুবকের বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ জানাতে চেয়েছিলেন এক আদিবাসী বধূ। অভিযোগ, তার পরেই সালিশি বসিয়ে ‘চরিত্রে দোষ’ রয়েছে জানিয়ে উল্টে ওই বধূকেই গ্রামছাড়া করা হয়। এমনকী, তাঁর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও চাওয়া হয়। দুবরাজপুর থানার পদুমা পঞ্চায়েত এলাকার একটি আদিবাসী গ্রামের ওই ঘটনায় নির্যাতিতা এই মর্মে লিখিত অভিযোগ জানানোর ২৪ ঘণ্টা পরেও পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে পারেনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪৬
Share: Save:

গ্রামেরই দুই যুবকের বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ জানাতে চেয়েছিলেন এক আদিবাসী বধূ। অভিযোগ, তার পরেই সালিশি বসিয়ে ‘চরিত্রে দোষ’ রয়েছে জানিয়ে উল্টে ওই বধূকেই গ্রামছাড়া করা হয়। এমনকী, তাঁর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও চাওয়া হয়। দুবরাজপুর থানার পদুমা পঞ্চায়েত এলাকার একটি আদিবাসী গ্রামের ওই ঘটনায় নির্যাতিতা এই মর্মে লিখিত অভিযোগ জানানোর ২৪ ঘণ্টা পরেও পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে পারেনি। এমনকী, বধূকে নিজের গ্রামে ফেরাতেও কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার পুলিশ অবশ্য বধূকে দুবরাজপুর আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দেওয়াতে নিয়ে এসেছিল। তারপরে কড়া পাহারায় তাঁকে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে এসেছে।

ঘটনায় বীরভূমের এসপি অলোক রাজোরিয়ার প্রতিক্রিয়া, “অভিযোগ পেয়েই বধূর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়েছে। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। তবে, বধূকে গ্রামে ফেরানো নিয়ে এখনই কিছু ভাবা হচ্ছে না।”

স্থানীয় সূত্রের খবর, স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বছর খানেক ধরে বাপের বাড়িতেই ছিলেন বছর চব্বিশের ওই বধূ। শুক্রবার রাতে দু’বার সেখানেই চড়াও হয়ে গ্রামের দুই যুবক ভবানী সরেন ও রূপু বেশরা তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। পরের দিনই তিনি থানায় অভিযোগ জানাবেন বলে মনস্থির করেন। কিন্তু তা জানাজানি হতেই নির্যাতিতার উপরে নানা দিক থেকে চাপ আসতে শুরু করে বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় পরের দিন (রবিবার) সকালেই মাঝি-হাড়াম (মোড়ল) সালিশি সভা ডাকেন। বধূর অভিযোগ, “সালিশিতে আমাকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ওরা জানায়, আমার নাকি চরিত্র খারাপ। তাই আমাকে গ্রামে রাখা যাবে না। থাকতে গেলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।” অভিযুক্ত দুই যুবক ও গ্রামের মাতব্বরদের হুমকির মুখে রবিবারই তাঁকে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে আসতে হয় বলে ওই বধূ জানান। সে দিনই তিনি অন্যত্র এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পর দিন থানায় যান।

মঙ্গলবার সকালে ওই আদিবাসী গ্রামে গিয়ে দেখা গেল গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দাই কার্যত নির্যাতিতার বিপক্ষে। তাঁদের দাবি, ওই বধূর সঙ্গে ধর্ষণের চেষ্টার কোনও ঘটনাই ঘটেনি। তবে, ওই ঘটনায় গ্রামে সালিশ সভা বসার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন গ্রামের মাঝি-হাড়াম হরমা সরেন। তাঁর দাবি, “শুক্রবার রাতে কিছুই হয়নি। আসলে ওই মহিলারই স্বভাব ভাল নয়। তাঁর জন্য গ্রামের বদনাম হচ্ছে। তাই তাঁকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। কোনও জরিমানা করা হয়নি।” যদিও ওই বধূরই এক বৌদি এবং গ্রামেরই একাংশ শুক্রবার রাতে তাঁর ঘরে কয়েক জন যুবকের চড়াও হওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। নির্যাতিতা বলছেন, “অভিযুক্তেরা সাজা না পাওয়া অবধি লড়ে যাব। এর শেষ দেখে ছাড়ব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

settelement meeting dubrajpur poduma panchyat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE