আয়োজন: সেজে উঠছে তারাপুর ঝিল। তৈরি হচ্ছে বিনোদন পার্ক।
টলটল করছে ঝিল। সেই ঝিলের কাছ দিয়ে কু ঝিক ঝিক করে ছুটে যাবে টয় ট্রেন। ছোটদের আনন্দ দিতে থাকছে বহু রকমের রাইড। চাইলে বড়রা পেন্ডুলামে চড়ে বন বন করে ঘুরতেও পারেন। এমনই বিনোদনের নানা আয়োজন নিয়ে খুলতে চলেছে মেজিয়ার তারাপুর ঝিলের ‘সুচিত্রা বিনোদন পার্ক’।
বাঁকুড়া জেলায় পর্যটন কেন্দ্রের কোনও অভাব নেই। তবে একটু বিনোদনের জন্য পার্কের খোঁজ করতে গেলে এত দিন জেলা ছেড়ে ছুটতে হতো দুর্গাপুরে। এ নিয়ে জেলাবাসীর আক্ষেপ ছিল দীর্ঘদিনের। এ বার সেই দুঃখ ঘুচতে চলেছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “বেড়াতে আসা বা পিকনিক করতে আসাই শুধু নয়, মানুষ যাতে ছুটি নিয়ে এসে এখানে থাকতেও পারেন, সে ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে।’’
মেজিয়ার তারাপুরের ধু ধু পতিত জমি এখন বদলে গিয়েছে বিরাট ঝিলে। সেই ঝিলেরই পাড় সেজে উঠছে সবুজ গাছে আর ছোলদের আনন্দ দেওয়ার নানা সরঞ্জামে। সোমবারই সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হতে চলেছে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা মেজিয়ার তারাপুর ঝিল। প্রায় তিনশো বিঘা এলাকা জুড়ে গড়ে তোলা বিশাল ঝিলের নিরিবিলি পরিবেশের সামনে বসে এক দিকে যেমন একান্তে সময় কাটানো যাবে, তেমনই মনোরঞ্জনের জন্যও থাকছে হরেক আয়োজন।
ঝিল ও পার্ক পুরোদমে চালু করার আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে শুক্রবার তারাপুর ঝিল পরিদর্শন করলেন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী, জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু-সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। অরূপবাবু বলেন, “ছোট থেকে বড় সকলেরই মন কাড়বে এই ঝিল ও পার্ক। সময় কাটাতে আর জেলার বাইরে ছুটতে হবে না বাঁকুড়ার মানুষকে।” জেলাশাসক বলেন, “সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গড়া হচ্ছে প্রকল্পটি।’’
তবে এখনও পার্কের কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। এ দিনও এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, জোরকদমে কাজ চলছে। জেলাশাসকও বলেন, ‘‘কাজ এখনও চলছে। ঝিলটির উন্নয়নে আরও নানা পরিকল্পনা রয়েছে।”
ঝিলের পাড় দিয়ে ছুটবে এই টয়ট্রেন। নিজস্ব চিত্র
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে জেলা সফরে এসে বেলিয়াতোড়ের জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেজিয়ার তারাপুর ঝিল প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন। এরপরেই তারাপুরে সরকারি জমি চিহ্নিত করে ঝিল খোঁড়ার কাজ শুরু হয়।
এই কাজে জেলা পরিষদ, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ, জলসম্পদ উন্নয়ন দফতর, সাংসদ তহবিল-সহ বিভিন্ন দফতর থেকে প্রায় ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি একটি বেসরকারি সংস্থা যৌথ ভাবে এগিয়ে এসে পার্ক গড়ে তোলে।
ঘটনা হল, তারাপুর ঝিলটি থেকে রানিগঞ্জের দূরত্ব দশ কিলোমিটারের মধ্যেই। তাই বাঁকুড়ার জেলার মানুষজনের পাশাপাশি রানিগঞ্জ থেকেও অনেকে এখানে বেড়াতে আসবেন বলে আশাবাদী প্রশাসনের কর্তারা। ইতিমধ্যেই ট্রেনের কামরার ধাঁচে ঝিল চত্বরে গড়ে তোলা হচ্ছে কটেজ। এখনও পর্যন্ত তিনটি কটেজ গড়া হয়েছে। সেখানে পাঁচটি পরিবার থাকতে পারবেন। পার্কের সামনেই তৈরি করা হয়েছে রেস্তোরাঁও।
এলাকাটিকে গ্রিন জোন হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়েও প্রশাসন চিন্তাভাবনা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক। সেই জন্য প্রথম থেকেই এই এলাকাকে প্লাস্টিক ও থার্মোকল মুক্ত হিসেবেও ঘোষণা করছে প্রশাসন। জেলাশাসক বলেন, “জেলার বিভিন্ন পর্যটনস্থানগুলিতে আমরা প্লাস্টিক ও থার্মোকলের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছি। এখানেও তাই হবে। আমরা নিশ্চিত আগামী দিনে এই পার্ককে কেন্দ্র করে এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নও হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy