Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ছাপ্পার নালিশ তুলে পুলিশের গাড়িতে ইট

ভোট নিয়ে অসন্তোষে মঙ্গলবার সকালে খাতড়ার সুপুরে অবরোধে পুলিশের গাড়ি এসে পড়ায় এমনই কাণ্ড ঘটে গেল। পরে র‌্যাফ নিয়ে বিরাট পুলিশ বাহিনী গিয়ে লাঠিচালিয়ে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়।

ক্ষোভ: খাতড়ার সুপুরে পুলিশের গাড়িতে চড়াও জনতা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

ক্ষোভ: খাতড়ার সুপুরে পুলিশের গাড়িতে চড়াও জনতা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খাতড়া শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৮ ০১:৪৯
Share: Save:

বুথের ভিতরে টেবিলে বন্দুক রেখে যখন ছাপ্পা চলছিল, তখন কোথায় ছিলেন?— ভোটের ‘ডিউটি’ সেরা ফেরার পথে পুলিশের গাড়ি আটকে এমনই প্রশ্ন ছুড়ে জনতার ক্ষোভ আছড়ে পড়েছিল। বেগতিক বুঝেই গাড়ির চালক পিছু হটার চেষ্টা করেন। সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ঘুষি দাড়ির উপরে দুমদাম পড়তে শুরু করে। গাড়ি লক্ষ্য করে ছুটে আসে ইটের টুকরো। ভেঙে যায় পুলিশের গাড়ির কাচ। কোনওরকমে হোমগার্ডদের নিয়ে গাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান চালক।

ভোট নিয়ে অসন্তোষে মঙ্গলবার সকালে খাতড়ার সুপুরে অবরোধে পুলিশের গাড়ি এসে পড়ায় এমনই কাণ্ড ঘটে গেল। পরে র‌্যাফ নিয়ে বিরাট পুলিশ বাহিনী গিয়ে লাঠিচালিয়ে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়। পরে বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “পুলিশের গাড়ির উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।”

বস্তুত, এই জেলার একমাত্র খাতড়া মহকুমাতেই বিরোধীরা শাসকদলের সঙ্গে কার্যত টক্কর দিয়ে প্রার্থী দিয়েছিলেন। যদিও সেই খাতড়া মহকুমার রাইপুরের চাকার বুথে পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র ছিনিয়ে ভোটকর্মীদের মারধর করে তিনটি ব্যালট বক্স তুলে নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। আগ্নেয়াস্ত্রটি অবশ্য পরে পুলিশ উদ্ধার করে।

তবে রাইপুরের পুন্যাশা গ্রামের বুথ থেকে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকা থেকেই শাসকদল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে বুথ কব্জায় এনে ভোট করানোর অভিযোগ ওঠে। বিরোধীদের অভিযোগ, সেই তালিকায় ছিল সুপুরও। বাসিন্দাদের দাবি, এই এলাকার মোট ১৪টি বুথের মধ্যে ১০টিতেই ছাপ্পা ভোট হয়েছে। যদিও শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্বের দাবি, সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ।

ভোট দিতে না পারার অভিযোগ তুলে খাতড়া-বাঁকুড়া রাস্তায়, সুপুর মোড়ে এলাকার কয়েকশো মানুষ পথে বসে পড়েন। সকাল ৯টা থেকে ঘণ্টাখানেক অবরোধ চলে। সেই সময় খাতড়া এলাকায় ভোটের ‘ডিউটি’ সেরে গাড়ি নিয়ে বাঁকুড়া পুলিশ লাইনে ফিরে যাচ্ছিলেন হোমগার্ডেরা। অবরোধে আটকে পড়ে সেই গাড়িটি। পুলিশের অভিযোগ, গাড়িটিকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো শুরু হয়। গাড়িটি খাতড়ায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে দেখে, অবরোধকারীরা ইট ছোড়ে। গাড়ির কাচ ভাঙে।

অবরোধকারীদের অভিযোগ, সোমবার ভোটের দিন সুপুর এলাকার বেশির ভাগ বুথেই তৃণমূলের বহিরাগত দুষ্কৃতীরা ছাপ্পা ভোট করিয়েছে। বুথের ভিতরে ভোটারদের কাছ থেকে কাগজপত্র নিয়ে তাঁদের আঙুলে কালি লাগিয়ে দিয়ে ফিরিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। অবরোধকারীরা বলেন, “বুথের টেবিলে বন্দুক নামিয়ে রেখে এই কাজ করছিল দুষ্কৃতীরা। আমরা তখন বুথ রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীদের ঘটনাটি জানাই। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি।”

সুপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (১৩ নম্বর বুথ) পুনর্নির্বাচন হতে চলেছে আজ, বুধবার। ওই বুথে এক দল লোক ঢুকে ব্যালট বাক্স ভাঙচুর করে ব্যালট পেপার নষ্ট করে বলে অভিযোগ। অবরোধকারীদের দাবি, এই অবরোধ কোনও রাজনৈতিক দলের নয়। সুপুরের আপামর শান্তিপ্রিয় মানুষের। কারণ এখানে বুথ দখল, ছাপ্পা ভোটের সংস্কৃতি কোনও দিনই ছিল না। তাই এ দিনের অবরোধে এলাকার বিজেপি, সিপিএম এবং বিক্ষুদ্ধ তৃণমূল কর্মী-সহ সাধারণ গ্রামবাসীরা ছিলেন।

জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খানের অবশ্য অভিযোগ, “সিপিএম ও বিজেপি একত্রিত ভাবে জেলার বেশ কয়েকটি বুথে হামলা চালিয়েছে। সুপুরের ওই বুথটিতেও ওরাই হামলা চালায়।” আর বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্রের দাবি, “তৃণমূলের লোকজন সাধারণ ভোটারদের মারধর করে বুথ থেকে বের করে দিয়ে ছাপ্পা দিচ্ছিল সুপুরের ওই বুথে। বিজেপির পক্ষে ভোট পড়ছে ভয় পেয়ে ওরাই ব্যালট বাক্স নয়ছয় করে।”

পুলিশের দাবি, এ দিন পুলিশের গাড়িতে যারা হামলা চালিয়েছে, তারাই ওই বুথে হামলার ঘটনায় যুক্ত। অবরোধকারীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিবেকানন্দবাবুর দাবি “গ্রামবাসীরা এ দিন পথে নেমে তৃণমূলের গুন্ডামির প্রতিবাদ করাতেই ওঁদের মিথ্যা অভিযোগে পুলিশ ফাঁসাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Panchayat Election 2018 Police van
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE