প্রতীকী ছবি।
কোনও দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় পুরুলিয়া জেলার আটটি পঞ্চায়েত সমিতির ভাগ্য ঝুলে রয়েছে। জয়পুর, ঝালদা ১, ঝালদা ২, বাঘমুণ্ডি, বরাবাজার, আড়শা, পুরুলিয়া ২ ও সাঁতুড়ি পঞ্চায়েত সমিতিতে শেষ পর্যন্ত কোন দল, কী সমীকরণে বোর্ড গঠন করে, সে দিকেই অনেকের নজর।
২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলার ২০টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে তৃণমূল একক ভাবে ১৭টির দখল পেয়েছিল। পরে বাঘমুণ্ডি পঞ্চায়েত সমিতি, রঘুনাথপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের হাতে আসে। জেলা প্রশাসন সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান, মানবাজার ১, মানবাজার ২, পুঞ্চা, হুড়া, পুরুলিয়া ১, নিতুড়িয়া ও কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের দখল গিয়েছে। এ বারই জেলায় খাতা খুলেছে বিজেপি। একক ক্ষমতায় বিজেপি বলরামপুর, রঘুনাথপুর ১, রঘুনাথপুর ২ ও পাড়া পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছে।
জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতিতে কোনও দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ২১টি আসনের মধ্যে তৃণমুল ও বিজেপি ৯টি করে এবং কংগ্রেস, সিপিএম ও ফব একটি করে আসনে জিতেছে।
ঝালদা ১ পঞ্চায়েত সমিতির মোট আসন ২২টি। তৃণমূল ৫, বিজেপি ৭, কংগ্রেস ৮ ও ২টি আসন সিপিএমের দখলে গিয়েছে। ঝালদা ২ পঞ্চায়েত সমিতির আসন সংখ্যা ২৪টি। এখানে কংগ্রেস ১১টি, তৃণমূল ৫টি, সিপিএম ৪টি, বিজেপি ৩টি ও ফব ১টি আসন পেয়েছে।
বাঘমুণ্ডি পঞ্চায়েত সমিতির আসন সংখ্যা ২১। এই পঞ্চায়েত সমিতিতে এ বার বিজেপি ৯টি আসন পেয়েছে। তৃণমূল ৬, কংগ্রেস ৫ ও ফব ১টি আসন পেয়েছে। এই সমিতিতে বোর্ড গঠন করার মতো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা কারও নেই।
বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতিতে ২৮টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে তৃণমূল একক ভাবে ১৪টি আসন পেয়েছে। অন্যদিকে বিজেপি ১৩টি ও কংগ্রেস ১টি আসন পেয়েছে। আড়শা এক সময় ফব-র ঘাঁটি বলে পরিচিত ছিল। এই পঞ্চায়েত সমিতিতে ২৩টি আসন রয়েছে। তার মধ্যে তৃণমূল একক ভাবে ১০টি আসন পেয়েছে। অন্যদিকে, বিজেপি ৯টি এবং কংগ্রেস ২টি এবং ফব ১টি ও ১টি নির্দল পেয়েছে। পুরুলিয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতিতে ২৬টি আসন রয়েছে। তৃণমূল ১২, বিজেপি ১০, সিপিএম ২ টি, কংগ্রেস ও নির্দল ১টি করে আসন পেয়েছে। সাঁতুড়ি পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৩টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ও বিজেপি ৬টি করে আসন পেয়েছে। ১টি আসন সিপিএম পেয়েছে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘যে পঞ্চায়েত সমিতিগুলিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, সেখানে বোর্ড গঠন করতে সমস্যা হবে না। কিন্তু যেখানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা কারও নেই, সেখানে কে কোন দলের সঙ্গে গাঁটছাড়া বাঁধবে, এখনই বলা যাচ্ছে না।’’
রাজনীতি ভাষ্যকারেরা বলছেন, ‘‘বিজেপি ও কংগ্রেস এবং তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যে শীর্ষস্তরে আদায়-কাঁচকলার সম্পর্ক। ফলে ওই আট পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গড়তে দুই বড় দলের নেতৃত্ব এখন ধর্ম সঙ্কটে পড়ে গিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত বোর্ড কী ভাবে গঠন হয়, তাই আগামী ক’দিন সে দিকেই নজর থাকবে সবার।’’
রাজ্যে পালাবদলের পরেও ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে রঘুনাথপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতি সিপিএম দখলে রেখেছিল। পরে অবশ্য এখানেও ক্ষমতা হারাতে হয়। গ্রাম পঞ্চায়েতেও রক্তক্ষরণ অব্যাহত। দলের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, ‘‘ক্ষমতা এক জায়গায় স্থির থাকে না। মানুষ পাশে থাকলে এক সময় ক্ষমতারও পট পরিবর্তন হয়।’’
আগের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেস দু’টি সমিতি দখল করেছিল। এই নির্বাচনে একক ভাবে কোথাও সংখ্যাগরিষ্ঠতা না মেলায় কংগ্রেসের হাতে পঞ্চায়েত সমিতির দখল থাকল না। তবে বাঘমুণ্ডির পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক তথা প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্য সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আমরা ঝালদা ২ পঞ্চায়েত সমিতিতে বোর্ড গঠন করব। এ ছাড়া জেলার আরও কয়েকটি পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনে আমাদের সদস্যদের গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা থাকবে।’’
২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি সারা জেলায় পঞ্চায়েতে মাত্র ৮টি আসন পেয়েছিল। এ বার আসন সংখ্যার হিসাবে পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের পরেই ১৪২টি আসন জিতে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘তৃণমূলের সন্ত্রাস না হলে জেলায় আরও কয়েকটি পঞ্চায়েত সমিতি আমাদের দখলে আসত।’’
অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক নবেন্দু মাহালির প্রশ্ন, ‘‘কোথায় সন্ত্রাস? পুরুলিয়ায় সব দল নিরঙ্কুশ ভাবে মনোনয়ন দিয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘যে পঞ্চায়েত সমিতিগুলি ত্রিশঙ্কু হয়ে আছে, ইতিমধ্যেই সেখানকার বিভিন্ন দলের জেতা প্রার্থীরা তৃণমূলে যোগ দিতে চেয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। দেখবেন, ওই সমিতিগুলিতে আমাদেরই বোর্ড গঠন হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy