Advertisement
০৫ মে ২০২৪
মুকুটমণিপুর উন্নয়ন পর্ষদের সিদ্ধান্ত

আলো জ্বালাবেন হোটেল মালিকেরা

আলোয় ঝলমল করবে রাস্তা আর পায়ে পায়ে থাকবে বিভিন্ন হোটেলের নানা সুবিধার হাতছানি। এই দু’টি ব্যাপারকে এক সুতোয় বেঁধে ফেলে পর্যটনকেন্দ্রের ভোল বদলাতে চাইছে মুকুটমণিপুর ডেভলপমেন্ট অথরিটি। ঠিক হয়েছে, হোটেল মালিকেরা ভাগাভাগি করে পথবাতিগুলির দায়িত্ব নেবেন।

মনোহর: হেমন্তে মুকুটমণিপুর জলাধার। এর টানেই ভিড় জমান পর্যটকেরা। নিজস্ব চিত্র

মনোহর: হেমন্তে মুকুটমণিপুর জলাধার। এর টানেই ভিড় জমান পর্যটকেরা। নিজস্ব চিত্র

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
মুকুটমণিপুর শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩১
Share: Save:

আলোয় ঝলমল করবে রাস্তা আর পায়ে পায়ে থাকবে বিভিন্ন হোটেলের নানা সুবিধার হাতছানি। এই দু’টি ব্যাপারকে এক সুতোয় বেঁধে ফেলে পর্যটনকেন্দ্রের ভোল বদলাতে চাইছে মুকুটমণিপুর ডেভলপমেন্ট অথরিটি। ঠিক হয়েছে, হোটেল মালিকেরা ভাগাভাগি করে পথবাতিগুলির দায়িত্ব নেবেন। বদলে পথবাতিতে হোটেলের বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন তাঁরা।

২০১৬ সালের পর্যটন মরসুম থেকে খাতড়া মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে মুকুটমণিপুরকে ‘প্লাস্টিক ফ্রি জোন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে লাগাম টানা গিয়েছে ধুমপান, মদ্যপান এবং পিকনিক করতে আসা দলের সাউন্ডবক্সে। বছর শেষে জেলা সফরে এসে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই পর্যটনকেন্দ্রের সার্বিক উন্নতির জন্য জেলাশাসকের নেতৃত্বে মুকুটমণিপুর ডেভলপমেন্ট অথরিটি গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

তার পরে উন্নয়নের বিভিন্ন কাজে গতি এসেছে বলে এলাকার ব্যবসায়ীদের দাবি। ইতিমধ্যেই জলাধার সংলগ্ন লোহাডিহিতে পর্যটকদের থাকার জন্য কুড়িটি কটেজ গড়ে তোলা হচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের বরাদ্দ করা প্রায় এক কোটি টাকা দিয়ে তিন দফায় পর্যটনস্থলের চারপাশে পথবাতি বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রথম ও দ্বিতীয় দফার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।

পথবাতি তো হল। এ বারে তার বিল মেটাবে কে? হোটেল মালিকেরাই। মুকুটমণিপুর ডেভেলপমেন্ট অথারিটির উদ্যোগে ঠিক হয়েছে, এলাকার হোটেলগুলির মালিকেরা ভাগাভাগি করে সমস্ত পথবাতির দায়িত্ব নেবেন। বিল মেটাবেন তাঁরা। বাতি খারাপ হলে বদলেও দেবেন নিজের খরচায়। বিনিময়ে নিয়ম মেনে পথবাতিগুলিতে নিজেদের হোটেলের বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন। মহকুমা শাসক (খাতড়া) তনয়দেব সরকার বলেন, “মুকুটমণিপুর ডেভেলপমেন্ট অথারিটিকে পরিকাঠামো গড়ার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু পরিচালনার জন্য বরাদ্দ থাকে না। হোটেল মালিকেরা এগিয়ে আসায় সুবিধা হল।”

মুকুটমণিপুর হোটেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাপসকুমার মণ্ডল ও সম্পাদক বিপুল সাহু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে মুকুটমণিপুর ডেভেলপমেন্ট অথারিটি গড়ে ওঠায় উন্নয়নের কাজে গতি বেড়েছে। আমরা এর মধ্যে সামিল হতে পেরে খুশি।’’

তিনি জানান, এলাকায় ১১টি বেসরকারি হোটেল রয়েছে। সমস্ত হোটেল মালিকই ভাগাভাগি করে পথবাতি দেখভালের দায়িত্ব নিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।

প্রশাসনের একটি সূত্রে দাবি, খান পাঁচেক পথবাতির দায়িত্ব যদি কোনও হোটেল মালিক নেন, তাহলে মাসে গড়ে হাজার টাকা খরচ করলেই হয়ে যাওয়ার কথা। হোটেল মালিকদের একাংশ বলছেন, একেবারে নিয়মকানুন মেনে, ঝক্কি ছাড়া বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য এটা বেশ ভাল একটা সুযোগ।

তবে শুধু আলোতে যে চিঁড়ে ভিজবে না, সেটাও বলছেন হোটেল মালিকেরা। পরিকাঠামো সংক্রান্ত বেশ কিছু অভাব অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছেন তাঁরা। দাবি মূলত তিনটি— বাস, এটিএম আর মোবাইলের নেটওয়ার্ক।

মুকুটমণিপুর হোটেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাপসবাবু বলেন, ‘‘দিনের বেলা কলকাতা থেকে সরাসরি মুকুটমণিপুর আসার কোনও বাসন নেই। ধর্মতলা থেকে একটা বাস ছাড়ে গভীর রাতে। সকাল সকাল পৌঁছে যায়। কিন্তু রাতবিরেতে অনেকেই ওই ঝক্কি নিতে চান না।’’

পর্যটনকেন্দ্রে এখনও কোনও এটিএম নেই। দরকারে উজিয়ে যেতে হয় খাতড়া পর্যন্ত। দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। বেড়াতে এসে অনেকেরই টাকা তোলার দরকার হয়। ফলে এটিএম-এর অভাবটা মস্ত বড় হয়ে দেখা দেয় পর্যটন মরসুমে।

আর সমস্যা ইন্টারনেট না মেলা। মুকুটমণিপুরের দু’টি হোটেল অনলাইনে বুক করা যায়। সেগুলির কর্মীরা জানাচ্ছেন, ইন্টারনেটে বুক করে হোটেলে এসে পর্যটকেরা দেখতে পান, সেখানে ইন্টারনেট চলছে শামুকের গতিতে। মোবাইলের নেটওয়ার্কও তথৈবচ।

তাপসবাবু বলেন, “রাজ্য সরকার পর্যটন শিল্পের বিকাশে উদ্যোগী হয়েছে। সেখানে মুকুটমণিপুর এই তিনটি মূল সমস্যার জন্য অনেকটাই পিছিয়ে পড়ছে। পর্যটকদের সমস্যা মানে তো আখেরে আমাদেরই লোকসান।’’

মহকুমাশাসক (খাতড়া) তথা মুকুটমণিপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির এগ্‌জিকিউটিভ অফিসার তনয়বাবু জানান, জেলার লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের সঙ্গে মুকুটমণিপুরে এটিএম খোলার ব্যাপারে আলোচনা করেছিল প্রশাসন। এটিএম খোলার জায়গায়ও ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনও ব্যাঙ্ক এগিয়ে আসেনি।

মোবাইলের নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রেও তা-ই। ইন্টারনেট পরিষেবার মানোন্নয়নের জন্য বিএসএনএল ও কিছু বেসরকারি সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। মোবাইল সংস্থার কর্তারা মুকুটমণিপুরে গিয়ে সমস্তটা দেখেশুনে যান। কিন্তু ওই অবধিই। কাজ কিছু হয়নি। মহকুমাশাসক জানান, শেষ পর্যন্ত মুকুটমণিপুর এলাকাকে ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে এই ব্যাপারে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। মঞ্জুর হলেই কাজ শুরু হবেয়”

আর কলকাতা থেকে সরাসরি বাসের কী হবে?

তনয়বাবু জানান, জেলা প্রশাসনের তরফে রাজ্য পরিবহণ দফতরের সঙ্গে সরাসরি কলকাতা-মুকুটমণিপুর রুটে বাস চালানোর জন্য আলোচনা করা হয়েছে। দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার থেকেও সরাসরি মুকুটমণিপুরের বাস চালানোর জন্য উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। তবে এ বারের পর্যটন মরসুমের মধ্যে সমস্যাগুলি কতটা মেটে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mukutmanipur Development Board
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE