এই হোর্ডিং টাঙানো হচ্ছে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। নিজস্ব চিত্র
সহকর্মীর নিগ্রহের প্রতিবাদে সরকারি চিকিৎসকেরা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিলেন শুক্রবার। সেই খবর ছড়াতেই নড়াচড়া শুরু হয়ে যায় প্রশাসনের অন্দরে। আসরে নামতে হয় জেলার মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোকে। আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের বোঝাতে হাল ধরেন প্রবীণ চিকিৎসকেরাও। কলকাতাতেও স্বাস্থ্যভবনে শুক্রবার অনেক রাত পর্যন্ত এ নিয়ে চলে আলোচনা।
এ সবের জেরে শনিবারের কর্মবিরতি তাঁরা স্থগিত করলেও আন্দোলন থেকে সরছেন না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। বরাবাজার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক বিপ্লব মণ্ডলকে মারধরে প্রধান অভিযুক্ত স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সহ-সভাপতি প্রতুল মাহাতোকে গ্রেফতার না করা হলে, সোমবার জেলার সমস্ত ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বহির্বিভাগে সকাল ১০টা থেকে এক ঘণ্টা তাঁরা প্রতীকী কর্মবিরতি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন।
চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে সোমবার ‘কালাদিবস’ পালনের ডাক দিয়েছেন সরকারি চিকিৎসকদের বামপন্থী সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’। সংগঠনের তরফে সোমবার প্রতিবাদ জানাতে সারা রাজ্যের চিকিৎসকদের কালো ব্যাজ পরার অনুরোধ জানানো হয়েছে। সে দিন তাঁরা স্বাস্থ্যভবনে স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে স্মারকলিপি দেবেন বলে জানিয়েছেন।
সোমবার রাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যেই মারধরে বিপ্লববাবুর কপাল ফাটে, তিনি হাতে চোট পান বলে অভিযোগ। পরের দিনই তিনি প্রতুলবাবু ও অন্যদের বিরুদ্ধে থানায় খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু গোড়া থেকেই তদন্তে পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠে। জেলার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকেরা অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে দাবি জানান। ঘটনার তিন দিন পরে ওই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতারের দাবি পুলিশ করলেও গুরুতর মামলায় তারা কী ভাবে জামিন পেয়ে গেল, তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। এমনকী ধৃতদের পরিচয়ও গোপন করেছে পুলিশ। বিপ্লববাবুর সহকর্মীদের দাবি, তাতে সন্দেহ বেড়েছে বই কমেনি।
জেলার ২০টি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিএমওএইচ এবং চিকিৎসকেরা ওই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তকে অবিলম্বে গ্রেফতার না করা হলে শনিবার সকাল থেলে জেলাজুড়ে কর্মবিরতি করবেন বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর, প্রশাসন ও পুলিশকে শুক্রবার চিঠি দিয়ে জানান। তাতেই টনক নড়ে। জেলাশাসক জানিয়ে দেন, প্রশাসন তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারে। কিন্তু সরকারি কর্মচারী হওয়ায় তাঁরা পরিষেবা না দিয়ে কর্মবিরতি করতে পারেন না। তাতেও অন্দোলনকারীদের টলানো যায়নি। তাঁরা জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্তের অফিসে বসে থাকেন। অনিলবাবুও জানান, তিনি চিকিৎসকদের পাশেই রয়েছেন। সন্ধ্যায় জেলার মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো ক্ষুব্ধ চিকিৎসকদের সার্কিট হাউসে আলোচনার জন্য ডাকেন।
চিকিৎসকদের দাবি, তাঁরা মন্ত্রীর কাছে সরাসরি জানতে চান, কর্তব্যরত এক চিকিৎসককে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মারধরের পরে কী ভাবে অভিযুক্ত এখনও বাইরে রয়েছে? মন্ত্রী তাঁদের আশ্বাস দেন। কিন্তু, চিকিৎসকদের দাবি, তাঁরা আন্দোলন থেকে সরছেন বলে তখন মন্ত্রীকে কথা দেননি। তাঁরা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিসে আসার পরে রাতে সেখানে আসেন সদর হাসপাতালের কয়েকজন প্রবীণ চিকিৎসক। তাঁরা বোঝান, হঠাৎ করে কর্মবিরতিতে গেলে সাধারণ রোগীরা সমস্যায় পড়বেন। এতে তাঁদের আন্দোলনকে যাঁরা সমর্থন করছেন, সেই সাধারণ মানুষের একাংশও পাশ থেকে সরে যাবেন। কলকাতার স্বাস্থ্যভবন থেকেও পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছিল। সেখান থেকেও বিষয়টি নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে বলে জানানো হয়। এর পরেই শনিবারের কর্মবিরতি স্থগিত করেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা।
শনিবার তাঁরা বলেন, ‘‘সোমবার সকালে জেলার প্রতিটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক ঘণ্টার প্রতীকী কর্মবিরতি পালন ও জেলা সদরে বিক্ষোভ দেখানো হবে। ওই বিক্ষোভে জেলার সমস্ত বিএমওএইচরা উপস্থিত থাকবেন। তবে জরুরি বিভাগের পরিষেবা বন্ধ হবে না।’’
শান্তিরামবাবু বলেন, ‘‘ওঁদের বলি চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা মোটেই কাম্য নয়। নিন্দনীয়। কিন্তু চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি করলে জেলাজুড়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা অচল হয়ে যেত। আমি তাঁদের কাছে কয়েকটা দিন সময় চেয়েছি।’’ দল কী ওই নেতাকে আড়াল করছে? মন্ত্রীর দাবি, ‘‘সে প্রশ্নই নেই। পুলিশ তদন্ত করছে। আমরা তাতে হস্তক্ষেপ করছি না।’’
জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়েরও আশ্বাস, ‘‘পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তদন্তও চলছে। নিয়ম অনুযায়ী, কোনও অভিযোগের ৯০ দিন পর্যন্ত পুলিশ তদন্তের সময় পায়। এ ক্ষেত্রে এখনও সময় বাকি রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy