Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
বিষ্ণুপুরে মহিলাকে পিষে মারল দাঁতাল

বিক্ষোভ রেঞ্জের অফিসারকে ঘিরে

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, খবর পেয়ে আশেপাশের চুয়াশোল, বাগডোবা, তিবঙ্ক, মড়ার, ভিমারডাঙা, মুড়াবাড়ি, বাসুদেবপুর প্রভৃতি গ্রাম থেকে বহু মানুষ এসে পুলিশ এবং বিষ্ণুপুরের রেঞ্জ অফিসার শ্যামসুন্দর করশর্মাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাছেন। চাঁপাদেবীর পরিজনেরা কান্নাকাটি করছিলেন।

শোকার্ত: চাঁপার দেহ পড়ে জঙ্গলে। কান্না বোনের। ছবি: শুভ্র মিত্র

শোকার্ত: চাঁপার দেহ পড়ে জঙ্গলে। কান্না বোনের। ছবি: শুভ্র মিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৭ ০২:২৪
Share: Save:

রেসিডেনশিয়াল এক দাঁতালের আক্রমণে বনকর্মী আহত হওয়ার দু’দিনের মধ্যে ফের সেই বিষ্ণুপুরেই হাতির হানায় মৃত্যু হল এক যুবতীর। সোমবার রাতে বনকর্মী আহত হয়েছিলেন চৌকান বিটের দাগাশোলের জঙ্গলে। বুধবার সকালে বাসুদেবপুর বিটের জঙ্গলে হাতি পিষে দিল ছাতু কুড়োতে যাওয়া এক মহিলাকে। মৃত চাঁপা লোহারের (৩৫) বাড়ি বাসুদেবপুরে।

এর জেরে ক্ষুব্ধ বাসুদেবপুর গ্রামবাসী মৃতদেহ আটকে রেখে বিষ্ণুপুরের রেঞ্জ অফিসার এবং পুলিশ কর্মীদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান ঘণ্টা দুয়েক। বাসিন্দাদের দাবি, পরে তাঁরা মুচলেকা নিয়ে বিক্ষোভ তোলেন। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে পাঠায়। স্থানীয় এবং বন দফতরের অনুমান, বনকর্মীর উপর যে রেসিডেন্সিয়াল হাতি হামলা চালিয়েছিল, সেই হাতিটিই ওই মহিলাকে আক্রমণ করেছে।

বন দফতরের দাবি, মঙ্গলবার রাতে তিনটি কুনকি হাতি নিয়ে স্কোয়াডের ১৫ জন সদস্য এবং বনকর্মীরা রাত-ভোর চেষ্টা করে ওই রেসিডেন্সিয়াল হাতিটিকে দ্বারকেশ্বর নদ পার করে বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগে পাঠানোর চেষ্টা চালান। নদে নামলেও হাতিটি ভোরের দিকে মুখ ঘুরিয়ে লোটিহিড়, বড় গুরামি, চুয়াশোল হয়ে বাসুদেবপুরের জঙ্গলে ফিরে আসে।

এ দিকে ওই সময়েই বাসুদেবপুরের জঙ্গলে দল বেঁধে ছাতু কুড়োতে ঢোকেন চাঁপা লোহার, ছায়া লোহার, ষষ্ঠী লোহার, আঙুর লোহাররা। তাঁরা হাতিটির সামনে পড়তেই চাঁপাদেবীকে শুঁড়ে আছড়ে পা দিয়ে পিষে দেয় দাঁতালটি। সঙ্গীরা ভয়ে চিৎকার জুড়লে হাতিটি পালায়। লোকজন জড়ো হয়ে যায়।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, খবর পেয়ে আশেপাশের চুয়াশোল, বাগডোবা, তিবঙ্ক, মড়ার, ভিমারডাঙা, মুড়াবাড়ি, বাসুদেবপুর প্রভৃতি গ্রাম থেকে বহু মানুষ এসে পুলিশ এবং বিষ্ণুপুরের রেঞ্জ অফিসার শ্যামসুন্দর করশর্মাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাছেন। চাঁপাদেবীর পরিজনেরা কান্নাকাটি করছিলেন। মৃতার বাবা অনিল লোহার বলেন, ‘‘মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম। স্বামী ছেড়ে দেওয়ায় সে আমার কাছেই থাকত। অভাবের জন্যই বনের ছাতু কুড়িয়ে বিষ্ণুপুরের বাজারে বিক্রি করতে যেত।’’

ওই ঘটনার জন্য বনকর্মীদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দারা। মৃতার ভাই ভীম লোহার বলেন, ‘‘জঙ্গলের ছাতু কুড়িয়ে বিক্রি করে কিছু টাকা আসে। কিন্তু এই জঙ্গলে যে হাতি ঢুকেছে তা বনকর্মীরা আগে জানাননি। তাহলে দিদিরা জঙ্গলে ঢুকতো ন।’’ বাসিন্দাদের অভিযোগ, বন দফতরের নজর নেই। হাতি ঠেকানোর জন্য বিদ্যুৎবাহী তারের ব্যাটারি খারাপ হয়ে গিয়েছে। মেরামত হয়নি। তাই প্রাণের ঝঁকি নিয়ে এলাকার ছেলেমেয়েদের পানশিউলি জুনিয়র হাইস্কুলে পড়তে যেতে হয়। রাস্তার দু’দিকের ঝোপ বেড়ে যাওয়ায় দূরের কিছু ঠাহর করা যায় না।

বাসুদেবপুর বন সুরক্ষা কমিটির কার্যকারী কমিটির সদস্য গোরাচাঁদ লোহার, মানিক দুলেরও অভিযোগ, ‘‘বন দফতরের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্যই মেয়েটার প্রাণ গেল। হাতিটা যখন নদ থেকে ফিরে এল, তখন ভোর বেলায় ফরেস্ট মোবাইল ভ্যানের মাইকে গ্রামবাসীকে সতর্ক করা হল না কেন, বুঝতে পারছি না!’’

বিষ্ণুপুরের রেঞ্জ অফিসারের আশ্বাস, ‘‘বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার পথ সাফ করা যায় কি না দেখছি।’’ ডিএফও (বিষ্ণুপুর পাঞ্চেত) নীলরতন পান্ডা দাবি করেছেন, ‘‘১৯ অগস্ট থেকে হাতিটা এখানে রয়েছে। মানুষজনকে তাই নিয়মিত সাবধান করা হয়।’’ তিনি জানান, বিদ্যুৎবাহী তার বন দফতর লাগিয়ে দিলেও তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বন সুরক্ষা কমিটির। তিনি জানান, এখন দাঁতালটি জয়পুর রেঞ্জের কোশির জঙ্গলে রয়েছে। বনকর্মীরা হাতিটির উপরে নজর রাখছেন। মৃতের পরিবারকে নিয়ম মাফিক এখনই ক্ষতিপূরণের আড়াই লক্ষ টাকার মধ্যে ৭৫ শতাংশ দেওয়া হবে।

কিন্তু কবে ওই হাতি যাবে, দুর্ভাবনায় বাসিন্দারা। বাসুদেবপুরের অঞ্জলি লোহার, মিঠু লোহাররা বলেন, ‘‘জঙ্গলের ছাতু বাজারে বিক্রি করে ছেলেমেয়েকে পুজোয় নতুন জামা কিনে দিই। কিন্তু এ বার গণেশ ঠাকুর বোধহয় তা হতে দেবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elephant Woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE